ভিডিও EN
  1. Home/
  2. প্রবাস

মালয়েশিয়ায় মানবপাচার : দোষীদের বিরুদ্ধে দণ্ডাদেশ

আহমাদুল কবির | মালয়েশিয়া | প্রকাশিত: ০৭:৩৪ পিএম, ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৯

মালয়েশিয়ায় মানবপাচারের ঘটনায় বিচারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল দেশটির সরকার। সেই প্রতিশ্রুতি মোতাবেক সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কয়েকশ মামলা তদন্তের পর চলতি বছরে আটটি মামলায় দণ্ডাদেশ দিয়েছে সে দেশের একটি আদালত। যদিও শত শত মামলা এখনও তদন্তাধীন। থমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশন গত ৪ সেপ্টেম্বর এ তথ্য প্রকাশ করেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিদেশি শ্রমিকদের ওপর প্রচুর নির্ভরতার কারণে মালয়েশিয়া পাচারকারীদের জন্য একটি আকর্ষণীয় স্থান। অনেকেই দালালের মাধ্যমে ভালো কাজের প্রতিশ্রুতি পেয়ে ইন্দোনেশিয়া এবং বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমায়। কিন্তু মালয়েশিয়ায় এসে অবৈতনিক শ্রম, ঋণের বোঝা এবং শোষণের মুখে পড়ে।

মানবাধিকার সংস্থা ওয়াক ফ্রি ফাউন্ডেশনের গ্লোবাল স্লেভারি ইনডেক্স অনুসারে, বিশ্বব্যাপী প্রায় চার কোটি লোকের মধ্যে মালয়েশিয়ায় দাসত্বের কবলে ২ লাখ ১২ হাজার লোক। সরকার এমন পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে শ্রম আইন কার্যকর ও সংশোধন করার প্রতিশ্রুতি দেয়।

যুক্তরাষ্ট্রের মানব পাচারের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশটিতে ২০১৪ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে প্রায় ১৬০০ মামলা তদন্ত তালিকাভুক্ত করেছে এবং ৩ হাজার ভুক্তভোগীকে শনাক্ত করে কেবল ১৪০টি মামলার তদন্ত শেষে দণ্ডাদেশ দিয়েছে।

দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশে ন্যায়বিচারের গতি ত্বরান্বিত করতে জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ২০১৮ সালের মার্চ মাসে একটি বিশেষ পাচার আদালত চালু করে মালয় সরকার। তবে আদালতের রেজিস্ট্রার অফিস থেকে থমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশন কর্তৃক বিশেষভাবে প্রাপ্ত সরকারি পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায় যে, আদালতের প্রথম ১৫ মাসে কেবল ২৬টি মামলার নিস্পত্তি হয়েছে এবং আটটি মামলায় দোষীদের দণ্ডাদেশ প্রদান করা হয়েছে।

কুয়ালালামপুরভিত্তিক অভিবাসী অধিকার নিয়ে কাজ করে এমন একটি সংস্থা তেনাগানিতা। এর পরিচালক এজিল ফার্নান্দেজ বলছেন, বিচার বিভাগের একজন প্রবক্তা মামলাগুলোর বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে অস্বীকার করেন। কী শাস্তি দেয়া হয়েছিল, তা নিয়েও স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়নি। আইনমন্ত্রী লিউ ভুই কওং, অ্যাটর্নি জেনারেলের চেম্বার, বা যারা বিচার কার্যের তদারকি করেন, তারা আদালতের কার্যকারিতা বা ভবিষ্যতের পরিকল্পনা সম্পর্কে কোনো প্রশ্নের জবাব দেননি। লিউয়ের প্রেস অফিসার শুধু বলেছেন, ‘ন্যায়বিচার পেতে সময় লাগে।’

‘আদালত কখন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, আপনি কি জানেন? আপনি কি আমাকে বলতে পারবেন যে, কতদিন একটি বিচার চলতে পারে?’-থমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশনের কাছে এমন একটি বার্তা আসে। এর উত্তরে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, তুলনামূলকভাবে আদালতের ওয়েবসাইট থেকে জানা যায় যে, ২০১৭ সালের মাঝামাঝি সময়ে শিশুদের বিরুদ্ধে যৌন অপরাধের বিষয়ে প্রতিষ্ঠিত একটি আদালত প্রথম বছরে ৩৭৭টি মামলার নিস্পত্তি করতে পেরেছিল। যদিও সেখানে কতজনকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল, তার কোনো নির্দিষ্ট সংখ্যা ছিল না।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের ২০১৯ সালে মানবপাচার বিষয়ক এক প্রতিবেদনে মালয়েশিয়াকে মানবপাচার প্রতিরোধে পদক্ষেপ নেয়ার ক্ষেত্রে চারটি বিভাগের মধ্যে দ্বিতীয় অবস্থায় থাকার কথা উল্লেখ করা হয়।

মালয়েশিয়ায় মানবপাচার আদালত প্রতিষ্ঠার পরে সংশ্লিষ্ট মানবাধিকার কর্মীরা প্রথম দিকে সিদ্ধান্তটাকে বেশ জানায়। বিশেষ করে যারা বেশিরভাগ সময় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের কারখানায় শ্রম, যৌনতা বিক্রয় বা গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করা বিষয়ে সহায়তা পদান করে থাকেন। কিন্ত দেখা গেল ঠিক উল্টো চিত্র। বিদেশি নাগরিকদের বিচারের দীর্ঘসূত্রিতা এবং সহায়তার অভাবের কারণ উল্লেখ করে তারাও মামলা করার দিকে গেলেন না।

মালয়েশিয়া প্লান্টেশন, কারখানা বা নির্মাণে কাজের জন্য প্রায় ২ মিলিয়ন নিবন্ধিত অভিবাসী শ্রমিকের ওপর নির্ভর করে। তবে এখানকার প্রেক্ষাপট ভিন্ন, মানবপাচারের ঘটনায় এখানে বিচার সেরকমভাবে হয় না। ফলে মানবপাচারকারীদের দয়ার ওপরই নির্ভর করতে হয় শ্রমিকদের।

তবে এ বিষয়ে মানবাধিকারকর্মী তেনাগানিতার ফার্নান্দেজের ভাষ্য, ‘মালয়েশিয়ায় অনেকগুলো এমন ঘটনা রয়েছে। এবং এটি একটি বড় অপরাধ। তবে আমরা এই মামলাগুলোকে পাচার হিসেবে চিহ্নিত করি না। আর এ কারণেই দণ্ডের হারও অনেক কম দেখি।’

এসআর/পিআর

আরও পড়ুন