‘নিয়ম মানতে গিয়েই আজ আমার এই দশা’
ফারিদ হাসান বছর কুড়ি আগে জার্মানিতে আসেন। নিজের আর্থিক টানাপোড়েন সত্ত্বেও যুদ্ধের সময় সিরিয়া থেকে নিজ দায়িত্বে পিতা ও দুই ভাইকে এখানে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করেন।
কথা ছিল রাজনৈতিক আশ্রয় পাওয়া পর্যন্ত জার্মানিতে আসা শরণার্থীদের খরচ দেবেন সরকার। কিন্তু রাজনৈতিক আশ্রয়ের অনুমতি পেলেও জার্মানিতে আইনি জটিলতার কারণে মোটা অঙ্কের বিল পরিশোধ করতে হচ্ছে পৃষ্ঠপোষকদের।
ক্রিস্টিয়ানের মতো তিনি পেয়েছেন একটি চিঠি। কিন্তু তাতে টাকার অঙ্ক দেখে ঘাবড়ে গেছেন হাসান। বর্তমানে ২ হাজার ইউরো প্রতিমাসে রোজগার করা হাসানের ওপর বর্তেছে ৮৫ হাজার ইউরো মেটানোর দায়।
‘অন্যদের মতো আমার পরিবারও যদি চোরাপথে জার্মানিতে আসতো, তাহলে কিছু হতো না। আইন মেনে চলতে গিয়েই আমার এই দশা।’, জানান হতাশ হাসান।
বন শহরের আইনজীবী লোথার মাহলবের্গ ক্রিস্টিয়ানের মতো পৃষ্ঠপোষকদের পক্ষে আদালতে লড়েন। তার মতে, ‘নিজেদের আর্থিক ঝুঁকির মধ্যে রেখেও এই মানুষেরা যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের মানুষের পাশে দাঁড়াতে চেয়েছেন। বিপজ্জনক বা বেআইনি পথের বদলে আইনসম্মতভাবে শরণার্থীদের জার্মানিতে আনতে চাইলেও সরকার এদের সাহায্যের বদলে আরো জটিলতায় ফেলছে।’
বউয়ের বারণ সত্ত্বেও ক্রিস্টিয়ান ওস্টারহাউস এক সিরীয় শিশু ও নাবালিকার খরচের দায়িত্ব নেন। এ বিষয়ে বিদেশ মন্ত্রণালয়ও তাকে উৎসাহিত করে। অবৈধভাবে জার্মানিতে আসার বদলে দু’জনকে বৈধভাবে জার্মানিতে এসে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করবার সুযোগ করে দিয়েছেন ক্রিস্টিয়ান। কিন্তু তিনি জানতেন না, তার খরচের ভার শুধুমাত্র এই দুই সিরীয়র আশ্রয় গৃহীত হওয়াতেই শেষ হবে না।
‘এই দু’জনের জন্য আমরা বিমান ও বাসার ভাড়া দিয়েছি। সঙ্গে কিছু টাকাও দিয়েছি যাতে তারা খেয়ে-পরে বাঁচতে পারেন বলেন ক্রিস্টিয়ান’
ক্রিস্টিয়ানের মতোই জার্মানির বন শহরে রয়েছেন এ রকম ৪৫০ জন পৃষ্ঠপোষক। কিন্তু বেশ কয়েক মাস ধরে জার্মানির প্রায় সাত হাজার পৃষ্ঠপোষক স্থানীয় কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে পাচ্ছেন অবাক করা চিঠি।
গত জুন মাসে দুই সিরীয় শরণার্থীর খরচ বাবদ ক্রিস্টিয়ানের জন্য এসেছে ৭ হাজার ২৩৯ ইউরোর (প্রায় সাত লাখ বাংলাদেশি টাকা) বিল। বলা হচ্ছে, সিরীয় শিশু ও নাবালিকা কন্যাটি জার্মানিতে রাজনৈতিক আশ্রয় পেলেও এই অঙ্ক মেটাতে হবে খ্রিস্টিয়ানকেই।
২০১৬ সালের পরিবর্তিত আইন অনুসারে, শরণার্থীর রাজনৈতিক আশ্রয় প্রাপ্তি হলেও পৃষ্ঠপোষকের ওপর থেকে আর্থিক দায়িত্বের ভার সরে না। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এই দায়িত্ব বইতে হয় তিন বা পাঁচ বছর ধরেও।
২০১৮ সালের এপ্রিলে জার্মানির শ্রম ও সমাজব্যবস্থা মন্ত্রণালয় ঘোষণা দেয় যে, এই বিষয়ে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে না পৌঁছানো পর্যন্ত পৃষ্ঠপোষকদের কোনো টাকা সরকারকে দিতে হবে না। তবুও ক্রিস্টিয়ানের কাছে একের পর এক চিঠি আসতে থাকে।
সূত্র: ডিডাব্লিউ/এমআরএম/এমএস