দেশে আটকেপড়া স্পেনপ্রবাসীদের ফেরাতে চার্টার্ড ফ্লাইট ১৯ জুন
করোনাভাইরাসের কারণে বাংলাদেশে আটকেপড়াদের স্পেনে ফেরাতে বিশেষ চার্টার্ড ফ্লাইটের ব্যবস্থা করেছে বাংলাদেশ বিমান। স্পেনে বাংলা গণমাধ্যমে প্রতিনিধিত্বশীল সংগঠন স্পেন বাংলা প্রেস ক্লাবের উদ্যোগে বাংলাদেশ বিমানের বিজি-৪১০৯ নম্বরের বিশেষ চার্টার্ড ফ্লাইট রাজধানী মাদ্রিদে ১৯ জুন অবতরণ করবে।
ইতোমধ্যেই বাংলাদেশ বিমান তাদের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে এই বিশেষ ফ্লাইটের সিডিউল প্রকাশ করেছে। স্পেন বাংলা প্রেস ক্লাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও এটিএন বাংলা ইউকের স্পেন প্রতিনিধি বনি হায়দার মান্না এই বিশেষ ফ্লাইটের প্রস্তুতির জন্যে মূল সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
তিনি জানান, স্পেন বাংলা প্রেস ক্লাবের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা ও স্পেনের বাংলাদেশ দূতাবাসের সর্বাত্মক সহযোগিতাসহ কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সহযোগিতার এই চার্টার্ড ফ্লাইটের সিডিউল তৈরি করা সম্ভব হয়েছে। বাংলাদেশে আটকেপড়া স্পেন প্রবাসীদের কথা বিবেচনা করে, বিমান বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী মোহাম্মদ মোকাব্বির হোসেনের আন্তরিক সহযোগিতায় বাংলাদেশ বিমানের এই বিশেষ ফ্লাইটের ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়েছে।
বাংলাদেশ বিমানের ই-৭৮৭-৮০০ এয়ারক্রাফটের বিজনেস ক্লাসে ২২ জন এবং ইকনোমিক্লাসে ২৪২ জন যাত্রী ঢাকা থেকে সরাসরি মাদ্রিদে আসতে পারবেন। বিজনেস ক্লাসের জন্য বাংলাদেশি মুদ্রায় ১ লাখ ত্রিশ হাজার টাকা এবং ইকনোমি ক্লাসের জন্য নব্বই হাজার টাকা ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে। ১৪ জুন থেকে বাংলাদেশ বিমানের অফিস থেকে ফ্লাইটের টিকিট কেনা যাবে।
স্পেন বাংলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি, বাংলাদেশ প্রতিদিনের স্পেন প্রতিনিধি এবং বাংলা কাগজের চিফ কো-অর্ডিনেটর সাহাদুল সুহেদ জানান, বাংলাদেশে আটকেপড়া প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রতিকূল পরিস্থিতি বিবেচনা করে স্পেন বাংলা প্রেস ক্লাব বিষয়টি সামনে আনে। পরে প্রেস ক্লাবের উদ্যোগে সোশ্যাল মিডিয়ায় লাইভ টক শো’র আয়োজন করে স্পেনের বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তাসহ স্থানীয় বাংলাদেশি কমিউনিটির নেতাদের নিয়ে আলোচনা করা হয়।
টক-শো’ আলোচনায় দূতাবাসের পক্ষ থেকে বিষয়টি নিয়ে সর্ব্বোচ্চ সহযোগিতার আশ্বাস প্রদান করা হলে স্পেন বাংলা প্রেস ক্লাবের পক্ষ থেকে সিনিয়র সহ-সভাপতি বনি হায়দার মান্নাকে বিষয়টিকে সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়। তিনি বিমান বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী মোহাম্মদ মোকাব্বির হোসেনের সাথে যোগাযোগ করে বিষয়টির গুরুত্ব তুলে ধরেন এবং পরে বিমান কর্তৃপক্ষ স্পেনের বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে বিষয়টি অনুমোদন করিয়ে ফ্লাইটের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
প্রেস ক্লাবের সভাপতি সাহাদুল সুহেদ আরও জানান, করোনা মহামারিতে বাংলাদেশের বিপর্যয়কালীন পরিস্থিতি ও স্পেন সেই সঙ্কট কাটিয়ে ওঠাকালীন বিমানের এই সিডিউল তৈরির কাজটি সহজ হয়নি এবং এজন্য সময় ক্ষেপণ হয়েছে। তবুও প্রেস ক্লাবের উদ্যোগে শেষ পর্যন্ত ফ্লাইটের সিডিউল তৈরি হওয়ায় তিনি সন্তোষ প্রকাশ করেন।
স্পেন বাংলা প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক, যমুনা টিভির স্পেন প্রতিনিধি এবং বাংলা কাগজের স্পেন ব্যুরো প্রধান আফাজ জনি জানান, স্পেন বাংলা প্রেস ক্লাব শুধু গণমাধ্যমকর্মীদের নয়, বরং বাংলাদেশি কমিউনিটির জন্য বিশেষ দায়বদ্ধতার জন্য এই প্রচেষ্টা চালিয়েছে।
তিনি জানান, মাদ্রিদের বাংলাদেশ দূতাবাসের সর্বাত্মক সহযোগিতা, স্পেনের প্রবীণ কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব খোরশেদ আলম মজুমদার, ভালিয়ান্তে বাংলার সভাপতি ফজলে এলাহী, বাংলাদেশ থেকে স্পেন প্রবাসী মাসুমের রহমান, আমিনুর রাজ্জাক, ওয়াসিম মিয়া, যুক্তরাজ্য থেকে বাংলা কাগজের উপদেষ্টা খায়রুল ইসলামসহ স্পেনের বাঙালি কমিউনিটির বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারা এবং সর্বস্তরের মানুষের সহযোগিতা ও সমর্থনের জন্য এইবিশেষ চার্টার্ড ফ্লাইটের ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়েছে।
উল্লেখ্য, আগামী ১৯ জুন বিমান বাংলাদেশ মাদ্রিদে বিশেষ ফ্লাইটের ব্যবস্থা করায় বাংলাদেশে আটকেপড়া স্পেন প্রবাসী বাংলাদেশি ও তাদের পরিবারের মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে। অল্প সময়ের ভ্রমণের সিডিউল নিয়ে বাংলাদেশ গিয়ে অনেক বাংলাদেশি কারোনাভাইরাসের বৈশ্বিক মহামারি সঙ্কটের কারণে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট সিডিউল বিপর্যয়ের শিকার হয়ে বাংলাদেশে আটকেপড়ে। তাদের অনেকের রেসিডেন্ট কার্ড ও পাসপোর্টের মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার উপক্রম হয়েছিল।
অনেকে কাজে যোগ না দিতে পারায় চাকরি হারানোর অনিশ্চিয়তাসহ স্পেনে ফেলে যাওয়া ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তদারকি করতে না পারায় চরম অনিশ্চয়তা ও বিপর্যয়ের মুখে পড়েছিল। অনেকে পরিবার স্পেনে রেখে দেশি গিয়ে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে উৎকণ্ঠায় করোনা মহামারির সময়কাল পার করছে। তাই বর্তমানে ১৯ মে’র চার্টার্ড ফ্লাইটের মাধ্যমে স্পেনের নিজ নিজ কর্মস্থলে ফিরে আসতে পারার নিশ্চয়তায় আগমন প্রত্যাশীদের মধ্যে কিছুটা হলেও স্বস্তি বিরাজ করছে বলে মন্তব্য করেছে ভুক্তভোগী অনেকেই।
এমআরএম/এমএস