বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী মালয়েশিয়ার ব্যবসায়ীরা
মালয়েশিয়ায় শোকেস বাংলাদেশ গো-গ্লোবাল সম্মেলনে ফুটে ওঠেছে বাংলাদেশের উন্নয়নে অদম্য অগ্রযাত্রার চিত্র। বাংলাদেশের অভূতপূর্ব উন্নয়নের কথা শুনে বিমুগ্ধ শ্রোতা ও ব্যবসায়ীরা। ১১ জুলাই কুয়ালালামপুর রয়েল চোলান হোটেলের হলরুমে দিনব্যাপী গো-গ্লোবাল সম্মেলনে বাংলাদেশের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরা হয়।
বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি, জীবনমানের উন্নয়ন, গড় আয়ু বৃদ্ধি, বাজেট বৃদ্ধি এবং সরকারের সক্ষমতা। বৃহত্তম অবকাঠামো উন্নয়ন, অভ্যন্তরীণ উৎপাদন ও রফতানি বৃদ্ধি। বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধির ফলে জাতীয় উৎপাদনে ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে জিডিপি। দ্রুততম সময়ে জিডিপি প্রবৃদ্ধির ফলে বিশ্বব্যাংক ৩য় দ্রুতগতির জিডিপির স্বীকৃতি দিয়েছে। এডিবি এবং আইএমএফ বিশ্বের দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির স্বীকৃতি দিয়েছে।
শ্রোতারা দেখলেন উন্নত সড়ক যোগাযোগ, বিমান যোগাযোগ, সমুদ্রবন্দর ও গভীর সমুদ্রবন্দর, মহাকাশে বংঙ্গবন্ধু ১ স্যাটেলাইট এবং দ্রুতগতির ইন্টারনেট। যা ব্যবসা করার অনুকূলে। মালয়েশিয়ার আড়াই শতাধিক শিল্প বিনিয়োগকারী দেখলেন বাংলাদেশের কর্মচঞ্চল নাগরিক কীভাবে গার্মেন্টস শিল্পকে চীনের পরেই স্থান করে নিয়েছে। অর্থাৎ বিশ্বে ২য় স্থান করে নিয়েছে বাংলাদেশ।
অভিজ্ঞ ব্যবসায়ীরা দেখলেন এশিয়ার যেকোনো দেশের তুলনায় বাংলাদেশে ব্যবসা করার খরচ কত কম! যেখানে কুয়ালালামপুরে ব্যবস্থাপনা খরচ ৩৪৫ মার্কিন ডলার সেখানে বাংলাদেশে মাত্র ১১ মার্কিন ডলার। বাংলাদেশে একজন কর্মীর বেতন যেখানে ১১০ মার্কিন ডলার সেখানে চীনে ৩৪৫ মার্কিন ডলার। কীভাবে বাংলাদেশ পণ্য ডিউটি ফ্রি, কোটা ফ্রি সুবিধা নিয়ে পৌঁছে গেছে ইউরোপ ও বড় বাজারগুলোতে।
বিনিয়োগের জন্য এসব মিরাক্কেল দেখে মুহূর্তে পাল্টে গেল উপস্থিত দর্শক শ্রোতাদের মন, করলেন মন্তব্য, দ্বিধা ছাড়াই বললেন, বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে গেছে, সামনে আরও এগিয়ে যাবে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত মালয়েশিয়ার ডেপুটি ইন্টা: ট্রেড মিনিস্টার অং কিয়াং মিং বাংলাদেশের প্রশংসা করে বলেন, বাংলাদেশ আর পিছিয়ে নেই। বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের মডেল। বর্তমান নেতৃত্ব, সরকারে দূরদর্শী পরিকল্পনায় এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশে নিযুক্ত মালয়েশিয়ার অ্যাক্টিং হাইকমিশনার আমির ফরিদ আবু হাসান বাংলাদেশে তার দেশের ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীদের আহ্বান জানিয়েছেন। বাংলাদেশের শিল্পমন্ত্রী টিপু মুন্সী এমপি প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেন, বাংলাদেশের দ্রুতবর্ধনশীল খাতগুলোতে মালয়েশিয়াকে বিনিয়োগে এগিয়ে আসতে আহ্বান জানান।
টিপু মন্সী বলেন, মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশের মধ্যে প্রকৃতিগতভাবেই সুসম্পর্ক বজায় আছে। বিনিয়োগ ও বাণিজ্যের ক্ষেত্রে দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা জোরদার হলে দুই দেশেরই উন্নয়ন হবে। বাণিজ্যমন্ত্রী আরও বলেন, দেশব্যাপী ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরি করেছে সরকার। ইতোমধ্যে ২২টি অঞ্চলের কাজ শুরু হয়েছে। যার মধ্যে সরকারিভাবে ১৯টি এবং বেসরকারিভাবে তিনটি অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। ব্যবসার জন্য একটি অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্বাচন করে নেয়ার সুযোগ রয়েছে মালয়েশিয়ার জন্য।
প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমদ বলেন, মালয়েশিয়া বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের বিশ্বস্ত বন্ধু রাষ্ট্র ও ব্যবসায়িক পার্টনার। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে মালয়েশিয়া বাংলাদেশকে সমর্থন দিয়ে আসছে। দেশটি বাংলাদেশের জনশক্তি রফতানির বড় বাজার। বাংলাদেশ মালয়েশিয়ার প্রতি কৃতজ্ঞ।
মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মহ. শহীদুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশে বিনিয়োগের চমৎকার পরিবেশ বিরাজ করছে। বর্তমানে দুই দেশের মধ্যকার বাণিজ্য দুই বিলিয়ন ডলার। মালয়েশিয়ার বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করে লাভবান হতে পারেন। বাংলাদেশ সরকার বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণীয় সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে।
সম্মলনে আরও বক্তব্য দেন- বায়রা সভাপতি বেনজীর আহমেদ এমপি, বাংলাদেশ-মালয়েশিয়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (বিএমসিসিআই) সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন, শোকেস বাংলাদেশের অর্গানাইজার কমিটির চেয়ারম্যান মো. আলমগীর জলিল প্রমুখ।
সম্মেলনে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদের সঙ্গে মালয়েশিয়ার শিল্প উদ্যোক্তা, বিনিয়োগকারী, ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতারা মতবিনিময় করেন। অর্থনীতিবিদসহ বিভিন্ন পর্যায়ের ৭০ জন কর্মকর্তা মালয়েশিয়ার এ সম্মেলনে অংশ নেন। মালয়েশিয়ার প্রায় তিন শতাধিক বিনিয়োগকারী সম্মেলনে উপস্থিত রয়েছেন।
এমআরএম/জেআইএম