যুক্তরাষ্ট্রে কবি আবদুর রশীদ খানের দাফন সম্পন্ন
বাংলা একাডেমির সাহিত্য পুরস্কারপ্রাপ্ত সত্তর দশকের অন্যতম কবি আবদুর রশীদ খানের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় ২ ফেব্রুয়ারি শনিবার বিকেলে কানেকটিকাট অঙ্গরাজ্যের ইনফিল্ড মুসলিম কবরস্থানে দাফন করা হয়।
শুক্রবার সন্ধ্যায় ম্যানচেস্টার মেমোরিয়াল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৯৩ বছর। ওইদিন বিকেলে হঠাৎ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে দ্রুত অ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
হাসপাতালে নানা ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন। কবি আবদুর রশীদ খানের একমাত্র ছেলে ম্যানচেস্টার প্রবাসী মুনিম খান জানান, বাবা দীর্ঘদিন ধরে নানা ব্যথাজনিত রোগে ভুগছিলেন। প্রায়ই কোমরের ব্যথার কথা বলতেন। শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত ভালোই ছিলেন।
শনিবার দুপুরে ম্যানচেস্টারের বায়ত-উল মামুর মসজিদে জোহরের নামাজ শেষে মরহুম আবদুর রশীদ খানের নামাজের পর ইনফিল্ড মুসলিম কবরস্থানে দাফন করা হয়।
তিনি এক ছেলে, তিন মেয়ে ও নাতি-নাতনিসহ বহু গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রের কানেকটিকাট অঙ্গরাজ্যের ম্যানচেস্টার প্রবাসী একমাত্র ছেলে মুনিম খানের বাসায় বসবাস করে আসছিলেন। কয়েক বছর আগে তার স্ত্রীও ছেলের বাসায় মৃত্যুবরণ করেন।
কবি আবদুর রশীদ খান ১৯২৭ সালের ১ জানুয়ারি চাঁদপুরের পার্শ্ববর্তী পশ্চিম জাফরাবাদ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা মরহুম মৌলভী ওয়াইজউদ্দিন খান ও মাতা মরহুমা কাদরুন নেসা।
তিনি রঘুনাথপুর প্রাইমারি স্কুলে শিক্ষাজীবন শুরু করেন। এরপর গৃদকালিন্দিয়া এস.ই স্কুল, ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল, জামুকি নবাব স্যার আবদুল গণি হাইস্কুল, ঢাকা ইন্টার কলেজে লেখাপড়া করেছেন। ১৯৫০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজী সাহিত্যে অনার্সসহ এম.এ পাশ করেন।
কানেকটিকাট সঙ্গীত একাডেমির বাৎসরিক অনুষ্ঠানে শিল্পীদের হাতে পুরুস্কার তুলে দিচ্ছেন সাহিত্যে বাংলা একাডেমির পুরস্কারপ্রাপ্ত কবি আবদুর রশীদ খান। ছবি- কৌশলী ইমা
পড়াশোনা শেষে পাবনা অ্যাডওয়ার্ড কলেজে ইংরেজীর অধ্যাপক (১৯৫১-১৯৫২), ঢাকা গভ. কলেজে ইংরেজীর অধ্যাপক (১৯৫২-১৯৫৫), মধ্যবর্তী’সময়ে বাংলাদেশ সরকারের বাংলা অনুবাদক ও প্রকাশনা রেজিস্টার (১৯৫৫-১৯৭৫) এবং বাংলাদেশ প্রকাশনা নিবন্ধন পরিদফতর পরিচালক ও অনুবাদক (১৯৭৫-১৯৮৩) কর্মরত ছিলেন।
কবি আবদুর রশীদ খান ঢাকা কলেজিয়েট স্কুলের ৭ম-৮ম শ্রেণির ছাত্রাবস্থায় স্কুল ম্যাগাজিনসহ বিশ্ববিদ্যালয়ে সলিমুল্লাহ মুসলিম হল ম্যাগাজিনে নিয়মিত কবিতা, গল্প ও প্রবন্ধ লিখতেন। ঢাকা ও কলকাতার বিভিন্ন পত্রিকা ও সাময়িকীতে কবিতা ও প্রবন্ধ প্রকাশ পেয়েছিল তার।
১৯৫২ সাল থেকেই বিভিন্ন কাব্যগ্রন্থের প্রকাশ শুরু হয়। ১৯৫০ সালে ‘নতুন কবিতা’ ও ১৯৫৯ সালে ‘প্রেমের কবিতা সম্পাদনা’ করেন তিনি। তিনি ১৯৭৭ সালে কবিতায় বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার পান।
এ ছাড়াও বাংলা সাহিত্য পরিষদ বাংলাদেশ সাহিত্য পুরস্কার (১৯৯১),কায়কোবাদ সাহিত্য মজলিশ ও দেওয়ান আবদুল হামিদ সাহিত্য পুরস্কার ( ১৯৯২) অর্জন করেন তিনি। কবি আবদুর রশীদ খান-এর প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে নক্ষত্র : মানুষ ও মন (১৯৫২), বন্দী মুহূর্ত (১৯৫৯), মহুয়া (১৯৬৫), বিম্বিত প্রহর (১৯৬৮), অনিষ্ট স্বদেশ (১৯৭০), সমস্ত প্রশংসা তার (১৯৮০, ১৯৮৬ ও ১৯৯৯), তিমির হনন (১৯৮৮), অলৌকিক এক দীপ (১৯৯১) ও আল-আমীন (কিশোর কাব্য ১৯৯১)।
এ ছাড়াও তিনি ১৯৫০ ও ১৯৫৯ সালে নতুন কবিতা ও প্রেমের কবিতা নামে দু’টি কাব্য সংকলন সম্পাদনা করেন। অনুবাদ গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে ‘আকাশ জয়ের ইতিকথা’ (১৯৬০), মুক্তা (১৯৬২), কিশোর মনীষী (১৯৬৭) এবং ইকবালের যবুর-ই-আজম (কাব্যানুবাদ ১৯৮৭)। এখনো প্রকাশের অপেক্ষায় রয়েছে তার ৮টি বই।
এগুলো হলো- দূরন্ত কৈশোর, ফুল হবো না পাখি হবো (কিশোর কবিতা), হারানো দিন (কিশোর কবিতা), হাকলবেরী ফিন (ভাবানুবাদ), টম সয়ার (ভাবানুবাদ), টম কাকার কুটির (ভাবানুবাদ), ভালো লাগার প্রতিধ্বনি (বিদেশি কবিতার অনুবাদ) এবং নিজের কবিতার ইংরেজি অনুবাদ মিররড মোমেন্টস (MIRRORED MOMENTS)।
এমআরএম/জেআইএম