ভিডিও EN
  1. Home/
  2. প্রবাস

বিশ্বব্যাপী প্রবাস চিত্র ও বাংলাদেশিদের অবদান

প্রবাস ডেস্ক | প্রকাশিত: ০৫:৫২ পিএম, ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

অক্সফোর্ড ডিকশনারিতে প্রবাসী/অভিবাসী শব্দের অর্থ করা হয়েছে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় স্থানান্তর হওয়া। এক দেশ থেকে অন্য দেশে যাওয়া। অভিবাসীর সংজ্ঞায় জাতিসংঘের অধীনে পরিচালিত বিশ্ব মাইগ্রেশন রিপোর্ট বলা হয়েছে, ‘প্রবাসী হলো সে ব্যক্তি, যে নিজ দেশ থেকে অন্য দেশে পাড়ি জমাই।’

এই সংজ্ঞায় শর্টটার্ম ও লংটার্ম ২ ক্যাটাগরিতে প্রবাসীকে ভাগ করা হয়। যারা ৩ মাস বা তার বেশি অবস্থান করে কিন্তু এক বছরের বেশি অবস্থান করে না তারা শর্টটার্ম। আর যারা এক বছরের বেশি অবস্থান তারা লংটার্ম প্রবাসী।

মানুষ তার প্রয়োজনে এক স্থান থেকে আরেক স্থান, এক দেশে থেকে আরেক দেশে পাড়ি জমিয়েছে। বিশ্বব্যাপী অভিবাসীদের প্রধানত ২টি ভাগে করা হয়েছে। প্রথমটি হচ্ছে স্বেচ্ছায় প্রবাস জীবনে যাওয়া, সেটা হতে পারে অর্থনৈতিক কারণে, পেশাগত কারণে, ভ্রমণজনিত কারণে, পড়ালেখার উদ্দেশ্যে, কোনো ইভেন্টে অংশ নিতে ইত্যাদি।

দ্বিতীয়টি হচ্ছে বাধ্য হয়ে প্রবাসী হওয়া, যেমন যুদ্ধের কারণে, রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে, দুর্ভিক্ষজনিত কারণে, জাতিগত, সংখ্যালঘু বা ধর্মীয় ব্যাপারে নির্যাতনের কারণে প্রভৃতি।

২০১৮ সালের জাতিসংঘের আওতাধীন ওয়ার্ল্ড মাইগ্রেশন রিপোর্ট অনুযায়ী ২৪৪ মিলিয়ন মানুষ পুরো বিশ্বে প্রবাস জীবন-যাপন করে, যা বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ৩.৩ শতাংশ। এশিয়া এবং ইউরোপে সবচেয়ে বেশি প্রবাসী ২০১৫ রিপোর্ট অনুসারে ৭৫ মিলিয়ন যা মোট হিসাবের ৬২ শতাংশ। প্রবাসী কর্মী আছে ১৫০.৩ মিলিয়ন। ৩৪.৪ মিলিয়ন মধ্য আয়ের দেশে এবং ২ শতাংশ নিম্ন আয়ের দেশে।

জাতিসংঘের আওতাধীন প্রতিষ্ঠান ইউএনএইচসিআর-এর তথ্য মতে, ৬৮.৫ মিলিয়ন বিশ্বব্যাপী শরণার্থী আছে। এর মধ্যে রাজনৈতিক আশ্রই প্রার্থী আছে ৩.১ মিলিয়ন। শুধুমাত্র তুরস্কে আছে প্রায় ৩.৬ মিলিয়ন। জার্মানিতে সিরীয় আছে প্রায় ৬ লাখ। অন্যান্য দেশের আছে ২ হাজার।

বাংলাদেশি প্রবাসী কত সে বিষয়ে ভিন্ন ভিন্ন তথ্য রয়েছে। সমকালে প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হয়েছে ৭০ লাখ। বস্তুত এই সংখ্যা প্রায় এক কোটি, যা সরকারি তথ্যমতে, ১৫৯টি দেশে অবস্থান করছে। সবচেয়ে বেশি প্রবাসী বাংলাদেশি রয়েছে মধ্যপ্রাচ্যে। উইকিপিডিয়ার তথ্য মতে, প্রায় ২৮ লাখ রয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে।

