ভিডিও EN
  1. Home/
  2. প্রবাস

২৯ মে সচিব পর্যায়ে বৈঠক, ভাগ্য বদলের আশায় ‘অবৈধরা’

আহমাদুল কবির | মালয়েশিয়া | প্রকাশিত: ০৯:৫৫ পিএম, ২৪ মে ২০১৯

আশায় প্রহর গুনছেন মালয়েশিয়ায় কর্মরত অবৈধ বাংলাদেশিরা। সংকট উত্তরণে মালয়েশিয়ায় ২৯-৩০ মে দুই দেশের সচিব পর্যায়ে বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।

একটি সূত্র জানিয়েছে, জি টু জি প্লাস প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগ শুরু হলে একপর্যায়ে সিন্ডিকেট এবং অতিরিক্ত অভিবাসন ব্যয় বৃদ্ধির কারণে মাহাথির সরকার তা স্থগিত করেন। তারা ঘোষণা দেন সমগ্র প্রক্রিয়াটি মূল্যায়ন করে একক এবং মানসম্মত প্রক্রিয়া নির্ধারণ করা হবে।

জানা গেছে, অতিরিক্ত অভিবাসন খরচ, কর্মীদের বিভ্রান্ত করা, কাজ ও বেতন সম্পর্কে ভুল ধারণা দেয়া, মধ্য পর্যায়ে দালালি ইত্যাদি বিষয় বিবেচনা করে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী মালয়েশিয়া মানব পাচার জনিত হুমকির মুখে রয়েছে। এ থেকে উত্তরণের জন্য দেশটির সরকার লেবার সোর্স কান্ট্রির সহযোগিতা চেয়েছে।

মালয়েশিয়ার মানব সম্পদমন্ত্রী কুলেসগারান বলেছেন, সহজ শর্তে কোম্পানি কর্মী প্রতিস্থাপনের সুযোগ পাবে। সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন এ সুযোগ দিলে অনেক অবৈধ কর্মী বৈধ হতে পারবেন।

Malaysia-1

এদিকে আগামী ২৯ ও ৩০ মের সচিব পর্যায়ের বৈঠককে ঘিরে সুন্দর এক আগামীর প্রত্যাশা করছেন অবৈধ কর্মীরা। বৈঠকে সহজে নিজ দেশে ফিরে যাওয়া বা বৈধ হবার সুযোগ মিলবে এমনটাই আশা তাদের।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিগত দুটি জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের সভায় মালয়েশিয়ায় অবৈধ বাংলাদেশি কর্মীদের বিষয়টি প্রাধান্য পেয়েছে।

কিন্তু সম্প্রতি দেশটির ইমিগ্রেশনের প্রধানের হুঁশিয়ারিতে অবৈধ প্রবাসীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। তিনি বলেছেন ঈদের পর বিদেশি কর্মীদের ভিসার বিষয়ে ব্যাপক তল্লাশি করা হবে। এতে যাদের ভিসা নেই তারা গ্রেফতার হবেন এবং শাস্তির আওতায় আসবেন। এতে করে বাংলাদেশি কর্মীরাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন- এমন আশঙ্কা করা হচ্ছে।

কুয়ালালামপুরে একটি কন্সট্রাকশন সাইটে কাজ করেন সিলেটের রতন মিয়া। এ অভিযানের খবর শুনে এখন আতঙ্কে আছেন উল্লেখ করে তিনি জানান,
‘বৈধতার জন্য সব রকম চেষ্টা চালিয়েছি। বৈধ পার্মিট তো হয়নি বরং উল্টো পুলিশ এখন আমাদের খুঁজছে। আমরা এখন কোথায় যাব, কী করব? আমরা চরম আতঙ্কের মধ্যে আছি।’

তিনি বলেন, ইতোমধ্যেই অবৈধ শ্রমিকদের অনেকে পালিয়ে আছেন। তবে খেয়ে-পরে বেঁচে থাকতে ঝুঁকি নিয়ে তাদের কাজে আসতেই হচ্ছে।

উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে মালয়েশিয়া সরকারের দেয়া সুযোগ ইতোমধ্যে অনেকেই কাজে লাগিয়েছেন। বাকি আনুমানিক ৫০ হাজারের মতো শ্রমিক এই সুযোগ নিতে গিয়ে প্রতারণার শিকার হয়ে এখনও অবৈধ অবস্থায় দেশটিতে রয়েছেন বলে জানিয়েছে কুয়ালালামপুরস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশন।

