পর্তুগাল হতে পারে উচ্চ শিক্ষার নতুন সম্ভাবনার দ্বার
মৌলিক অধিকারের অন্যতম হলো শিক্ষা আর বিশ্বে উচ্চ শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। সেক্ষেত্রে যদি দেশের বাহির থেকে উচ্চ শিক্ষা লাভ করা যায় তাহলে দেশে-বিদেশে ক্যারিয়ার গঠনের সুযোগ সৃষ্টি হয়। উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের অন্যতম প্রতিবন্ধকতা হলো উচ্চ মানের টিউশন ফি যা আমাদের সবার পক্ষে বহন করা সম্ভব হয় না।
সেক্ষেত্রে পর্তুগাল হতে পারে উচ্চ শিক্ষার নতুন দিগন্ত বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য। সম্প্রতি পর্তুগিজ সরকার আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য ভিসা প্রক্রিয়া ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির ক্ষেত্রে উদার নীতি প্রণয়ন করেছে। ২০১৯-২০ সালের জন্য আগের বছরের চেয়ে ২০ ভাগ বেশি অফার লেটার দেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
বিগত বছর প্রায় ১০ হাজারের কাছাকাছি অফার লেটার ইসু করা হয়েছিল আন্তর্জাতিক ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য। এ বছর আরও ২৫০০ বেশি ইস্যু করার অনুমতি প্রদান করা হয়েছে। বিগত চার বছর ধরে প্রায় ৫০ শতাংশ হারে আন্তর্জাতিক ছাত্রছাত্রী বৃদ্ধি পাচ্ছে পর্তুগালে। ২০১৭-১৮ সালে পর্তুগালে ৫০ হাজারের মতো আন্তর্জাতিক ছাত্রছাত্রী ছিল যা পর্তুগালের সর্বমোট ছাত্রছাত্রীর ৬ ভাগের ১ ভাগ।
পর্তুগাল দক্ষিণ-পশ্চিম ইউরোপের তুলনামূলক গরিব রাষ্ট্রের একটি। লিসবন পর্তুগালের রাজধানী ও বৃহত্তম শহর। ১৯৮৬ সালে ইউরোপীয় সম্প্রদায়ে (পরবর্তীকালে ইউরোপীয় ইউনিয়ন) যোগদান করে এবং ১৯৯৯ সালে মুদ্রা হিসেবে ইউরোকে গ্রহণ করে পর্তুগাল। দেশটি ২৫ শে জুন ১৯৯১ সালে সেনজেন জোন বা ভিসা মুক্ত অঞ্চলে অন্তর্ভুক্তি করে নিজেদের।
এখানকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর তাত্ত্বিক ভিত্তিক, রিসার্চ ওরিয়েন্টেড এবং ব্যবহারিক প্রশিক্ষণ পদ্ধতিতে শিক্ষা প্রদান করে। বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যাচেলর, মাস্টার এবং ডক্টরাল প্রোগ্রাম মূলত পর্তুগিজ ভাষায় পড়ানো হয়। কিন্তু কিছু কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি মাধ্যমে ব্যাচেলর, মাস্টার এবং ডক্টরাল প্রোগ্রামে পড়াশোনার সুযোগ রয়েছে।
বছরের দুটি সেশনে এখানে ভর্তি হওয়ার সুযোগ রয়েছে, সেপ্টেম্বর ও ফেব্রুয়ারি। মূলত সেপ্টেম্বর সেশনে বেশি সংখ্যক ছাত্রছাত্রী ভর্তির সুযোগ পায়। সেপ্টেম্বর সেশনের জন্য নন ইউরোপীয় শিক্ষার্থীদের আবেদনের শেষ সময় মে’র ৩০ তারিখ। কিছু কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে জুন পর্যন্ত সময় থাকে। পর্তুগিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি তথ্য ও প্রক্রিয়া এই www.bachelorsportal.eu www.mastersportal.eu লিঙ্ক থেকে আপনার পছন্দের কোর্সটি সিলেক্ট করতে পারবেন।
