ব্রিটিশ মন্ত্রীদের মুখে বাংলাদেশের ভূয়সী প্রশংসা
ব্রিটিশ পার্লামেন্টে হাউস অব কমন্সে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের উদ্যোগে আয়োজিত ৪৮তম মহান স্বাধীনতা দিবসে উপস্থিত হয়ে ব্রিটিশ পার্লামেন্টারিয়ানরা বাংলাদেশের অগ্রযাত্রার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন।
অনুষ্ঠানে ব্রিটিশ এমপি-মন্ত্রীরা বলেন, ‘বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে মানবাধিকার বাস্তবায়ন আন্দোলনের মধ্য দিয়ে যে রাষ্ট্রটির জন্ম, সেটি আজ বিশ্ব সভায় একটি মানবিক রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃত। নারীর ক্ষমতায়ন, সন্ত্রাস দমন, উন্নয়নের ধারাবাহিকতা ও রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশে সরকারের ভূমিকার কারণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ বিশ্ব নেতায় পরিণত হয়েছেন।’
যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ ফারুক ও কাউন্সিলর সৈয়দা সায়মা আহমেদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানের শুরুতেই বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত বেজে ওঠলে ব্রিটিশ এমপিরাসহ সবাই দাঁড়িয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সভাপতি সুলতান শরীফ। অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম ও ব্রিটেনে বাংলাদেশের হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনিম।
পার্লামেন্টে ব্রেক্সিট বিতর্কের ফাঁকে ফাঁকে টেমস তীরের টেরেজ প্যাভেলিয়নে বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে এসে শুভেচ্ছা জানান ব্রিটিশ এমপি ও মন্ত্রীরা। তাদের অনেকের কণ্ঠেই জয়বাংলা স্লোগান লক্ষ্য করা যায়। এ সময় বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধায় ছিল তাদের নত মস্তক।
রোহিঙ্গাদের মানবিক দুর্যোগে বাংলাদেশের পাশে দাঁড়ানোর ভূয়সী প্রশংসা করে তারা বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্ব বিশ্ব সভায় দেশটিকে একটি শ্রদ্ধার আসন এনে দিয়েছে। কক্সবাজারের মতো একটি জনবহুল এলাকার মানুষ নিজেদের কষ্ট অগ্রাহ্য করে লাখ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দিতে সরকারকে সহযোগিতার মাধ্যমে প্রমাণ করেছেন বাংলাদেশ মানবিক রাষ্ট্র, এই ভূখণ্ডের মানুষ মানবিক চেতনায় সমৃদ্ধ।’
তারা বলেন, ‘জন্মের পর বিগত ৪৭ বছরে বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে গেছে, এমন মন্তব্য করে এমপিদের অনেকেই বলেন, ‘বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর দূরদর্শী নেতৃত্ব যে রাষ্ট্রটির জন্ম দিয়েছিল তা আজ বিশ্ব সভায় সমাদৃত। বাংলাদেশে গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে এমন প্রত্যাশা করে দেশটির চলমান গণতন্ত্র আরও সমৃদ্ধ হবে বলে আশাবাদ প্রকাশ করেন তারা।’
অনুষ্ঠানে ব্রিটেন-বাংলাদেশের পারস্পরিক সম্পর্ক ঐতিহাসিক বলে মন্তব্য করেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। তিনি বলেন, ‘আজ থেকে ৪৮বছর আগে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ব্রিটিশ জনগণ ও পার্লামেন্টের এমপিদের দৃঢ় সমর্থন আমাদের ইতিহাসের অংশ। সম্প্রতি রোহিঙ্গা সমস্যা মোকাবেলায় বাংলাদেশ কঠিন সময় পার করছে।’
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘স্মরণকালের ভয়াবহতম এই মানবিক বিপর্যয় বাংলাদেশের একক কোনো সমস্যা নয়, এটি আন্তর্জাতিক সমস্যা। নিজেদের অনেক সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও বাস্তুহারা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশের জনগণ বিশ্বব্যাপী মানবিকতার উন্মেষ ঘটার সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পেয়েছেন ‘মাদার অব হিউম্যানিটি’র সম্মান।’
‘রোহিঙ্গাদের নিজ ভূমিতে ফিরে যাওয়ার কোনো বিকল্প নেই, এমন মন্তব্য করে শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘‘এ বিষয়ে মিয়ানমার সরকারকে বাধ্য করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রাদায়ের চাপ অব্যাহত রাখা খুবই জরুরি।’’ তিনি এ বিষয়ে ব্রিটিশ সরকার ও এমপিদের কার্যকর ভূমিকা কামনা করেন।’
অনুষ্ঠানে কনজারভেটিভ দলের ক্রস পার্টি গ্রুপের প্যানেল চেয়ার অ্যান মেইন এমপি, কনজারভেটিভ দলীয় এমপি পল স্ক্যালি, লেবার দলের জিম ফিটজপ্যাট্রিক এমপি, শ্যাডো সেক্রেটারি অব স্ট্যাট ফর ওম্যান অ্যান্ড ইক্যুয়ালিটিস ডন বাটলারএমপি, ইপসউইচের সাংসদ ও হাই স্পিড রেল বিল সিলেক্ট কমিটির সদস্য স্যান্ডি মার্টিন এমপি, হেলথ অ্যান্ড সোশ্যাল কেয়ারের শ্যাডো মিনিস্টার জুলি কুপার এমপি, জনাথান অ্যাশফোর্ড এমপি, সীমা মালহোত্রা এমপি, হোম অফিস শ্যাডো মিনিস্টার আফজাল খানএমপিসহ প্রায় ৩৪ জন ব্রিটিশ এমপি বক্তব্য দেন।
অধিকাংশ এমপিই বক্তব্যের শুরুতে বাংলায় শুভেচ্ছা জানান ও বক্তব্য শেষে জয়বাংলা বলেন। এমপিরা তাদের বক্তব্যে, বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ইস্যুতে বাংলাদেশের ইতিবাচক ভূমিকার কথা উল্লেখ করে দেশটির বর্তমান সরকারের ভূয়সী প্রশংসা করেন। তারা ব্রিটেনের বাংলাদেশি কমিউনিটিরও ভূয়সী প্রশংসা করেন।
বলেন, ‘মাল্টিকালচারেল ব্রিটিশ সোসাইটিতে বাংলাদেশি কমিউনিটির অবস্থান আজ খুবই সমৃদ্ধ। রাজনীতি, শিক্ষা, সমাজ সেবাসহ ব্রিটেনের বিভিন্ন সেক্টরের উচ্চ পর্যায়ে ব্রিটিশ-বাংলাদেশিদের অবস্থান আজ চোখে পড়ার মত।
এমপিদের বক্তব্যের ফাঁকে ফাঁকে স্থানীয় শিল্পীদের উপস্থাপনায় পরিবেশিত হয় নৃত্যানুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমেদ কন্যা মাহজাবিন মিমি ছাড়াও যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের বিভিন্ন জোনের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
ফিরোজ আহম্মেদ (বিপুল), লন্ডন
এমআরএম/এমএস