এর মধ্যে সৌদি প্রায় ১২ লাখ, কোনো কোনো পত্রিকায় এসেছে ২০ লাখ অবৈধ অবস্থানকারীসহ আরব আমিরাতে ৭-৮ লাখ। ২০১৬ পর্যন্ত কুয়েতে ৫ লাখ ৫ হাজার ৪৭ বিএএমইটি তথ্য মতে। এ ছাড়া বাহরাইন ও কাতারেও উল্লেখযোগ্য প্রবাসী অবস্থান করছে।

যুক্তরাষ্ট্রেও বিভিন্ন স্টেটে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ প্রবাসী বাংলাদেশি রয়েছে। মোট ১৫৯ দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে প্রায় এক কোটি বাংলাদেশি প্রবাস জীবন-যাপন করছে।

প্রবাসীরা বিভিন্নভাবে দেশের প্রতিটি কর্মকাণ্ডে অবদান রেখে চলেছে- শিক্ষা, সাহিত্যে। যেমন বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান করা, প্রবাসে থেকেও সাহিত্য চর্চা করা। উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে যেমন ব্যবসা বাণিজ্য গড়ে তোলা, কল-কারখানা প্রতিষ্ঠা করা আমদানি রফতানি করে বাণিজ্যের পরিধি বৃদ্ধি করে অর্থনীতির চাকা সচল রাখা দেশে বিনিয়োগের মাধ্যমে প্রভৃতি।

সবচেয়ে বেশি যেই সেক্টরে অবদান রাখে তা হলো রেমিটেন্সে। গত বছরে বিডি নিউজ-এর তথ্যমতে, ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরের রেমিটেন্স ছিল প্রথম সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) প্রায় ৯.০৮ বিলিয়ন ডলার। ২০১৭-২০১৮ সালে রেমিটেন্স এসেছে ৮.৩১ বিলিয়ন ডলার।

জিডিপিতে রেমিটেন্সের অবদান ১২ শতাংশ।

জাতিসংঘের অধীনে পরিচালিত বিশ্ব অভিবাসী রিপোর্ট ২০১৫ অনুযায়ী, বাংলাদেশ ৯তম রেমিটেন্স গ্রহণকারী দেশ। প্রথম আলোর একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরে প্রবাসী আয়ে প্রবৃদ্ধির হার ছিল ২১.৮৫ শতাংশ যা দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বোচ্চ। প্রবাসী বাংলাদেশিরা দেশের পাশাপাশি বিদেশেও অবদান রাখছে।

ব্রিটিশ সংসদে ৩ বাংলাদেশি এমপিসহ অসংখ্য প্রবাসী বিভিন্ন সেক্টরে সফল। বলা যায়, নিজ দেশ ও অবস্থানরত দুই দেশের অর্থনীতিতেই প্রবাসীরা অবদান রেখে চলছে। বিভিন্ন সময়ে প্রবাসীদের সমস্যা দেখা গেছে। যেমন প্রবাসে মৃত্যুর হার বাড়ছে। তার অন্যতম কারণ একই রুমে গাদাগাদি অবস্থান করাসহ অনিরাপদ আবাসন ইত্যাদি।

দিনে দিনে প্রবাসে বেড়ে চলেছে নারী নির্যাতন। বিশেষ করে সৌদি আরবে গৃহকর্মী নির্যাতনের মাত্রা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। টিআইবির হিসাব মতে, ২০১৮ সালের জুন মাসেই নির্যাতিত নারী দেশে ফিরেছে ১২০ জন। এর আগের ৬ মাসে ২৬০ জন। এ ছাড়াও বিমানবন্দরে হয়রানি, ভিসা নিয়ে প্রতারক চক্রের প্রতারণা প্রভৃতি।

এসব সমস্যা বিবেচনায় নিয়ে সরকারের উচিৎ প্রবাসীবান্ধব নীতি প্রণয়ন ও সেগুলোর বাস্তবায়ন, যাতে প্রবাসীরা জাতীয় উন্নয়নে অবদানকে আরো ত্বরান্বিত করতে পারেন।

অতিথি লেখক- আবদুস শাকুর, শারজাহ আরব আমিরাত

এমআরএম/জেআইএম

আরও পড়ুন