ভিডিও EN
  1. Home/
  2. প্রবাস

অদৃশ্য সঙ্কটে আটকে আছে মালয়েশিয়ায় কর্মী প্রেরণ

আহমাদুল কবির | মালয়েশিয়া থেকে | প্রকাশিত: ০১:৪৯ পিএম, ২০ জানুয়ারি ২০১৯

মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে বাংলাদেশিদের জন্য মিলেছে শুধুই আশ্বাস। সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলেও অদৃশ্য সঙ্কটে আটকে আছে এ বৃহৎ শ্রম বাজারে বাংলাদেশি জনশক্তি প্রেরণ। দেশটির অনেক প্রতিষ্ঠানের মালিক সংশ্লিষ্ট বিভাগে শ্রমিকদের চাহিদাপত্র জমা দিলেও মিলছে শুধুই আশ্বাস।

দেশটিতে বাংলাদেশ থেকে বৈধভাবে জনশক্তি প্রেরণ এক প্রকার থমকে থাকায় বাস্তবে তেমন কোনো ফল পাওয়া যাচ্ছে না।

অনেক ভুক্তভোগী জানান, দেশে বিভিন্ন জনের কাছে টাকা ও পাসপোর্ট দিয়ে তারা হয়রানির শিকার হচ্ছেন। কবে খুলবে এই বন্ধ দুয়ার তা মালয়েশিয়া সরকার ছাড়া কেউ জানে না।

এদিকে সম্ভাবনাময় এ শ্রমবাজারে বাংলাদেশ থেকে কর্মী প্রেরণে দ্রুত সময়ের মধ্যে নতুন অফলাইন পদ্ধতি কার্যকর হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন দেশটিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মহ. শহীদুল ইসলাম।

জানা গেছে পাইপ লাইনে আটকে থাকা ২৫ হাজার কর্মী এখনও বাংলাদেশ থেকে এসপিপিএ পদ্ধতিতে (আগের নিয়ম) মালয়েশিয়া যেতে পারেননি। তাদের জন্য মালয়েশিয়া সরকার দুই মাস সময় বাড়িয়েছিল, যা গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর শেষ হয়েছে।

এ বিষয়ে জনশক্তি রফতানিকারকরা বলছেন, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে অনেক কর্মীর ভিসা ষ্ট্যাম্পিং হওয়ার পরও বিএমইটি থেকে ছাড়পত্র না দেয়ায় তাদের পাঠানো সম্ভব হয়নি।

মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাকের আমলে বাংলাদেশ থেকে ১০ রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে শ্রমিক পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়। এ সময় বাংলাদেশ থেকে প্রায় আড়াই লাখ কর্মী মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমায়।

Malaysia-2

এসব শ্রমিক মালয়েশিয়া যাওয়ার একবারে শেষের দিকে দেশটিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে ক্ষমতাসীন জোটকে পরাজিত করে মাহাথির মোহাম্মদের নেতৃত্বাধীন জোট সরকার গঠন করে। এরপর নাজিব সরকারের আমলে শ্রমবাজারে ব্যাপক অনিয়ম, দুর্নীতি ও লুটপাটের অভিযোগ ওঠতে শুরু করে। এ কারণে সিনারপ্লাক্সের তৈরি করা এসপিপিএ সিস্টেম স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নেয় মাহাথির সরকার। এ নিয়ে শ্রমবাজারে অস্থিরতা দেখা দিলেও থেমে যায়নি কূটনৈতিক তৎপরতা। মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশনের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় দুই দেশের জয়েন্ট ওয়ার্কিংগ্রুপের দুটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। উভয় বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, মালয়েশিয়া পুরনো পদ্ধতিতে (এসপিপিএ) বাংলাদেশ থেকে আর কোনো কর্মী নেবে না। তারা সোর্স কান্ট্রির তালিকায় বাংলাদেশকে অন্তর্ভুক্ত করলেও নতুন অনলাইন পদ্ধতিতে কর্মী নেয়া হবে বলে জয়েন্ট ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে অংশ নেয়া বাংলাদেশি কর্মকর্তারা আশ্বস্ত করেছেন।

এছাড়া যে পদ্ধতিতে লোক নেবে, সেখানে কোনো ধরনের সিন্ডিকেট থাকবে না বলে দেশটির বর্তমান সরকারের সিদ্ধান্ত সবাইকে জানিয়ে দেয়া হয়। তবে নতুন কোন পদ্ধতিতে বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক যাবে সে ব্যাপারে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীলরা জানাতে পারেননি।

এ বিষয়ে কুয়ালালামপুরে বাংলাদেশ হাই কমিশনে সংশ্লিষ্টদের কাছে জানতে চাইলে দূতবাসের শ্রম শাখার দায়িত্বশীল একাধিক কর্মকর্তা জানান, স্থগিত থাকা কর্মী নিয়োগের সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছে মালয়েশিয়া সরকার। খুব শিগিগরই নতুন পদ্ধতি কার্যকর হতে পারে। কবে নাগাদ কর্মী নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হবে এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শ্রম শাখার এক কর্মকর্তা বলেন, মালয়েশিয়ার শ্রম বাজার উম্মুক্ত করতে এক মাসের ব্যবধানে দুটি জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের সভা কখনোই অতীতে অনুষ্ঠিত হয়নি। নিঃসন্দেহে এটি একটি অসাধারণ বিষয়। তারা বলছেন, যখনই দুই দেশের সরকারের মধ্যে বিষয়টি চূড়ান্ত হয়ে যাবে, তখনই নতুন পদ্ধতি কার্যকর হবে।

