সাগরপথে ইতালি : খাদ্যের অভাবে গেল ১৫ জনের প্রাণ
লিবিয়া উপকূলে খাবার ও বিশুদ্ধ পানির অভাবে এক নৌকায় মারা গেছেন ১৫ অভিবাসী। জীবিত উদ্ধাররা জানান, ১২ দিন না খেয়ে ছিলেন তারা। ত্রিপোলির পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর সাবারাথা থেকে ২৫ জন অভিবাসনপ্রত্যাশী নিয়ে একটি নৌকা ইতালির উদ্দেশে রওনা হলে মাঝপথে তাদের খাবার ফুরিয়ে যায়।
উদ্ধারকারীরা ওই নৌকাটির ১০ যাত্রীকে মিশরাতার একটি সৈকত থেকে জীবিত উদ্ধার করে। খাদ্য ও পানি ছাড়া সমুদ্রে ভেসেছিল ওই মানুষগুলো। এ ছাড়া উদ্ধারকৃত ১০ জনের শারীরিক অবস্থাও খুব খারাপ। কর্তৃপক্ষ এখনও কোনও মন্তব্য করেনি।
মঙ্গলবার সৈকতে ভেসে আসে অভিবাসীরা। সেখানকার স্থানীয় একজন তাদের উদ্ধার করে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এরপর তাদের রেড ক্রিসেন্টের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
বেঁচে যাওয়া একজন বলেন, আমরা ২৫ জন ছিলাম। ১২ দিন আমাদের কোনও খাবার বা পানি ছিল না। ১৫ জনই মারা গেছেন। আইন-শৃংখলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে চলতে থাকে দুর্গম পথ পাড়ি দেওয়ার প্রয়াস। অনেক সময় এই পথ এক সপ্তাতে শেষ হয় আবার পথে ঝামেলা হলে বিলম্ব হয়। যাত্রাপথে পানি শেষ হওয়াতে শুরু হয় যাত্রীদের আর্তনাদ।
আফ্রিকা ও আরবের বিভিন্ন দেশ থেকে তুরস্ক কিংবা গ্রিসে নৌপথে লিবিয়া হয়ে ভূমধ্যসাগর কিংবা আটলান্টিক মহাসাগর স্পিডবোট কিংবা ট্রলার দিয়ে পাড়ি জমানোর সময় সলিল সমাধি হচ্ছে অনুপ্রবেশকারীদের। আবার আফ্রিকার দেশ মরোতানিয়া রটে সাহারা মরুভূমি হয়ে পর্তুগাল ঢোকার চেষ্টাকালে সাহারা মরুভূমির দুর্গম পথ পাড়ি দিতে গিয়ে অনাহারে অনেকে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।
২০১১ সালে লিবীয় নেতা মুয়াম্মর গাদ্দাফির পতনের পর থেকেই দেশটিতে অস্থিরতা শুরু হয়। মানবপাচারকারীদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ রুট হয়ে ওঠে দেশটির উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় উপকূল। গত বছর এই পথ পাড়ি দিয়ে ইতালি ও অন্য ইউরোপীয় দেশগুলোতে পৌঁছায় প্রায় এক লাখ ২০ হাজার শরণার্থী।
এদিকে, দালালদের মাধ্যমে যারা ইউরোপে ঢুকতে পেরেছেন তাদের মাথা গোজার জন্য জীবন যুদ্ধে নামতে হয়। প্রথমে তাদের বাসস্থানের জন্য পরিচিত জনদের কাছে যেতে হয়। বাসস্থানের পর কাজের জন্য মিথ্যা চেষ্টা করতে হচ্ছে। ইউরোপের যে কোন দেশে যেমন স্পেন, ফ্রান্স ইতালি কিংবা পর্তুগালে কাজের পারমিট ছাড়া কাজ পাওয়া সম্ভব নয়।
যারা অ্যাসাইলাম কিংবা হিউম্যান রাইটসে থাকার জন্য আবেদন করেন তাদের আবেদন বিবেচনা কিংবা আমলে নিতে প্রায় ৮ মাস সময় লেগে যায়। কোন কোন দেশে কোন ক্ষেত্রে আরও বেশি সময় লাগে। এভাবেই কাটতে থাকে প্রবাসীদের জ্বালাময় জীবন।
সূত্র: রয়টার্স/এমআরএম/পিআর