ভিডিও EN
  1. Home/
  2. প্রবাস

করোনার হানায় পর্যটকশূন্য ‘ইউরোপের বৈঠকখানা’

জমির হোসেন | প্রকাশিত: ০৬:১০ পিএম, ০৭ মার্চ ২০২০

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দ্রুত গতিতে ছড়িয়ে পড়ার কারণে পর্যটকশূন্য শহরে পরিণত হয়েছে ইতালির ভেনিস। ব্যবসা বাণিজ্যে কর্মচাঞ্চল্য নেই বললেই চলে। এটি ইতিহাসের রেকর্ড ভেনিসের মতো শহর পর্যটকশূন্য। অনেকগুলো ছোটছোট দ্বীপ নিয়ে গঠিত এই ভেনিস শহর। শতশত সেতু দ্বীপগুলোর মধ্যে সংযোগ রক্ষা করছে।।

পুরো শহরজুড়ে রয়েছে অনেকগুলো খাল, যেগুলো যাতায়াতের অন্যতম প্রধান মাধ্যম। ভেনিসের সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক হলো এর বাড়িঘর, যেগুলো কাঠের খুঁটির ওপর দাঁড়িয়ে আছে। ফলে দেখে মনে হয় পুরো শহরটি পানিতে ভেসে আছে।

জাতিসংঘের শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কো ভেনিসকে বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে ঘোষণা করেছে। পর্যটকদের কাছে শহরের সবচেয়ে জনপ্রিয় জায়গা এটি। একে বলা হয় ‘ইউরোপের বৈঠকখানা’। এটি মূলত একটি বিশাল চত্বর। যার চারপাশে রয়েছে নানা ধরনের ঐতিহাসিক নিদর্শন।

চীনার উহান থেকে উৎপত্তি কভিড-১৯ এ ইতোমধ্যে ইতালিতে আক্রান্তের সংখ্যা ৪ হাজার ৬৩৬ জনে দাঁড়িয়েছে, মারা গেছেন ১৯৭ জন। এ ছাড়া সুস্থ হয়ে ঘরে ফিরেছে ৫শ ২৩ জন। এ ভাইরাসে জনমনে নেতিবাচক প্রভাব পড়ায় দেশটির প্রবাসী বাংলাদেশিদের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

Italy

এদিকে ইতালির সঙ্গে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। গত কয়েকদিন ধরে তুর্কি, কাতার ও সর্বশেষ এমিরেটস এয়ারলাইন্স বন্ধ রয়েছে। ইতোমধ্যে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, ধর্মীয় পাঠশালা ও মসজিদ আগামী ১৫ মার্চ পর্যন্ত সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।

দেশটির উত্তর ইতালিতে চরম বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে ছোটবড় সব ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। বাংলাদেশিসহ অনেকেই কর্মচ্যুত হয়ে অলস সময় পার করছেন। পর্যটন নগরী ভেনিস নাজুক শহরে পরিণত হয়েছে। প্রবাসী বাংলাদেশিরা জানান, পরিস্থিতি খুবই ভয়াবস। এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে ব্যবসা গুটিয়ে ফেলতে হবে।

এদিকে ইতালি সরকার আক্রান্তদের যথাযথ চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও জনসমাগম এড়িয়ে চলতে পরামর্শ দেন। কোনো প্রকার আলিঙ্গন, চুমু ও হ্যান্ডশেক করা থেকে বিরত থাকতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে দেশটিতে বসবাসরত সকল প্রকার নাগরিকদের।

Italy

অন্যদিকে রোম দূতাবাস ঘোষণা দিয়েছে, প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস এড়াতে এবং করোনায় আক্রান্ত নয় এ তথ্য সু-নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ গমনে দূতাবাসের সনদ লাগবে বাংলাদেশি নাগরিকদের। শুক্রবার ৬ মার্চ দূতাবাসের একটি পেজে এ সংক্রান্ত একটি বিজ্ঞপ্তিতে এ নির্দেশ দেওয়া হয়।

যেকোনো বাংলাদেশি ইতালি থেকে দেশে প্রবেশ করতে চাইলে অবশ্যই দূতাবাসের এ সনদ সংগ্রহ করতে হবে। জানা গেছে, সনদপত্র সংগ্রহ করার পূর্বে বাংলাদেশি নাগরিক স্থানীয় ডাক্তার থেকে পরীক্ষার মাধ্যমে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত নয় মেডিকেল সার্টিফিকেট নিয়ে দূতাবাসে যেতে বলা হয়েছে। এর আগে অবশ্যই অনলাইন থেকে একটি ফরম পূরণ করে দূতাবাসে নিয়ে যেতে হবে।

এদিকে দূতাবাসের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের পেজে বাংলাদেশিরা মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন এবং এই সনদ প্রক্রিয়াকে তারা হয়রানি হিসেবে মনে করছেন। এ ব্যাপারে প্রবাসী রাজ্জাক আব্দুর রাজ দূতাবাসের কাছে জানতে চেয়েছেন কোনো হাসপাতাল সাটিফিকেট না দিলে আমরা কী করতে পারি।

Italy

মোহাম্মদ ফরিদ হোসেন তার প্রশ্নের জবাবে বলেন, এখন কোনো উত্তর পাবেন না। এরা আছেই মানুষের হয়রানি কীভাবে বাড়ানো যায় সেই চিন্তায়। এছাড়া আরও অনেক বাংলাদেশি এ সনদ সংগ্রহকে ভালভাবে মেনে নিতে পারেননি বলে নেতিবাচক মন্তব্য করেন।

অন্যদিকে, আরেকটি বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, করোনাভাইরাস দিনেদিনে প্রকট হওয়ায় ইতালি সরকারের জরুরি নির্দেশনা মেনে চলতে পরামর্শ দেন। সেই লক্ষ্যে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া দূতাবাসে এসে ভিড় জমাতে নিষেধ করা হয়। একই সঙ্গে স্বাস্থ্য বিভাগের পরামর্শ অনুযায়ী প্রয়োজন ছাড়া ভ্রমণ না করার পরামর্শ দেন।

গত ৩১ ডিসেম্বর চীনের উহানে প্রথমবারের মতো ধরা পড়ে করোনাভাইরাস। এ পর্যন্ত অন্তত ৯৭টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে প্রাণঘাতী এ ভাইরাস। এরই মধ্যে নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন অন্তত ১ লাখ ২ হাজার ২৩৭ জন, মারা গেছেন ৩ হাজার ৪৯৭ জন। ৫৭ হাজার ৬২২ জন করোনা আক্রান্ত রোগী চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।

এমআরএম/জেআইএম