ভিডিও EN
  1. Home/
  2. প্রবাস

আমার তো কাঁপাকাঁপি শুরু হয়েছে!

ওমর ফারুকী শিপন | প্রকাশিত: ০৩:৫৫ পিএম, ১৮ জানুয়ারি ২০২০

মাহফুজার সাথে প্রথম কথা বলার পর উপলব্ধি করি তাকে আমি ভালোবাসি। হয়ত আমার অবচেতন মন অনেক আগেই তাকে ভালোবেসেছে। এতদিন তা গোপন ছিল। আজ তাকে দেখার পর চেতন মন তার সংস্পর্শ চায়। ভালোবাসা চায়।

ভালোবাসা মানে দুটি মন একত্রিত হওয়া। মনও তো ধরাছোঁয়ার বাহিরে। মনের অবস্থান কোথায়? অনেকে বলে মস্তিষ্ক আমাদের নিয়ন্ত্রণ করে। তাহলে মন কোথায় থাকে? প্রেমে পড়লে মানুষ হয়ত আবোল-তাবোলভাবে আমিও হয়ত এখন সেটায় ভাবছি।

কয়েকদিন পর বন্ধুর সাথে পরামর্শ করি কি করা যায়। বন্ধু বলল, প্রতিদিন মাহফুজা তোকে স্মরণ করে। তুই যখন দরজা খুলে বের হস তখন সেও দরজা খুলে তোকে দেখতে বের হয়। আবার যখন বাসার মধ্যে প্রবেশ করিস তখনও সে জানালা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকে তোকে এক নজর দেখার জন্য। প্রতিদিন বিকেলে সে একই সময়ে তোর জন্য ছাদে অপেক্ষা করে। এসব লক্ষণ দেখে বোঝা যায় সে তোকে ভালোবাসে। তাই আমি পরামর্শ দেব, তুই তাকে চিঠির মাধ্যমে মনের কথা জানা।

বন্ধুর পরামর্শে চিঠি লিখতে বসি:
তাকে কীভাবে চিঠি দেব সেই ভাবনায় আমার ঘুম হয় না। আমার দিকে সে তাকালে তার চোখের ভাষায় বোঝা যায় সে আমাকে ভালোবাসে। তার না বলা কথা বলতে চায়। তাদের বাড়িটা দু’তলা বিশিষ্ট দক্ষিণ মুখী। আমি বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে ছাদের দিকে তাকিয়ে থাকি। তাকে দেখি আর মনে মনে বলি ভালোবাসি, খুব ভালবাসি।

তাকে একা পাবার সুযোগ খুঁজতে থাকি। একদিন বিকেলে তাকে ছাদে দেখতে পেয়ে আমিও ছাদে উঠি। আমাকে ছাদে দেখে সে আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিলো। বললাম, মাহফুজা তোমার সাথে কথা আছে।

মাহফুজা তার সাথের মেয়েটাকে বলল, তুই নিচে গিয়ে দাঁড়া আমি আসছি। মেয়েটি নিচে নেমে গেলে সে আমার দিকে এগিয়ে এসে বলল, কি বলবেন বলেন? মাহফুজার দিকে তাকিয়ে আমি কাঁপতে থাকি। কীভাবে তার হাতে চিঠি তুলে দেব। নিজেকে স্থির রেখে বুকে সাহস সঞ্চয় করে তার দিকে চিঠিটা এগিয়ে দিয়ে বললাম, আমার সব কথা এখানে লেখা আছে। সে চিঠিটা হাতে নিতেই তাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে আমি দ্রুত নিচে নেমে গেলাম।

চিঠি দেওয়ার পর আশঙ্কায় আমার ঘুম হয় না। সে কি আমার ভালোবাসা গ্রহণ করবে নাকি আমার চিঠির কথা বাড়ির সবাইকে বলে দেবে। যদি তার বাবা মায়ের হাতে চিঠিটা যায় তাহলে আমাকে তারা কি যে হবে আমি এখন বাড়ির সবাইকে এড়িয়ে চলি। কেউ সামনে পড়লেই মনে এই বুঝি তারা আমাকে চিঠির কথা বলে অপমান করবে। এভাবে কেটে যায় কয়েকদিন।

কিছুদিন পর গৃহকর্মীর হাতে চিঠির জবাব পেলাম। সে লিখেছে আমি আপনার যোগ্য না। আপনি আমাকে ভালোবাসেন কেন? আপনি আমার চেয়ে ভালো মেয়ে পাবেন। তার চিঠি আমাকে নতুন করে স্বপ্ন দেখায়। আমার বুঝতে বাকি থাকে না সে আমাকে ভালোবাসে।

এরপর এভাবে চিঠির মাধ্যমে আমাদের প্রেমটা চলতে থাকে। দু’জন প্রেমে পড়ে রঙিন স্বপ্ন দেখতে থাকি। আমার প্রতিটি মুহূর্ত কাটে তাকে ঘিরে।

একদিন সে আমার রুমের সামনে মিষ্টি নিয়ে আসে। তখন পুরো ফ্লাট ছিল খালি। আমরা দু’জন মুখোমুখি দাঁড়িয়ে। সে আমাকে নিজ হাতে মিষ্টি খাইয়ে দিচ্ছে আমিও তাকে মিষ্টি খাইয়ে দিচ্ছি। এমন সময় ছাদ থেকে ওর মা নিচে নেমে আমাদের দেখে ফেলল। সাথে সাথে সব এলোমেলো হয়ে যায়।

মাহফুজার মা তাকে ঘরে নিয়ে ইচ্ছেমতো মারধর করে। ওর বাবা ভাই আমার রুমে এসে আমাকে ইচ্ছে মতো গালাগালি করে। এতদিন এই বাড়িতে আমি ছিলাম পরম আত্মীয়র মতো। আজ কয়েক মিনিটের ব্যবধানে হয়ে গেলাম সবার শত্রু। চাচা আমাকে বাবা ছাড়া কথা বলত না সে এখন তুইতুকারি করে কথা বলছে। যে ভাই আমাকে দেখলেই সালাম দিতো শ্রদ্ধায় মাথা নত করত সে এখন আমাকে মারতে ধেয়ে আসছে। এই আমি কি দেখছি।

মানুষ আজ যাকে কাঁধে তোলে তোষামোদী করে। যাকে দেখলে শ্রদ্ধায় মাথা নত করে তার সামান্য ভুলে তাকেই পায়ের নিচে ফেলে পিষ্ট করতেও দ্বিধাবোধ করে না। তাদের কাছ থেকে এমন আচরণ পাব তা কোনোদিন আশা করিনি। তারা আল্টিমেটাম দিল আগামী দুইদিনের মধ্যে বাসা ছেড়ে দেওয়ার জন্য। আমি কী করব বুঝে উঠতে পারছি না।

ওদিকে মাহফুজাকে মারধর করছে তা আমি স্পষ্ট টের পাচ্ছি। মেয়েটার কান্না আমাকে ব্যথিত করছে।

এমআরএম/পিআর