দেশে ফিরেছেন মালয়েশিয়ায় বন্দী থাকা মতিয়ার
অবশেষে মালয়েশিয়া থেকে দেশে ফিরছেন মর্তুজ আলী মতিয়ার। অনুসন্ধানে জানা গেছে, মতিয়ার পরিবারের সুখের আশায় ধার-দেনা করে ধাপে ধাপে ৬ লাখ টাকা দালালকে দিয়ে সাগর পাড়ি দিয়ে স্বপ্নের দেশ মালয়েশিয়ায় যান।
দেশটিতে আসার পর দালাল তাকে বন্দী করে রাখে। এরপর পরিবারের কাছে টাকা দাবি করে। টাকা দিতে না পারায় পরিবারের সঙ্গে মতিয়ারের যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। পরিবার ধরেই নিয়েছিল দালাল তাকে হত্যা করেছে।
পরে জানা যায়, মতিয়ারকে অত্যাচার করে পংঙ্গু করে রাস্তায় ফেলে দেয় দালাল। অতঃপর তাকে পাওয়া যায় ক্লাং হাসপাতালে। হাসপাতাল তার পরিচয় এবং চিকিৎসা খরচের কথা উল্লেখ করে চিঠি দেয় বাংলাদেশ হাইকমিশনে। ইতোমধ্যে তাকে সাবা বারনাম হাসপাতালে শিফট করে ক্লাং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। আবারও চিঠি দেয় হাইকমিশনে।
হাইকমিশন থেকে লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্ট সিলভা এবং ওয়েলফেয়ার অ্যাসিস্ট্যান্ট মোকসেদ আলী হাসপাতালে গিয়ে দেখে আসেন। কিন্তু মতিয়ার কথা বলতে পারেন না, বাড়ি কোথায় কিছু জানা সম্ভব না হওয়ায় তার নাগরিকত্ব নির্ণয়ে ঢাকায় চিঠি দেয় হাইকমিশন। তার পরিচয় শনাক্ত করতে সংবাদ ও সোশ্যাল মিডিয়াতেও মতিয়ারের ছবি প্রচার করা হয়।
এভাবে ব্যাপক প্রচারের ফলে সিলেট, চট্টগ্রাম ও পাবনা থেকে নিজেদের বলে দাবি করা হয়। সিলেট ও চট্টগ্রামের পরিবারের লোক হাসপাতালে গিয়ে শনাক্ত করে তাদের স্বজন এই মতিয়ার নয়।
ফোন আসে পাবনার এসপির নিকট থেকে। তিনি জানান, মতিয়ারের পরিবারের লোকজন বাস করে পাবনার সাথিয়ায়। আবারও হাসপাতালে হাজির হয় হাইকমিশনের টিম। শুরু হয় ভিডিও কল, তারা দেখে চিনতে পারে এবং শনাক্ত করার জন্য তার ডান হাতের আঙ্গুল কাটার কথা বলে। যা হাসপাতাল বা হাইকমিশন কেউই আগে খেয়াল করেনি।
কিন্তু তাদের দেয়া তথ্যমতে সব মিলে যায়। হাইকমিশন নিশ্চিত হয় মতিয়ারের আসল নাম মর্তুজা আলী। কিন্তু দালাল তাকে ফেলে পার হয়ে গেছেন। তার মেয়ে পপি জানান, মতিয়ার পরিবারের কষ্টের চিন্তায় অস্থির থাকতেন সবসময়। তাই দালালকে ৬ লাখ টাকা দিয়ে অনেকটা গোপনেই মালয়েশিয়া যান।
কিন্তু সংসারে সুখ আসেনি। বরং বাবা হয়েছেন পঙ্গু। এবার পরিবারের সান্নিধ্যে যাবার সব ব্যবস্থা সম্পন্ন করেছে হাইকমিশন। হাইকমিশনের ওয়েলফেয়ার অ্যাসিস্ট্যান্ট মোকসেদ আলি মতিয়ারকে ২২ নভেম্বর বৃহস্পতিবার (বাড়িতে) স্বজনদের কাছে পৌঁছে দেবেন বলে জানান হাই-কমিশনের শ্রম শাখার প্রথম সচিব মো. হেদায়েতুল ইসলাম মণ্ডল।
এদিকে গত কয়েকদিন ধরে ইলেক্ট্রিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় সংবাদ প্রকাশের পর মালয়েশিয়ায় বসবাসরত প্রবাসী জনহিতৈষীরা অর্থ দিয়ে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। গঠন করা হয়েছে মতিয়ার তহবিল ফান্ড। মতিয়ারের স্বজন সাংবাদিক মোহাম্মদ আলী এ প্রতিবেদককে জানান, বিভিন্ন মিডিয়ায় সংবাদ প্রকাশের পর জনহিতৈষীরা আমার সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছেন।
এরই মধ্যে মতিয়ারের স্পেশাল পাসের জন্য ৩১০০ রিঙ্গিত পরিশোধ করা হয়েছে। এ ছাড়া হাসপাতাল ও বিমান টিকিটসহ যাবতীয় খরচ বহনের দায়িত্ব নিয়েছেন হাইকমিশন।
জনহিতৈষীদের দেয়া টাকা মতিয়ারের স্বজনদের কাছে পৌঁছে দেয়া হবে বলে জানান সাংবাদিক মোহাম্মদ আলী। হাই কমিশনের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, মতিয়ারকে দেশে পাঠানোসহ তার এ অবস্থার দায়ী (ব্যক্তি) দালালের বিরুদ্ধে চলছে আইনি প্রক্রিয়া। এরই মধ্যে দালালের নামসহ দেশে গোয়েন্দা সংস্থার কাছে পাঠানো হয়েছে।
এ বিষয়ে হাই কমিশনের শ্রম কাউন্সিলর অতিরিক্ত সচিব মো. সায়েদুল ইসলাম জানান, বিদেশে অবৈধপথে আসা পরিহার না করলে মতিয়ারের মতো বিপদে পড়তে হয়। হাই কমিশন থেকে অবৈধপথে মালয়েশিয়ায় না আসার জন্য সচেতনতামূলক সভা সেমিনার করা হয়েছে এবং অব্যাহত রয়েছে।
সচেতন করার পরেও আমাদের দেশের নাগরিকরা দালালের প্ররোচনায় অবৈধপথে মালয়েশিয়া আসছেন। এসেই মতিয়ারের মতো বিপদে পড়েন তখন কিছু করার থাকে না। শ্রম কাউন্সিলর বলেন, মতিয়ারের এ অবস্থার দায়ী ব্যক্তিকে ধরতে ইতোমধ্যে কাজ চলছে।
এমআরএম/পিআর