মালয়েশিয়ার ক্যামেরুন হাইল্যান্ড যেন এক স্বর্গপুরী
মালয়েশিয়া দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একটি অন্যতম দেশ। অনুকূল পর্যটন ব্যবস্থার কারণে দেশটিতে প্রতি বছর প্রচুর পর্যটক আসেন। বিশেষ করে এশিয়ার নিকটবর্তী দেশগুলো থেকে এসে পর্যটকেরা ভিড় জমান। ক্যামেরুন হাইল্যান্ড এ দেশের পাহাং রাজ্যের একটি জেলা।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর স্বাস্থ্যকর আবহাওয়ার কারণেই সারা বছর এই শহরে ট্যুরিস্টদের আসা-যাওয়া লেগেই থাকে। কুয়ালালামপুর-এর উত্তর-পশ্চিমে প্রায় ২০০ কি. মি. দূরে অবস্থিত এই শহর। ভূতত্ত্ববিদ উইলিয়াম ক্যামেরুন যিনি পাহাং রাজ্যের ম্যাপ তৈরি করেছিলেন। তার নামেই এই শহরের নাম ক্যামেরুন হাইল্যান্ড। এখানে তিনটি উপজেলা রয়েছে তানা রাতাহ, রিংলেট এবং উলু তেলম।
ট্রপিকাল রেইনফরেস্ট আবহাওয়ার অন্তর্গত এই উঁচুভূমি। সারা বছর ৮ থেকে ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকে এই শহরে। তবে রাতের বেলায় শীতের মাত্রা অনেক বেশি। মালয়েশিয়ায় শীতের কোনো মৌসুম নেই। এই কারণে শীতকালীন সব ফসলাদির বেশিরভাগই এই অঞ্চল থেকে আসে। পুরো অঞ্চলটি যেন ফসল, ফুল, ফল, বনানী দিয়ে এক স্বপ্নপুরীর মতো।
ট্যুরিস্টদের আকর্ষণের মূল দিকগুলো হলো- এখানে ফল-ফুল এবং ফসলাদী আবাদ করা খুব কাছ থেকে দেখতে পাওয়া যায়। এগ্রো ফার্মগুলোতে ট্যুরিস্টদের জন্য যাওয়ার ব্যবস্থা করা রয়েছে। এই ফার্মগুলো ট্যুরিস্ট জোন হিসেবেই ধরা হয়। সেখানে উন্নতমানের কৃষি টেকনোলজি এবং নানা ধরনের ফুলের বাগান রয়েছে।
রয়েছে বিচিত্র ধরনের ক্যাকটাস এবং অনেক গাছের বীজ। আরও রয়েছে আপেল, কমলা, স্ট্রবেরি, পেয়ারা, এবং আঙ্গুরের বাগান। গাছ থেকে ছিঁড়েই স্ট্রবেরি মুখে দেয়ার সৌভাগ্য কয়জনের রয়েছে। শাক-সবজির মধ্যে সবচেয়ে বেশি উৎপন্ন হয় ব্রকোলি, ক্যাপসিকাম, চাইনিজ বেগুন, ফুলকপি, পাতাকপি, বাঁধাকপি, লেটুস, টমেটো ইত্যাদি। নিজের চারপাশের সবকিছুই মনে হবে স্বাস্থ্যসম্মত। ঠাণ্ডা বাতাস নেই, নেই কোনো ধুলাবালি।
ট্যুরিস্ট জোনগুলো বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে রয়েছে। তার মধ্যে সবচেয়ে আকর্ষণীয় হচ্ছে স্ট্রবেরি ফার্ম, বি ফার্ম, বাটারফ্লাই ফার্ম, ল্যাভেন্ডার গার্ডেন এবং বোহ টি প্লান্টেশন। বি ফার্মে মৌমাছির কৃত্রিম বাসা করানো হয়। সেখানে খাঁটি মধু চাক থেকে নিয়ে আসা হয়। পছন্দ মতো মধু সংগ্রহ করে নিয়ে আসা যায়।
ল্যাভেন্ডার গার্ডেন এশিয়াতে সচরাচর দেখতে পাওয়া যায় না। অসাধারণ এই স্বর্গীয় রঙের ফুলের বাগানে কে না একটি সেলফি তুলতে চায়। সবচেয়ে ভিড় বেশি যেখানে হয় সেটি হচ্ছে বোহ টি প্লান্টেশন। আমাদের দেশের সিলেটের চা বাগানের মতো। নানা ধরনের চা পাওয়া যায়। আইসটি তার মধ্যে অন্যতম। পর্যটকরা শুধু চাপাতির কেনাতেই ব্যস্ত থাকে না, সেখানে তারা চা বাগানের ভেতরে চলাচল করতে পারে।
পর্যটকরা তানাহ রাতাহতেই বেশি থাকতে ইচ্ছুক কারণ এইটি ক্যামেরুন হাইল্যান্ডের মধ্যস্থান। এইখান থেকে সব ট্যুরিস্ট জোনগুলোতে যাতায়াত খুবই সহজ। এখানে কোনো এয়ারপোর্ট নেই। পাহাড়ি অঞ্চল দেখে নেই কোনো ট্রেন ব্যবস্থা। তাই বাসই একমাত্র যানবাহন। অথবা গাড়ি ভাড়া করে যাওয়া যেতে পারে।
ইন্টারন্যাশনাল লাইসেন্স থাকলে গাড়ি নিয়ে যাওয়াই সবচেয়ে উত্তম ব্যবস্থা। তবে ক্যাম্রুন হাইল্যান্ডের ভেতরে ঘুরতে হলে খুব ভোরে বের হয়ে যেতে হবে। কারণ সকাল ৯টার পর শহর থেকে বাসগুলো আসে এবং একই সময়ে সবাই ঘুরতে বের হয়। তাই রাস্তায় জ্যাম থাকতে পারে। মালয়েশিয়ায় শুধুমাত্র ক্যামেরুন হাইল্যান্ডের এই রাস্তায়ই সবচেয়ে বেশি জ্যাম দেখা যায়।
কারণ, প্রচুর পরিমাণে পর্যটক। যারা হানিমুন করতে মালয়েশিয়ায় আসতে চায় তাদের জন্য ক্যামেরুন হাইল্যান্ড এক স্বর্গপুরী। উঁচু পাহাড়ের এই সবুজ বনানীর গভীর অরণ্যে একবার পৌঁছলে আর ফিরে আসতে কারই বা মনে চায়।
অতিথি লেখক: তারেক মাহমুদ, মালয়েশিয়ার মাল্টিমিডিয়া ইউনিভার্সিটিতে অধ্যয়নরত বাংলাদেশি শিক্ষার্থী।
এমআরএম/জেআইএম