ভিডিও EN
  1. Home/
  2. প্রবাস

লিবিয়ায় যেভাবে মানবপাচারকারীদের কবলে পড়লেন বাংলাদেশিরা

প্রবাস ডেস্ক | প্রকাশিত: ০৭:২৯ পিএম, ২৯ মে ২০২০

‘মারা যাওয়া ২৬ জনসহ মোট ৩৮ জন বাংলাদেশি ও কিছু সুদানি নাগরিক প্রায় ১৫ দিন ধরে অপহরণকারী চক্রের হাতে আটক ছিলেন। রাজধানী ত্রিপলি থেকে ১৮০ কিলোমিটার দক্ষিণের শহর মিজদায় রাখা হয়েছিল তাদের। সেখানেই ২৮ শে মে সকালে বন্দিদের ওপর গুলি চালায় অপহরণকারীরা।

লিবিয়ার বাংলাদেশ দূতাবাসের এক কর্মকর্তাকে হৃদয়বিদারক কথাগুলো বলছিলেন হামলা থেকে বেঁচে যাওয়া আহত এক বাংলাদেশি। মূলত ইতালিতে অভিবাসনের উদ্দেশ্যে ৩৮ জন বাংলাদেশি লিবিয়ায় গিয়েছিলেন বলে জানান তিনি।

‘করোনাভাইরাস সংক্রান্ত জটিলতা শুরু হওয়ার আগে ডিসেম্বর মাসে তারা ভারত ও দুবাই হয়ে বেনগাজি বিমানবন্দরে পৌঁছান। এরপর গত কয়েক মাস তাদেরকে লিবিয়ার ভেতরে গোপনে রাখা হয়েছিল। উপকূলীয় অঞ্চল যুওয়ারা হয়ে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে অভিবাসীদের নিয়ে ইতালির দিকে যাত্রা করার পরিকল্পনা ছিল পাচারকারীদের’।

বছরের এই সময়টায় সাগর অপেক্ষাকৃত শান্ত থাকায় এটিকেই সাগর পাড়ি দেয়ার আদর্শ সময় বলে মনে করা হয়। কিন্তু প্রচলিত ও ব্যবহৃত পথে না গিয়ে মরুভূমির মধ্যে দিয়ে বেশ বিপদসংকুল একটি পথে তাদের নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল’।

তিনি বলেন, ‘যুদ্ধকবলিত লিবিয়ায় একাধিক সরকার থাকায় ত্রিপলি হয়ে যুওয়ারা যাওয়ার প্রচলিত পথে নানা রকম তল্লাশি হয়। সেই পথ এড়িয়ে কম ব্যবহৃত মরুভূমির মধ্যকার রাস্তা দিয়ে অভিবাসীদের নিয়ে যুওয়ারা যাচ্ছিলেন পাচারকারীরা’।

‘কিন্তু ওই মরুভূমির পথ সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের নিয়ন্ত্রণাধীন, যারা সরকারহীনতার সুযোগ নিয়ে অপরাধমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে অনেকদিন ধরে। সন্ত্রাসী ও অপহরণকারীদের একাধিক গ্রুপের মধ্যে দ্বন্দ্বের ঘটনাও ঘটে থাকে। বেনগাজি থেকে মরুভূমির রাস্তায় যুওয়ারা যাওয়ার পথে তারা অপহরণকারীদের কবলে পড়ে’।

কেন হত্যা করা হলো অভিবাসন প্রত্যাশীদের?

অপহরণের পর মিজদাতেই প্রায় ১৫ দিন অপহরণকারীদের জিম্মায় ছিলেন অভিবাসন প্রত্যাশী বাংলাদেশি ও সুদানি নাগরিকরা। অপহরণকারীদের সাথে আটক হওয়া ব্যক্তিদের মুক্তিপণ নিয়ে দর কষাকষি চলছিল। আটকদের অনেকেই পরিবারের সাথে যোগাযোগ করলেও কাঙ্ক্ষিত মুক্তিপণ দিতে ব্যর্থ হয় তারা, জানান আশরাফুল ইসলাম।