ইঞ্জিনিয়ারিং, মেডিসিন, ল, ফার্মাসিউটিকাল সায়েন্স, নেচারেল সায়েন্স, আইটি, ইকনোমিক্স, ব্যবস্থাপনা, হিউম্যানিটিসসহ আরও বেশকিছু ডিসিপ্লিন রয়েছে। ইউনিভার্সিটি অব কুইমব্রা সবচেয়ে পুরাতন বিশ্ববিদ্যালয় যেটি ১২৯০ সালে স্থাপিত হয়। সবচেয়ে বেশি সংখ্যক ছাত্রছাত্রী পড়াশোনা করে ইউনিভার্সিটি অব পোর্তোতে।
লিসবন বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮টি অনুষদের মধ্যে বেশ কয়েকটিতে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা মাস্টার্স ও পিএইচডিতে পড়ছেন। আরও রয়েছে নোভা বিশ্ববিদ্যালয় যেটিকে পর্তুগালের সর্বাধুনিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে বিবেচনা করা হয়। লিসবনের বাইরে রয়েছে আলগ্রাভ বিশ্ববিদ্যালয়, এভোরা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বেশ কিছু প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় যেখানে বর্তমানে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বাংলাদেশিসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছেন।
পর্তুগালে আবেদন করার পূর্বে আপনাকে কিছু বিষয় বিবেচনা করতে হবে। আগেই উল্লেখ করেছি পর্তুগাল ইউরোপের তুলনামূলক অনুন্নত দেশগুলোর একটি। যদিও অফিশিয়াল নিয়ম হলো সপ্তাহে ২০ ঘণ্টা কাজ করা যাবে কিন্তু শিক্ষার্থীরা চাইলে ফুল টাইম কাজও করতে পারে কিছু শর্ত পূরণ করে।
এখানে কাজ পাওয়া একটু দূরহ ব্যাপার। কারণ প্রচুরসংখ্যক অভিবাসী প্রতি বছর ভিড় জমায় এখানে বৈধ কাগজপত্র পাওয়ার আশায়। তাছাড়া ন্যূনতম বেতনও অনেক কম, মাত্র ৬০০ ইউরো বর্তমানে।
পড়াশোনা করার জন্য পর্তুগালকে কেন বেছে নেবেন? পর্তুগালের শিক্ষা ব্যবস্থা যথেষ্ট উন্নতমানের এবং এর ডিগ্রি আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য। এখানে টিউশন ফি ইউরোপের অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক কম। বছরে ১২০০- ৩০০০ হাজার ইউরো। সব মিলিয়ে একজন মানুষের মাসিক খরচ ৩০০/৪০০ ইউরোর মতো আনুমানিক।
অনেকই আছেন যারা আইইএলটিএস দিতে ভয় পান অথবা আইইএলটিএস পরীক্ষায় স্কোর কম পেয়েছেন, তাদের জন্য সুসংবাদ পর্তুগিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যাচেলর বা মাস্টার প্রোগ্রামে আপনি আইইএলটিএস ছাড়া এবং কোনরূপ ফাউন্ডেশন কোর্স ছাড়াই ভর্তি হতে পারেন। তাছাড়া বর্তমানে ৫ বছরের মাথায় পর্তুগালের নাগরিকত্ব দিচ্ছে যা পূর্বে ছিল ৬ বছর।
সার্বিক বিবেচনায় পর্তুগাল হতে পারে বর্তমান সময়ে উচ্চ শিক্ষা প্রত্যাশীদের অন্যতম সেরা পছন্দ। যদিও ভিসা আবেদন ও সাক্ষাৎকারের জন্য ইন্ডিয়া যেতে হয়, বর্তমানে বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশি শিক্ষার্থী ভিসা নিয়ে পর্তুগাল আসছেন। নয়া দিল্লিতে অবস্থিত পর্তুগিজ অ্যামব্যাসি এখন আগের চেয়ে বেশি সংখ্যক ভিসা ইস্যু করছে। যাদের ইংরেজিতে কমিউনিকেশনে ভালো দক্ষতা আছে তাদের ভিসা পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি।
এমআরএম/জেআইএম