দেশীয় শ্রমিকের অভাবে আমিরাতে বিপাকে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা
২০১২ সালের ১২ আগস্ট বাংলাদেশ থেকে হঠাৎ করে শ্রমিক নেয়া বন্ধ করে দেয় সংযুক্ত আরব আমিরাত। ফলে বাংলাদেশিরা নতুন ভিসা ইস্যু ও অভ্যন্তরীণ ট্রান্সফার সুবিধা থেকে বঞ্চিত হন। বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শ্রম বাজার সংযুক্ত আরব আমিরাত। রেমিট্যান্স প্রেরণকারীর শীর্ষেও দেশটি।
আমিরাতে বিগত ছয় বছর ধরে বাংলাদেশি শ্রমিকদের জন্য নতুন কোনো ভিসা হচ্ছে না। এমন কি আমিরাত ঘোষিত সাধারণ ক্ষমাতেও ভিসা বন্ধের কারণে অবৈধ প্রবাসীরা কোম্পানি, লাইসেন্সে বা দোকানে ভিসা লাগাতে পারছেন না। ফলে দেশীয় শ্রমিকের অভাবে দেশটিতে বিপাকে পড়েছেন বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা।
দেশটিতে বাংলাদেশি প্রবাসীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মূলত বাংলাদেশি শ্রমিক দিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য সহজে পরিচালনা করা যায়। এক্ষেত্রে বেতন নির্দিষ্ট পরিমাণে দিয়ে কাজে লাগানো যায়। এছাড়া দেশিদের যতটুকু বিশ্বাস করা যায় অন্য দেশের ক্ষেত্রে তো সেটা সম্ভব নয়। ভাষাগতও কিছু বিষয় তো থেকেই যায়। আমাদের দেশের লোকজনকে সহজেও ব্যবসা বোঝানো সম্ভব। ইন্ডিয়ান কিংবা পাকিস্তানীর ক্ষেত্রে তো সেটা সহজ নয়। সংস্কৃতি সভ্যতাও অনেক সময় কাল হয়ে দাঁড়ায়।
দেশটিতে প্রায় আট লাখ বাংলাদেশি প্রবাসীদের মধ্যে হাজার হাজার অবৈধ প্রবাসী আছেন। চলতি বছরে আামিরাত ঘোষিত ১ আগস্ট থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত সাধারণ ক্ষমায় এসব অবৈধ প্রবাসীরা শ্রমিকদের ভিসা বন্ধের কারণে বৈধ হতে পারছেন না। হাতেগোনা কিছুসংখ্যক প্রবাসী চড়ামূল্যে ইনভেস্টর হিসেবে আর স্থানীয় আরবিদের ঘরে ১৯ ক্যাটাগরিতে ভিসা লাগানোর সুযোগ পাচ্ছেন মাত্র।
বিপুলসংখ্যক অবৈধ প্রবাসীরা যারা বিভিন্ন কোম্পানি বা দোকানে কাজ পাচ্ছেন কিন্তু ভিসা চালু না থাকাতে তারা বৈধ হয়ে থাকতে পারছেন না। আর যারা বিভিন্ন কোম্পানিতে আছেন তাদের সুযোগ থাকা সত্ত্বেও অন্য কোম্পানিতে উচ্চ বেতনে কাজ করতে যেতে পারছেন না।
আর যে সমস্ত প্রবাসী তাদের চাকরি হারিয়েছেন তারাও ভিসা পরিবর্তনের সুযোগ না থাকাতে চড়া মূল্যে ইনভেস্টরের ভিসা লাগানো বা দেশে যাওয়া ছাড়া অন্যকোন বিকল্প নেই। এমতাবস্থায় দেশীয় ব্যবসায়ীরা যারা ভিসা খুলবে বা ভিসা পরিবর্তনের সুযোগ হবার আশায় নতুন নতুন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চালু করেছেন তারা পড়েছেন বিপাকে। ভিন্ন দেশি শ্রমিক ও কর্মচারীদের দিয়ে দেশীয় প্রতিষ্ঠান চালাতে তারা রীতিমত হিমশিম খাচ্ছেন।
আরব আমিরাতের অভিজাত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সুইস গ্যালারির কর্ণধার মোহাম্মদ সেলিম জাহাঙ্গীর ও দেশীয় মালিকানাধীন সুপার মার্কেট গ্রুপ ব্লু স্কাইয়ের চেয়ারম্যানের মতে, নতুন ভিসা বা ভিসা পরিবর্তনের সুযোগ না থাকাতে ব্যবসা-বাণিজ্যে দিন দিন মন্দা যাচ্ছে।
তিনি বলেন, ভিন্ন দেশি কর্মচারী দিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য চালানোটা সত্যিই কঠিন। লাভ সীমিত রেখেও অনেক সময় লোকসান দিতে হচ্ছে। এখন নিজেদের অস্তিত্ব ঠিকিয়ে রাখতেও হিমশিম খেতে হচ্ছে বলে জানান এসব ব্যবসায়ীরা। তাদের মতো শত দেশীয় ব্যবসায়ীদের দাবি নতুন ভিসা না হোক অন্তত: ভিসা পরিবর্তনের সুযোগ সৃষ্টি করার জন্য।
ভিসার ব্যাপারে যদি সরকার আন্তরিক হয়, তাহলে অচিরেই আমিরাতে ভিসা খোলা সম্ভব। ভিসা ও ভিসা পরিবর্তনটা এখন প্রবাসীদের প্রাণের দাবি।
উল্লেখ্য, ১৯৭৬ সাল থেকে এখন পর্যন্ত সংযুক্ত আরব আমিরাতে ২৩ লাখেরও বেশি বাংলাদেশির কর্মসংস্থান হয়েছে। এর মধ্যে নারী কর্মী এক লাখ ২৩ হাজার ৯৮৫ জন।
এমআরএম/পিআর