ভিডিও EN
  1. Home/
  2. প্রবাস

‘আমি তালাক দেব না, দেখি ও কী করে’

ওমর ফারুকী শিপন | প্রকাশিত: ০৪:৫৫ পিএম, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২১

আমি বিয়ে করে ফেরার পর নাদিয়ার (বউয়ের নাম) জন্য কতটা উন্মাদ ছিলাম সেটা তো আপনারা জানেন। জীবনে প্রথম কোনো নারীর সংস্পর্শ আমার জীবনটাই পাল্টে গিয়েছিল। তখন আমার অস্তিত্বের সঙ্গে মিশে ছিল বউ। তাকে ছাড়া কিছুই ভাবতে পারতাম না। তখন প্রতিটা শ্বাস-প্রশ্বাসে তারই কথা মনে পড়ত।

রাতে ঠিকমতো ঘুমাতে পারতাম না। খেতে পারতাম না। কি করে আপনাকে বোঝাব সে আমার হৃদয়জুড়ে ছিল। তার প্রতিটা কথা আমার হৃদয়ে প্রতিধ্বনি হতো। মনে হত তারই মাঝে আমি হারিয়ে গেছি। তার জন্ম শুধু আমারই জন্য। মনে হয়েছিল আমি মরতে বসেছি আর আমাকে বাঁচাতে পারে একমাত্র তারই তারই ভালোবাসা।

আমার বাঁচামরা শুধু তারই হাতে। অনেক ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। তার স্পর্শহীন বেঁচে থাকার কোনো মানেই হয় না। এই টাকা-পয়সা দিয়ে আমি কি করব যদি তার ভালোবাসাই না পাই। না খেয়ে তার পাশে থাকব তবুও অর্থের পেছনে ছুটে তার ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হতে চাই না।

চাকরিতে ইস্তফা দিয়ে বাড়ি ফেরার সিদ্ধান্ত নিলাম। আমার ফেরার কথা শুনে ও যে কত খুশি হয়েছিল তা আপনাকে বোঝাতে পারব না। ভালোবাসার টানে তার কাছে ফিরে গেলাম। দিনগুলি মোর ভালোই কাটছিল। কিন্তু আস্তে আস্তে জমানো টাকা ফুরিয়ে যাচ্ছে আর ভালোবাসাও দেখলাম কমে আসছে।

প্রথম প্রথম আমার প্রতি ওর এই অবহেলা টের পেলাম না। যখন টের পেলাম তখন সিদ্ধান্ত নিলাম বসে বসে আর কত খাব এখন কিছু একটা করার দরকার। বাড়ির পাশে মুদির দোকান খুলে বসলাম, সারাদিন দোকানদারি করি আর সন্ধ্যায় বাসায় ফিরি। আমার প্রতি বউয়ের ভালোবাসা প্রদর্শন তার কথাবার্তা আগের মতো না।

কিছু একটা মিসিং মনে হয়। আমি এই সস্তা ভালোবাসা চাই না আমি চাই মনের গভীর থেকে উদঘাটিত ভালোবাসা যা আমাকে স্বর্গ সুখে ভাসাবে। বউকে মুখ খুলে কিছু বলতেও পারিনি। এভাবেই কেটে যাচ্ছিল দিনগুলি। একদিন বউকে জিজ্ঞেস করলাম আমাদের বিয়ের তো দেড় বছর হয়ে এখন একটা বাচ্চার অভাব অনুভব করছি।

বউ মুখে ভেংচি কেটে বলল তোমার যে ইনকাম এই ইনকামে আমি বাচ্চা নেব না। নিজেরাই তো কোনো রকমে দিন কাটাচ্ছি এরই মধ্যে বাচ্চা নিয়ে উটকো ঝামেলা বাড়াতে চাই না। সময় হোক। সময় হলেই আমি তোমাকে জানাব। আমি বউয়ের কথায় আঁতকে উঠলাম তারমানে টাকা ছাড়া ভালোবাসা মূল্যহীন। তারমানে সুখে থাকার নাম বুঝি টাকা।

আমি কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে জবাব দিলাম গাছতলায় যে থাকে তারাও তো বাচ্চা নিচ্ছে। আর সন্তান না হলে ভালোবাসার পরিপূর্ণতা আসে না। বউ আমাকে থামিয়ে দিয়ে বলল গাছতলার মেয়েদের সঙ্গে আমার তুলনা করবা না। আমি গাছতলার মেয়ে না। আমাকে বিয়ে না করে একজন গাছতলার মেয়ে বিয়ে করলেই পারতে। বউয়ের কথা শুনে খুব কষ্ট পেলাম তাই কোনো জবাব না দিয়ে চুপ করে ছিলাম।

এরপর থেকে প্রায়ই বউয়ের সঙ্গে ঝগড়া হত। সামান্য ব্যাপারে দু’জনের মধ্যে কথা কাটাকাটি। ভালোবাসা সব উবে গেল। তখন মনে হচ্ছিল আমার জন্য ওর মনে কোনো ভালোবাসা অবশিষ্ট নেই। ভাবতে অবাক লাগল ভালোবাসতে বাসতে নাদিয়া অভিনয় করা শুরু করল।

কিছুদিন পর একদিন নাদিয়া আমার গহনা নিয়ে বাপের বাড়ি চলে গেল। যাবার সময় বলে গেল চাচাত বোনের বিয়ের পরই চলে আসবে। প্রথম ভেবেছিলাম হয়ত কয়েকদিন বেড়িয়ে চলে আসবে। কিন্তু তা না ও আমার কাছে থেকে একেবারে বিদায় নিয়ে চলে গেছে। আমার বাড়িতে খবর পাঠিয়েছে আমি যাতে ওকে ডিভোর্স দেই।

আমার সঙ্গে আর সংসার করবে না। বউয়ের এমন আচরণে আমি হতভম্ব হয়ে যাই। কি করব বুঝতে পারি না। বাড়ির সবাই বলল এই বউ নিয়ে সুখী হওয়া যাবে না আমি যাতে ওকে তালাক দেই। আমি নাছোড়বান্দা বললাম না আমি তালাক দেব না। দেখি ও কি করতে পারে। প্রথম পর্ব, চলবে...

এমআরএম/জেআইএম