হাসি কান্নায় ভরা ঈদ উৎসব
সুখ, দুঃখ হাসি কান্নায় ভরা ঈদের উৎসব। দিনটিকে ঘিরে আবাল-বৃদ্ধা,শিশু-কিশোরসহ সব বয়সের মানুষের মনে এক অন্যরকম অনুভূতি জাগ্রত হয়।
বছরে দুটি ঈদ ভিন্ন আমেজ নিয়ে আসে বিশ্বময় মুসলমানদের জন্য। পবিত্র রমজান মাস হলো ঈদের আগাম বার্তা। তাই সব শ্রেণির মানুষ ভিন্ন ভিন্নভাবে প্রস্তুতি নিতে থাকে রোজার ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে। শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখার ওপর নির্ভর করে পবিত্র রমজান মাস। চাঁদ দেখা নিশ্চিত হলে রোজা শুরু। এরপর শুরু হয় সিয়াম সাধনার আর সংযমের পথে চলা। রোজার একটি মাস পরম করুণাময়ের মহিমান্বিত অন্যতম একটি মাস।
প্রতি বছর আল্লার নৈকট্য লাভের আশায় সমগ্র মুসলিম জাতি অপেক্ষা করে। রোজার এ মাসটি অতিক্রমের পর উঁকি দেয় ঈদের খুশি।
কৈশরের ঈদ
সেই কিশোর বেলায় আমার কাছে ঈদের আগের রাতেই ঈদ মনে হত। কতই না আনন্দ বয়ে যেত ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। ঈদের আগের দিন রাতে শত চেষ্টা করে দু’চোখের পাতা এক করতে পারি না। কেন জানি ঘুমের ক্নান্তি শরীরে স্পর্শ করে না। বিছানায় এদিক-সেদিক গড়াগড়ি করে কখন যে মাঝ রাতের ঘণ্টা বাজে টেরই পাই না।
পরের দিন ঈদ। খুশিতে সবকিছু ওলোট-পালোট হয়ে যায়। তবুও সব কিছুতে দ্বিগুণ আনন্দের অনুভূতি ঈদকে ঘিরে। রমজান শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঈদ নিয়ে পরিকল্পনা বেড়ে যায়। এমনকি এক শ্রেণির মানুষের কর্মচাঞ্চল্য দ্বিগুণ বাড়তে থাকে। বিশেষ করে বাসা-বাড়ির চাকচিক্য করা এবং তৈরি পোশাককর্মীদের চাহিদা বাড়তে থাকে।
ছোটবেলার ঈদ ঘিরে থাকে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা যেন আনন্দের কোন কমতি নেই। এই আনন্দের মাঝে প্রাকৃতিক খুশির বার্তা বয়ে আনে। ঈদের রাতে পোশাক ঘরে রেডি রাখা এক অন্যরকম অনুভূতি।
এরপর গভীর রাতে ঘুমিয়ে ভোরে উঠে গোসল সেরে ঈদের নামাজ আদায় করা সত্যিই পরিপূর্ণ মনোতৃপ্তি চলে আসে মনে। মনে পড়ে প্রায় বিশ বছর আগে মা যখন জীবিত ছিলেন ঈদের নামজের পূর্বে মিষ্টিমুখ অর্থাৎ সেমাই খেয়ে নামাজে যাওয়া যেন একটা সামাজিক রেওয়াজ। না খেলেও জোর পূর্বক খাওয়াতেন মা।
এরপর নতুন পোশাক পরে সালামি নিতে অপেক্ষায় থাকতাম। বাবা-মাসহ আত্মীয়, পরিবার-পরিজন সবাইক সম্মান করলে টাকা হাতে তুলে দিতেন। সেই টাকা দিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে যেতাম বন্ধুদের নিয়ে। কিছু খেতাম আর নাই খেতাম চটপটি না খেলে কেন জানি একটা অপরিপূর্ণ থেকে যেত দিনটিতে।
পাড়া-মহল্লা চষে বেড়াতাম। সবার বাসায় গিয়ে সেমাই খেতে খেতে একটা সময় আর খাওয়ার কোনো রুচি থাকত না। তারপর বাসায় এসে সামান্য বিশ্রাম নিয়ে বিকেলে বের হতাম। যদি কোনো ভালো ছবি ঈদে মুক্তি দিত তবে অবশ্যই তা দেখতাম। হলে এত ধাক্কাধাক্কির পরও টিকিট সংগ্রহ করে পছন্দের সিমেমাটি দেখে নিতাম।
বিশেষ করে পুরান বাজার কোহিনূর সিনেমা, ছায়াবানী ও চিত্রলেখা। চাঁদপুরের এই তিনটি হল ছাড়াও হাজীগঞ্জ রনি সিনেমা এবং কুমিল্লায় ছবির নেশায় ছুটেঁ যেতাম। আরেক মজার বিষয় হলো তখন নদীতে গোসল করতাম। তার মজাই আলাদা। সব মিলিয়ে ছেলে বেলার ঈদ ছিল পরিপূর্ণ বিনোদনে ভরা। যা এখন শুধু স্মৃতি। তাছাড়া সেই আগের মত আনন্দ পাই না।
গত বিশটি বছর মাকে ছাড়া ঈদ কাটাচ্ছি। তাই প্রতিটি ঈদে আনন্দের লেশমাত্র খুঁজে পাই না। একটা সময় সালামি নিয়ে খুশি হতাম আর এখন সালামি দিয়ে খুশি হই। আরেকটি বিষয় গত এক যুগেরও বেশি প্রবাসে ঈদ করছি। বিদেশে অর্থের পিছুটান না থাকলেও আনন্দ উল্লাসের অনেক ঘাটতি রয়েছে যা কোনোভাবেই পূরণীয় নয়। দেশের টানে নারীর টানে মন ছুটে চলে সব সময় দেশের পানে।
তখন নিজেকে বড্ড অসহায় একা মনে হয়। এরপর ইউরোপ মধ্যপ্রাচ্যের ঈদ আকাশ পাতাল ব্যবধান। কারণ ইউরোপে তাদের নিজস্ব সংস্কৃতির বাহিরে একটি দিনও বন্ধ রাখে না। আমরা যারা মুসলিম রয়েছি ঈদের দিনে কোন ছুটি থাকে না। ফলে ঈদের নামাজটা পড়াও মুশকিল হয়ে যায়। তাই ঈদ উপলক্ষে কর্মস্থলে আগেই ছুটির জন্য বলে রাখতে হয়। নামাজ শেষে ফের কর্মস্থলে যেতে হয়। ঈদের কোনো আনন্দ অনুভূত হয় না ইউরোপে।
এদিক দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে মুসলিম দেশগুলোয় কর্মজীবী বাংলাদেশিরা কিছুটা ঈদের আনন্দ পান। সব প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকে বলেও ঈদের আমেজ বোঝা যায়। তবু সব কিছু মেনেই চলতে হয়। এগিয়ে যেতে হয় সামনের দিকে প্রবাস জীবনে। প্রবাসীদের এই কষ্ট যদি সরকার কোনো প্রকার উপলব্ধি করত তবে প্রবাসে থাকা বাংলাদেশি মিশনগুলো সঠিক দায়িত্বে পালনে আরও সচেষ্ট হতে বিশেষ নির্দেশ দিত। আমাদের ক্ষোভ আর রাগ বিভিন্ন দূতাবাসের ওপর। এত কষ্টের পরও যথাযথ সেবা প্রদান করে না দূতাবাসে কর্মরতরা।
এমআরএম/এমকেএইচ