২৫শে এপ্রিল পর্তুগালের আনন্দের দিন
হাতে ক্রাভো ফুল। শিশু থেকে তরুণ, বৃদ্ধ সবার মুখে একই স্লোগান, মুক্তির স্লোগান, আনন্দের স্লোগান। এদিন যেমনটা স্বৈরাচার মুক্তির আর পরাধীন জীবনের লাভের আনন্দ তেমনি পরাধীনতার পরও রয়ে যাওয়া নানা অসঙ্গতির বিরুদ্ধে রাস্তায় এসে আওয়াজ তোলার দিন। ২৫শে এপ্রিল পর্তুগালের আনন্দের দিন। পর্তুগালের স্বাধীনতা, গণতন্ত্র লাভের দিন। তাই এদিন পর্তুগিজদের অন্যতম জাতীয় উদযাপনের দিন।
প্রতি বছর ২৫শে এপ্রিল এই দিনে দিবসটি উদযাপনে লিসবনের মার্কেশ পম্বাল চত্বর থেকে একটি আনন্দ র্যালি প্রথাগতভাবে অনুষ্ঠিত হয়। সমবেত হয় সমাজের সব শ্রেণি পেশার মানুষ। ২৫ শে এপ্রিল মার্কেশ পম্বাল চত্বর থেকে শুরু হয়ে ঐতিহাসিক এভিনিধা দ্য লিবরেদাদ সড়ক প্রদক্ষিণ করে রোসিও চত্বরে জড়ো হয়ে সমাবেশের মাধ্যমে আনন্দ র্যালিটি শেষ হয়।
২৫শে এপ্রিল পর্তুগালের গণতন্ত্র দিবস (দিয়া দ্য লিবরেদাদ) অথবা কার্নেশন বিপ্লব নামেও পরিচিত। ১৯৭৪ সালের ২৫শে এপ্রিল এই দিনে লিসবনে সেনা অভ্যুত্থান হয় যা কর্তৃত্ববাদী এস্তাদো নভো শাসনকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করেছিল।
পর্তুগিজ মুভিটিও দাস ফোরাস আর্মাদাস, এমএফএ দ্বারা সংগঠিত সেই অভ্যুত্থান শিগগিরই একটি অবিচ্ছিন্ন, জনপ্রিয় নাগরিক প্রতিরোধ আন্দোলনে রূপ পায়। সংযুক্ত হয় সাধারণ সব শ্রেণি পেশার মানুষ। ‘বিপ্লব এস্তাদো নভো’ পর্তুগালের কর্তৃত্ববাদী শাসনের ৪৮ বছর শেষ এবং পর্তুগালের সব ঔপনিবেশিক আফ্রিকান দেশগুলো থেকে সৈন্য প্রত্যাহারের মাধ্যমে ঔপনিবেশিক বিশেষ শাসনের অবসান ঘটে এদিন।
নাগরিক স্বাধীনতা, রাজনৈতিক স্বাধীনতা, নারী অধিকার, ঔপনিবেশিক বিরোধ, সামরিক ব্যয় কমানো, আন্তর্জাতিক বিচ্ছিন্নতা এবং বাক-স্বাধীনতা দমনের প্রতিবাদে তৎকালীন সেই আন্দোলন গড়ে উঠেছিল। সেই সঙ্গে গণতন্ত্র ও বেসামরিক শাসনের প্রতিষ্ঠা এবং ঔপনিবেশিক দেশ অ্যাঙ্গোলা, কেপ ভার্দে, গিনি বিসাউ, মোজাম্বিক এবং সাও তমে ই প্রিন্সিপে এই দেশগুলোকে স্বাধীনতা প্রদানের দাবি করা হয়েছিল।
তাই প্রতি বছর এইদিনে রাজপথে তরুণদের স্লোগানে উঠে আসে সাম্য, সমতা, স্বাধীনতা আর অধিকারের কথা। কর্মজীবী মানুষেরা এদিন রাস্তায় আসেন তাদের দাবিগুলো নিয়ে। স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত থাকে শহর। জনপ্রিয় স্লোগানের মধ্য থাকে ‘এপ্রিল সব সময়’ ‘এপ্রিল এখনো রাস্তায়’ ‘আমাদের আন্দোলন চলমান।’
এদিনে ক্রাভো ফুল সবার হাতে শোভা পায়। সংগ্রামের সেই সময় থেকে এই ফুল দিবসটি উদযাপনের ঐতিহ্য বহন করে। এই ফুলকে দিনটি উদযাপনের অনন্য একটি সংযোজন হিসেবে বিবেচনা করা হয়। দিবসটির উদযাপনের সঙ্গে তাই মিশে আছে ক্রাভো ফুল। শিশু বৃদ্ধ সবার হাতে ক্রাভো ফুল তরুণীদের খোঁপায়ও শোভা পায়।
বিশেষ করে নারীরা সমবেত কণ্ঠে সেই সময়টির কথা স্লোগানে প্রতিবাদ স্বরূপ তুলে আনেন। তাদের সেই সময়ে হরণ হওয়া অধিকারের কথা। মেয়েরা সে সময়ে অনুমতি ছাড়া বাইরে যেতে পারত না। বাইরে কাজ করতে পারতো না।
র্যালিতে অংশ নেয়া এক পর্তুগিজ নারী সোনিয়া সওজা বলেন, ‘এই দিনটি আমাদের অধিকার আদায়ের দিন, এই দিনটি ইতিহাসকে মনে করার দিন। এই দিনে সেই কালো অধ্যায়কে মনে করিয়ে দেয়ার একটিই কারণ। এমন দিনগুলো যেন কখনো আমাদের জাতীয় জীবনে ফিরে না আসে। কারণ মানুষ ভুলে যায় অতীতের কথা। তাই ইতিহাসের স্মরণের মাধ্যমে আমরা তরুণদের নতুন অনুপ্রেরণা দিতে পারি।’
এদিন অভিবাসীদেরও আন্দোলনে দেখা যায়। পর্তুগালে অভিবাসীদের জন্য কাজ করা সংগঠন সলিদারিটি ইমিগ্রেন্টস এদিন র্যালিতে অংশগ্রহণ করে। সেই সঙ্গে যোগ দেয় বাংলাদেশসহ বিভিন্ন অভিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষেরা। এ ছাড়াও রাস্তায় র্যালিতে অংশগ্রহণ করে প্রায় শতাধিক সংগঠন।
২৫ এপ্রিল পর্তুগিজদের জাতীয় জীবনে একটি অনন্য দিন। ২৫ এপ্রিল আনন্দের দিন, উদযাপনের দিন। পর্তুগিজদের এদিনের স্লোগান তাই ‘২৫ শে এপ্রিল সবসময়, আর কোনো অপশাসন নয়’।
এমআরএম/এমএস