প্রতারিত হওয়া এবং সরল বিশ্বাসে অর্থ দিয়ে নাম লেখানোর পরও অনেকেই বৈধ হতে পারেনি উল্লেখ করে হাইকমিশন সে দেশের সরকারকে বিষয়টি ইতিবাচক দৃষ্টিতে বিবেচনার অনুরোধ করে যাচ্ছে।

Malaysia-1

অতি সম্প্রতি প্রবাসী কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী ইমরান আহমেদ মালয়েশিয়া সফরকালে সে দেশের মানবসম্পদ মন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং দেশটির ক্ষমতাসীন জোটের নেতা ও সাবেক উপ-প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এ বিষয়ে আলোচনা করেছেন। এখন উভয় দেশের বৈঠকে কতটা সুবিধা আদায় হয় সবাই সেদিকে নজর রেখেছে।

এদিকে বাংলাদেশি শ্রমিকদের সঙ্গে মধ্যস্বত্বভোগী চক্র বিরাট প্রতারণা করেছে বলে বাংলাদেশ হাইকমিশনের পক্ষ থেকে পুলিশে অভিযোগ করা হয়েছে। হাইকমিশন ওই চক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য দেশটির পুলিশ বিভাগকে অনুরোধ করেছে। এই অভিযোগের ভিত্তিতে ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজন প্রতারককে গ্রেফতারও করছে দেশটির অভিবাসন সংশ্লিষ্টরা। তবে অধিকাংশ প্রতারক মালয়েশিয়া ছেড়ে অন্য দেশ বা বাংলাদেশে বহাল তবিয়তে আছে বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে।

এশিয়ার অভিবাসীদের নিয়ে কাজ করা ক্যারাম এশিয়ার আঞ্চলিক সমন্বয়কারী হারুনুর রশিদ এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘বৈধতার জন্য কাগজপত্র নিয়ে একটি মধ্যস্বত্বভোগী গোষ্ঠীর কাছে গিয়েই বিপাকে পড়েছেন এই প্রবাসী শ্রমিকরা। দেশটিতে এখনও নানা কাজে বিদেশি শ্রমিক প্রয়োজন হয়। মালয়েশিয়া সরকার অভিবাসীদের দেশে ফেরত পাঠাতে এমন অভিযানে না নেমে বরং তাদের বৈধভাবে কাজ করার সুযোগ দিলে উভয় দেশই উপকৃত হবে।’

তিনি বলেন, অভিযানে যাদের আটক করা হবে, তাদের ১৪ দিন সময় দেয়া হবে বৈধ কাগজ হাজির করতে। তা না পারলে তাদের জায়গা হবে দেশটির ১২টি ডিটেনশন সেন্টারে। এসব ভাগ্য বিড়ম্বিত প্রবাসীর জন্য সত্যিই কষ্টকর।

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে ইমিগ্রেশনে সারেন্ডার করে প্রায় ৪-৫ হাজার রিঙ্গিত জরিমানা দিতে হচ্ছে, অপেক্ষা করতে হচ্ছে ১৪ দিন। অনেকে গ্রেফতার হচ্ছেন। রোগীদের মৃত্যুর রেকর্ডও আছে। এমন প্রক্রিয়ার কারণে অনেকে স্বেচ্ছায় সারেন্ডার করে দেশে ফিরে যেতে আগ্রহী হচ্ছে না। সরকারের উচিত সহজে দেশ ত্যাগের ব্যবস্থা করা। ‘এ ধরনের অভিযানের আগে প্রবাসী কর্মীদের মাধ্যেমে মালয়েশিয়ার উন্নয়নে অবদান রাখার বিষয়টি বিবেচনায় নেয়ার অনুরোধ জানান দেশটিতে বসবাসরত প্রবাসীরা। সবার আশা জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের উপযুক্ত সিদ্ধান্ত হবে- এমন আশায় রয়েছেন সকল প্রবাসী এবং তাদের দেশে থাকা পরিবার।

এমএমজেড/পিআর

আরও পড়ুন