ভিডিও EN
  1. Home/
  2. প্রবাস

করোনার থাবায় ম্লান যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা দিবসের আনন্দ

লস্কর আল মামুন | যুক্তরাষ্ট্র থেকে | প্রকাশিত: ১২:৩৫ পিএম, ০৩ জুলাই ২০২০

৪ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা দিবস। প্রতি বছর জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে দিবসটি উদযাপন করে দেশটির নাগরিকরা। স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে আয়োজন করা হয় বিশাল জনসমাবেশ, কুচকাওয়াজ ও কনসার্ট। চোখ ধাঁধানো আতশবাজি আর সমুদ্র তীরে থাকে লাখো জনতা ভিড় করে। ঘরে ঘরে চলে উৎসব।

বিশ্বব্যাপী তাণ্ডব চালাচ্ছে মহামারি করোনাভাইরাস। এই মুহূর্তে স্মরণকালের ভয়াবহ বিপর্যয়ে যুক্তরাষ্ট্র। এখন পর্যন্ত করোনা আক্রান্তের তালিকায় দেশটি সবার উপরে। তাই এবারের স্বাধীনতা দিবসের আয়োজন আলাদা।করোনার ভয়াল থাবায় ম্লান হয়েছে দেশটির স্বাধীনতা উৎসবের সব আয়োজন।

গত কয়েক সপ্তাহ ধরে যুক্তরাষ্ট্রে করোনার সংক্রমণ হু হু করে বাড়ছে। নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে কয়েকটি রাজ্যের করোনা পরিস্থিতি। এমন অবস্থায় চরম উদ্বিগ্ন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। ইতোমধ্যে এবারের স্বাধীনতা দিবসের আয়োজন সীমিত পরিসরে করার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।

প্রতিবছর স্বাধীনতা দিবসের আয়োজনে স্ট্যাচু অব লিবার্টিকে বর্ণিল সাজে সজ্জিত করা হয়। এটি যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রেে প্রতীক। যুক্তরাষ্ট্রের আকাশে যে স্ট্যাচু অব লিবার্টি উঁচু করে মশাল ধরে আছে, তার নকশা পরিকল্পনা এমনকি অর্থ সংগ্রহও হয়েছে ফ্রান্সে। যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম মিত্র ফ্রান্স। ফ্রান্স বন্ধুত্বের নিদর্শন হিসেবে এটি উপহার দেয়।

স্বাধীনতার জন্য জীবন দেন ২৫ হাজার আমেরিকান এবং ২৭ হাজার ব্রিটিশ ও জার্মান সেনা। ২৪৪ বছর আগে ১৭৭৬ সালের ২ জুলাই ইংল্যান্ডের শাসন থেকে পৃথক হওয়ার জন্য ভোট দেন আমেরিকার দ্বিতীয় কন্টিনেন্টাল কংগ্রেস। এর দুই দিন পর স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় কংগ্রেস। কিন্তু পৃথক হতে ব্রিটেনের সঙ্গে চূড়ান্ত স্বাক্ষর ২ আগস্ট হলেও, প্রতি বছর ৪ জুলাই স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করে যুক্তরাষ্ট্র।

স্বাধীনতার প্রাক্কালে ১৩টি উপনিবেশ একসঙ্গে ইংল্যান্ডের রাজার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে স্বাধীনতা সংগ্রাম শুরু করে। ভার্জিনিয়া উপনিবেশের জর্জ ওয়াশিংটন ছিলেন প্রধান সেনাপতি। এরই মধ্যে শুরু হয় স্বাধীনতা যুদ্ধ।
আর সেই যুদ্ধে উপনিবেশগুলোর বিজয়ের প্রাক্কালে ১৭৭৬ সালের ২ জুলাই দ্বিতীয় কন্টিনেন্টাল কংগ্রেসে ভোটের মাধ্যমে স্বাধীনতা ঘোষণার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এরপর পাঁচজনের একটি কমিটি স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র রচনা করে। এ কমিটির অন্যতম সদস্য ছিলেন টমাস জেফারসন, জন অ্যাডামস ও বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন। তবে টমাস জেফারসন ছিলেন মূল লেখক। রচিত ঘোষণাপত্রটি নিয়ে কংগ্রেসে বিতর্ক শেষে ঘোষণাপত্রটি চূড়ান্ত করা হয়।

ঘোষণাপত্রটি কংগ্রেসের অনুমোদন পায় ১৭৭৬ সালের ৪ জুলাই। ব্রিটিশ অরাজকতা থেকে মুক্ত হতে ‘প্রতিটি মানুষই সমান এবং একই সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টি’ এই বাণীকে সামনে রেখে টমাস জেফারসন লিখলেন স্বাধীনতার অমর বাণী।

যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতাযুদ্ধ মূলত শুরু হয় ১৭৭৫ সালে। আর তা চলে ১৭৮৩ সাল পর্যন্ত। যুদ্ধের শুরু হয় ব্রিটিশ বাহিনী ও উপনিবেশের স্থানীয় সশস্ত্র বাসিন্দাদের মধ্যে একটি ছোট খণ্ডযুদ্ধের মাধ্যমে। খণ্ডযুদ্ধটি সংঘটিত হয় ১৭৭৫ সালের ১৯ এপ্রিল। এই যুদ্ধের ফলে অন্যান্য স্থানেও সংঘাত ছড়িয়ে পড়ে। এতে ২৫০ জনের বেশি ব্রিটিশ সেনা হতাহত হয়। নিহত হয় ৯৩ জন বিপ্লবী আমেরিকান। বিদ্রোহ দমনে ব্রিটিশরা সেনা জমায়েত করে। মার্কিন বিদ্রোহী সেনাদের বিরুদ্ধে তারা বিজয় অর্জন করে।

স্বাধীনতা দিবস জাতীয় জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই সব দেশের নাগরিক দিবসটি গভীর আবেগ ও ভাবগাম্ভীর্যের সাথে উদযাপন করে থাকেন। করোনায় বিপর্যস্ত যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকরাও এবার মুক্ত আকাশে তাদের স্বাধীনতা দিবসের আনন্দ প্রকাশ সীমিত করলেও, স্বাধীনতার জন্য প্রাণ দেয়া সেনাদের প্রতি শ্রদ্ধার কোনো কমতি থাকবে না।

এমএসএইচ/পিআর