‘মুক্তিপণ দিতে ব্যর্থ হওয়ায় আটকদের ওপর নির্যাতন চালাতে থাকে অপহরণকারীরা। এক পর্যায়ে বাংলাদেশিদের সাথে থাকা সুদানি নাগরিকরা অপহরণকারী চক্রের এক সদস্যকে মেরে ফেলেন। এরপর অপহরণকারীরা ক্ষুদ্ধ হয়ে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে হামলা চালালে ৩৮ জন বাংলাদেশির সবাই গুলিবিদ্ধ হয়। মারা যায় ২৬ জন’।

‘গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত অবস্থায় কয়েকজন ভেতরেই পড়ে ছিল, দুই-একজন আহত অবস্থায় বের হয়ে আসে। তাদের দেখে স্থানীয় লোকজন সেনাবাহিনীকে খবর দেয় এবং সেনাবাহিনী তাদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করে’।

আশরাফুল ইসলাম জানান, আহত বাংলাদেশিদের মধ্যে তিনজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। প্রত্যক্ষদর্শীর বরাত দিয়ে লিবিয়ার একটি সংবাদ মাধ্যম আল-ওয়াসাত খবর প্রকাশ করেছে যে মোহাম্মদ আব্দুল রহমান, যিনি একজন মানবপাচারকারী হিসেবে পরিচিত, অজানা কারণে শুরু হওয়া এক ‘বিদ্রোহে’ মারা যান। এরপর তার পরিবারের সদস্যরা ওই ভবনটি ঘেরাও করে এবং মরদেহ ফিরে পাওয়ার জন্য আলোচনা শুরু করে।

এক পর্যায়ে ওই ভবনে উপস্থিত ১০০ জন অভিবাসী আত্মসমর্পণ করেন, কিন্তু ৪০ জন ভবন ছাড়তে অস্বীকৃতি জানান। এরপর ওই ভবনে ভারী অস্ত্রশস্ত্র ও রকেট দিয়ে হামলা করার পর ভবনের ভেতরে থাকা ব্যক্তিরা নিহত হন। তবে অন্যকোনো সূত্র থেকে এই তথ্যের সত্যতা যাচাই করা সম্ভব হয়নি।

লিবিয়ার পরিস্থিতি কেন অস্থিতিশীল?

২০১১ সালে পশ্চিমা সমর্থিত বিদ্রোহীদের হাতে কর্নেল মুয়াম্মার গাদ্দাফির পতন হওয়ার পর থেকে লিবিয়ায় চলছে সীমাহীন নৈরাজ্য এবং অরাজকতা। লিবিয়ায় নানা মত ও পথের অসংখ্য সশস্ত্র মিলিশিয়া বাহিনী তৎপর।

দেশের পূর্বে এবং পশ্চিমে রয়েছে দুটো ভিন্ন রাজনৈতিক শাসন কেন্দ্র। কিছু মিলিশিয়া দল পূর্বের রাজনৈতিক নেতৃত্বের অনুগত, কিছু আবার সমর্থন করে পশ্চিমের অর্থাৎ ত্রিপলি নিয়ন্ত্রণকারী প্রশাসনকে।

লিবিয়ায় এখন যার হাতে যত বেশি অস্ত্র, তার শক্তি এবং প্রভাবও তত বেশি। নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের অনেকে মনে করেন লিবিয়া এখন অস্ত্রের বাজারে পরিণত হয়েছে। আর অস্ত্রের সহজলভ্যতার কারণে পুরো দেশেই বিভিন্ন পন্থী ছোট ছোট মিলিশিয়া গ্রুপ তৈরি হয়েছে।

আশরাফুল ইসলাম বিবিসিকে বলেন, ‘এখানে অপহরণকারী চক্র খুবই শক্তিশালী। তারা এখানে সেনাবাহিনীর সাথেও কখনো কখনো মুখোমুখি যুদ্ধে লিপ্ত হন এবং মাঝেমধ্যে সেনাবাহিনীও পিছু হটতে বাধ্য হয়। এই মিলিশিয়ারা এখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপরে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেছে। এখানকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের সামনে অসহায়’।

তিনি বলেন, লিবিয়ায় একক সরকার ব্যবস্থা না থাকায় মিলিশিয়া বাহিনীগুলো মানবপাচার ও অপহরণের মতো অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করে। আর দেশটির আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যথেষ্ট শক্তিশালী না হওয়ায় মিলিশিয়াদের তৎপরতার বিরুদ্ধে তেমন কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারে না তারা।

এমআরএম/পিআর