প্রবাসীদের যত ঝামেলা বিমানবন্দরে!
প্রবাসীরা দেশে যাওয়ার সময় পিতা-মাতা ভাই-বোন, স্ত্রী-পুত্র, আত্মীয়-স্বজনের জন্য কিছু উপহার নিয়ে যায় কিন্ত এসব উপহারের বেশিরভাগই বাড়িতে পৌঁছায় না। লোভ করে বসে কিছু অসাধু কর্মচারী।
‘লাগেজ কেটে প্যাকেট থেকে মূল্যবান জিনিষপত্র চুরি করে রেখে দেয়। কিছু বলারও সুযোগ থাকে না। তাছাড়া মাল ডেলিভারি করতে যে কি পরিমাণ ভোগান্তি সেটা প্রবাসীরা খুব ভালোভাবেই টের পাই। বাংলাদেশের বিমানবন্দরে এসব হয়রানি বন্ধ করা হোক এটাই প্রবাসীদের প্রত্যাশা। সরকারের উচিত আমাদের দিকে গুরুত্ব দেয়া।
আক্ষেপ করে কথাগুলো বলছিলেন সৌদি আরব থেকে সদ্য দেশে আসা শাহাদাৎ হোসেন। তিনি বলেন, ‘প্রায় আট বছর পর দেশে যায়। যে আনন্দ নিয়ে দেশে আসি মুহূর্তেই সেই আনন্দ ফিকে হয়ে যায় বিমানবন্দর থেকে মালামাল বুঝে নিতে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে। মালামাল আমি পেলেও কয়েকজন পায়নি।’
জীবিকার তাগিদে দেশান্তর প্রায় ১ কোটি প্রবাসী বাংলাদেশি। পরিবারের জন্য একটু সুখ আর মুখভরা হাসি ফোটাতে নিজের সুখকে জলাঞ্জলি দিয়ে সুখ কিনতে বিদেশে পাড়ি জমান প্রবাসীরা। কেউ সুখী হয় কেউ আবার দুঃখে ভরা জীবন পার করে।
‘সত্যি বলতে প্রবাসীদের তেমন কিছু চাওয়ার নেই ন্যূনতম সুবিধাটুকু পেলেই তারা সন্তুষ্ট। তারা চায় তার পরিবার দেশে নিরাপদে থাকুক নিশ্চিন্তে থাকুক ভালো থাকুক। প্রবাসীরা শুধু দেশ নিয়েই ভাবে না ভাবে তাদের পরিবার-পরিজন দেশ নিয়েও।’
‘কথা হয় টাঙ্গাইলের আমলগীরের সঙ্গে। তিনি সদ্য দেশ থেকে এসেছেন নতুন ভিসা নিয়ে যদিও তিনি এর আগে প্রায় ১৩ বছর সৌদি কাটিয়ে গেছেন। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, একটা ভিসা প্রসেসিং করতে এত বিড়ম্বনা পোহাতে হয় বাংলাদেশে যা বলা বাহুল্য।’
তিনি চান ভিসা প্রসেস সহজ করা হোক এর ব্যয়ভার কমানো হোক এবং সব ধরনের হয়রানি ও দালালের দৌরাত্ব বন্ধ করা হোক। এইতো সেদিন না ফেরার দেশে চলে গেলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর থানার অন্তরগত পাহাড়পুর ইউনিয়নের রফিক। সোনার হরিণ ধরা হলো না তার।
জেদ্দা একটি হাসপাতালে মৃত্যুর কাছে হেরে যান তিনি। নিশ্চই রফিকের অনেক স্বপ্ন ছিল আশা আকাঙ্খা ছিল কিন্তু রবের ডাকে তাকে সাড়া দিয়ে চলে যেতে হলো পরপারে। ধার-দেনা করে একটু সুখ ও একটু সাচ্ছন্দের আশায় যে টাকা খরচ করে আসেন তাও পরিশোধ করতে পারেননি।
পরিবারের শেষ ইচ্ছে ছিল তার লাশটি যেন শেষবারের মতো তার মা বাবা স্ত্রী পুত্র দেখার সুযোগ পায়। জেদ্দা তার বন্ধু-বান্ধব আত্মীয় স্বজনের কাছে অনুরোধ করা হলে সবাই চাঁদা তুলে প্রায় দশ হাজার রিয়াল খরচ করে পরিবারের শেষ ইচ্ছেটুকু পূরণ করা হয়। প্রবাসীরা চায় অন্তত আপন কেউ দুর্ঘটনার শিকার হন কিংবা মৃত্যুবরণ করেন তাহলে যেন সরকারি খরচে তাদের দেশে পাঠানো হয়।
প্রবাসীরা জানান, আমাদের পরিবার দেশেও নিরাপদ নয়। প্রায়ই দিনই হামলা-মামলাসহ নানা ঝামেলায় পড়তে হয়। দেশ-বিদেশ সব জায়গায় আমাদের কলুর বলদের মতো থাকতে হয়। প্রবাসীদের সন্তানদের জন্য ভালো স্কুল কলেজ কিংবা ভার্সিটিতে কোটা থাকে না। এসব বিষয়ে সরকারের ভাবা উচিৎ।
‘অনেক সময়ই আমরা দেশে টাকা পাঠিয়ে লোক মারফত জায়গা-জমি কিনতে চেষ্টা করি। অনেক ক্ষেত্রেই সে টাকা মার যায়, প্রবাসী পরিবারের স্ত্রী-সন্তানরাও নানা দুর্ভেগের শিকার হয়। দেশে বসবাসকারী প্রবাসী পরিবারের কাছ থেকে অনেকেই নানা রকম সুযোগ হাতিয়ে নেয়। কাজের প্রচণ্ড চাপ ও কষ্ট আর দেশের নানা টেনশন নিয়েই কাটে আমাদের প্রবাস জীবন।’
‘প্রবাসে থেকে কাজের ফাঁকে আমরা দেশ নিয়ে ভাবি। দেশের রাজনীতি নিয়ে প্রতিনিয়ত কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। প্রতিটা দেশে আমাদের কমিউনিটিগুলো কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছি। এই রাজনীতি নিয়ে কতই না ভাবি অথচ আমাদের ভাবার মতো একটু সময় নায় সরকারের।
অনেক প্রবাসী আছে দেশে বিনিয়োগ করতে ইচ্ছুক। শুধুমাত্র হয়রানি জীবনের অনিশ্চয়তায় ভোগার কারণে বিনিয়োগে এগিয়ে আসছেন না প্রবাসীরা। প্রবাসীদের জন্য সরকার সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা গ্রহণ করলে দেশে বিনিয়োগ বেড়ে যাওয়া সময়ের ব্যাপার। ফলে দেশের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে। রেমিটেন্সের হার আরও বেড়ে যাবে।
অতিথি লেখক জুয়েল ফকির, রিয়াদ সৌদি আরব
এমআরএম/এমকেএইচ