এদিকে জীবিকার তাগিদে বিদেশ যেতে ইচ্ছুক শ্রমিকরা জানান, মালযেশিয়ার শ্রম বাজার চালু না থাকলেও দালালদের কাছে দ্বিগুণ টাকা দিয়ে রেখেছেন তারা।

বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশের সমৃদ্ধির জন্য প্রবাসী আয় একটি সম্ভাবনাময় খাত। প্রতি বছরই প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স দেশে আসে। বর্তমানে বিভিন্ন দেশে কর্মরত আছেন ১ কোটিরও বেশি। প্রতিবছরই দেশে নতুন করে প্রায় ২০ লাখ কর্মক্ষম জনশক্তি যুক্ত হচ্ছে। যে হারে জনশক্তি যুক্ত হচ্ছে, সে হারে দেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে না। ফলে বেকারের হার প্রতিনিয়তই বাড়ছে। সরকারি কিম্বা বেসরকারি যে খাতেই হোক এ দেশের বেকাররা কাজ করে বাঁচতে চায়। কিন্তু সে আকাংঙ্খা দেশীয়ভাবে পূরণ না হওয়ায় পরিবার ও দেশের মায়া ত্যাগ করে বিদেশে পাড়ি দিতে মরিয়া হয়ে ওঠছে যুব সমাজ। বিদেশে বাংলাদেশি প্রতি চারজনের তিনজন কাজ করছেন মধ্যপ্রাচ্যের সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ওমান, কাতার ও মালয়েশিয়ায়।

মালয়েশিয়ায় কয়েক লাখ বাংলাদেশি কাজ করছেন। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর ২০১৩ সালে দু’দেশের সরকারি পর্যায়ে অর্থাৎ জিটুজি পদ্ধতিতে বাংলাদেশ থেকে জনশক্তি নিতে শুরু করে মালয়েশিয়া। মূলত ১০ রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে জিটুজি পদ্ধতিতে মালয়েশিয়ায় লোক নেয়া শুরু হলেও শুধু প্লান্টেশন প্রজেক্টে কাজ করতে আগ্রহ কম থাকায় জনশক্তি রফতানির হার ছিল কম।

Malaysia-3

পরে মালয়েশিয়া জনশক্তির জন্য বাংলাদেশকে তাদের ‘সোর্স কান্ট্রির’ তালিকাভুক্ত করে। ফলে সেবা, উৎপাদন, নির্মাণসহ অন্যান্য খাতেও বাংলাদেশি কর্মী নেয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়।

এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশের শ্রমশক্তি রফতানির সঙ্গে যুক্ত কিন্তু সুযোগ সন্ধানী এজেন্সি মালয়েশিয়ার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় নিয়ম বহির্ভূতভাবে বাড়তি অর্থ আদায় করে কর্মী পাঠানো শুরু করে।

প্রকৃত অর্থে মালয়েশিয়ার স্বপ্ন দ্রষ্টা, উন্নয়নের স্থপতি জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে ক্ষমতায় না আসলে হয়তো মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর ক্ষেত্রে সরকারি মদদপুষ্ট আদম ব্যবসায়ীদের রাহুগ্রাস বন্ধ হতো না। ক্ষমতাচ্যুত সাবেক সরকারের সময় বাংলাদেশ সরকারের তরফে সব এজেন্সিকে লোক প্রেরণের ক্ষেত্রে সুযোগ দেয়ার জন্য অনুরোধ করা হলেও কোনো প্রকার ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। উল্টো ১০ কোম্পানির সুযোগ সুবিধাকে বেশি করে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। ফলে ৪০ হাজার টাকার স্থলে ৩/৪ লাখ টাকা পর্যন্ত আদায় করে ভাগবাটোয়ারা করা হয়েছে।

মাহাথির মোহাম্মদের বর্তমান সরকার মালয়েশিয়ার উন্নয়নে কাজ করবেন, এতে কোনো সন্দেহ নেই। মালয়েশিয়ার অর্থনৈতিক উন্নয়নে বাংলাদেশিদের ভূমিকা ছিল অনস্বীকার্য। এখনও মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি কর্মীদের প্রচুর কদর রয়েছে।

এ অবস্থায় সরকারি উদ্যোগে বাংলাদেশি শ্রমিকদের বিদেশে পাঠাতে পারলে দেশের অর্থনীতির চাকা আরও সচল হবে। মালয়েশিয়ায় শ্রমিক রফতানি বাড়ানো গেলে এ আয় আরও বাড়বে। এ জন্য সরকার মালয়েশিয়ার সরকারের সঙ্গে কূটনৈতিক তৎপরতা বৃদ্ধি করে কর্মী প্রেরণে দ্রুত কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন- এটাই কর্মমুখী মানুষের প্রত্যাশা।

এমএমজেড/পিআর

আরও পড়ুন