ভিডিও EN
  1. Home/
  2. প্রবাস

নদীগর্ভে পাসপোর্টের ঠিকানা

প্রবাস ডেস্ক | প্রকাশিত: ০৭:৩৩ পিএম, ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮

শরীয়তপুরে পদ্মার ভাঙনে নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে একের পর এক স্থাপনা। ফসলি জমি, বসতবাড়ির সঙ্গে রক্ষা পাচ্ছে না সরকারি ভবনও। অব্যাহত ভাঙনে আতঙ্কে দিন-রাত কাটাচ্ছেন মানুষ। ভাঙন অব্যাহত থাকলে নড়িয়া উপজেলার অস্তিত্ব থাকবে কিনা তা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছে সিঙ্গাপুরে শরীয়তপুর প্রবাসীরা।

প্রবাসীদের রক্তঘামের পয়সায় সমৃদ্ধ হয়েছে এই জনপদ। এই প্রবাসীদের প্রায় হাজার খানেক বিল্ডিং বাড়ি এবার পদ্মায় চলে গেছে।

এখনো ইতালি, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশে যারা রাজপথে হাসু আপা, হাসু আপা বলে স্লোগান দেয় তার বেশিরভাগ এই নড়িয়া, শরীয়তপুরের মানুষ।

হাসপাতালকে কেন্দ্র করেই এই জনপদে গড়ে উঠেছিল জেলার বিখ্যাত চিকিৎসাকেন্দ্র। ইতোমধ্যে বিলীন হয়ে গেছে ৩ তলার দেওয়ান ক্লিনিক, অর্ধশত ঔষধের দোকান, লাইভ কেয়ার হসপিটালের এক তৃতীয়াংশ নদীগর্ভে চলে গেছে। কত মসজিদ, মন্দির শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবার পদ্মায় বিলীন হয়ে গেছে তার কোনো হিসেব নেই।

আগস্টের প্রথম সপ্তাহে সাধুর বাজার ডুবে গেছে অসংখ্য মানুষ, দোকানপাট ও যানবাহন নিয়ে যাদের আর খুঁজে পাওয়া যাইনি।

নদীর স্রোত কমলেই পদ্মার ডানতীর রক্ষা প্রকল্পের কাজ শুরু হবে, এজন্য সরকার থেকে এসেছে ১০৯৭ কোটি টাকা, কিন্তু এই অর্থের ভেতরে, এই প্রকল্পের ভেতরে নড়িয়ার মানুষ আর স্বপ্ন দেখে না। নড়িয়ার মানুষের সকল স্বপ্ন ভেসে গেছে পদ্মায়।

মুলফৎগঞ্জ জনপদের কোল ঘেঁষেই বার ভূঁইয়ার অন্যতম বিপ্লবী কেদার রায় প্রাসাদ নির্মাণের কাজ শুরু করেছিলেন, ১৬০২ সালে কেদার রায় যুদ্ধে নিহত হওয়ায় তার কাজ আর সমাপ্ত হয়নি। বিখ্যাত মানচিত্রকর জেমস রেনেল এই জনপদের পাশ দিয়েই নৌকাভ্রমণ করেছিলেন ১৭৭০ দশকে।

দক্ষিণ বিক্রমপুরের চারটি জনপদের ৩টিই পদ্মা নদীতে বিলীন হয়েছে বহু আগে। কেদার রায়ের জন্মভূমি আড়া ফুলবাড়িয়া গ্রাম, কেদার রায়ের রাজধানী শ্রীপুর, রাজা রাজবল্লভের রাজনগর এই তিনটি জনপদ পর্যায়ক্রমে নদীতে বিলীন হলেও পদ্মাপারেই টিকে ছিল মুলফৎগঞ্জ বাজার যার, অর্ধাংশ এখন চলে গেছে পদ্মায়।

Passport2

বাকি অংশটুকুও সপ্তাহখানেকের ভেতর বিলীন হয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই জনপদ দীর্ঘদিন ধরে দেখাশোনা করতো মরহুম আব্দুল করিম দেওয়ান ওরফে মনাই দেওয়ান। তার প্রচেষ্টায় এখানে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে জেলার প্রথম স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। মনাই দেওয়ান ছিলেন বৃহত্তর ফরিদপুরের অন্যতম পরিচিত ব্যক্তিত্ব, আজ তার বসতবাড়ি, বংশধরেরা সবাই বাস্তুচ্যুত।

এই জনপদেই প্রায় দুইশত বছর আগে আরব থেকে কলকাতা হয়ে আগমন করেন আলহাজ শরীয়উল্লাহ মক্কী (ফরায়েজি আন্দোলনের নেতা হাজী শরীয়ত উল্লাহ নয়) তার বংশধর মরহুম আব্দুল আজিজ (র.) প্রতিষ্ঠা করেছেন মুলফৎগঞ্জ আজিজিয়া জ্বালালিয়া মাদরাসা যা বৃহত্তর ফরিদপুরের মাঝে অন্যতম এবং বাংলাদেশের হাফেজিয়া মাদরাসার অন্যতম।

জুলাইয়ের মাঝামাঝি শুরু হওয়া এই ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে ঐতিহ্যবাহী কেদারপুর ইউনিয়ন থেকে চর জাজিরা, চর নড়িয়া, সাহেবের চর গ্রাম। মুলফৎগঞ্জের সঙ্গে প্রধান সংযোগ সড়কও বিলীন হয়েছে আগস্টে, মুলফৎগঞ্জ বাজার যে এই ভাঙনে আর রক্ষা হবে না এটা নিশ্চিত হয়ে গেছে জনগণ।

এত দুর্যোগ নামলো বাংলাদেশে, সাইক্লোন হয়, সুনামি হয়, ৭১ এর ভয়াবহতা মোকাবেলা করলো এই দেশ। নড়িয়া কখনো এত বড় দুর্যোগ মোকাবেলা করেনি।

শরীয়তপুরের পানি উন্নয়ন বোর্ড ২৫০ কেজি বালির জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন রোধের চেষ্টা করে যাচ্ছে, অথচ নদী গবেষকরা জানিয়েছে এখানে স্রোতের বিপরীতে ২৫০ কেজির জিও ব্যাগ কাজ হবে না প্রয়োজন হাজার কেজির জিও ব্যাগ।

পদ্মার ডানতীর রক্ষা করার জন্য ২২ আগস্ট ঈদুল আজহার দিনে প্রবাসীরা আলোচনা সভা করেছিল সিঙ্গাপুরে। ২৪ আগস্ট স্মারকলিপি দিয়েছিল প্রধানমন্ত্রীর কাছে, যাতে করে নৌবাহিনী মোতায়েন করে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ক্ষমতা প্রয়োগ হলেও তিনি নড়িয়াকে বাঁচান।

সিঙ্গাপুরের বাংলাদেশ হাইকমিশন তা সাদরে গ্রহণ করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রেরণ করেছেন। সারা বাংলাদেশে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স প্রবাহের মাঝে নড়িয়ার অবস্থান চতুর্থ যা বিভিন্ন মিডিয়া প্রকাশ করেছে অথচ আমরা আজ আমরা এতটাই অবহেলিত যে 'উহু' শব্দটিও করতে পারি না।

মনির আহমদ, সিঙ্গাপুর থেকে

এমআরএম/জেআইএম

আরও পড়ুন