যুক্তরাষ্ট্রে থাকার অনুমতি পেল বাংলাদেশি সালমা
যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রবাসী বাংলাদেশি সালমা রেজা সিকান্দারের দেশে ফেরত যাবার চূড়ান্ত আদেশ স্থগিত করা হয়েছে। স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় কানেকটিকাট অঙ্গরাজ্যের নিউ হ্যাভেনের বাসিন্দা সালমাকে জেএফকে বিমানবন্দর থেকে দেশে ফেরত যাবার বিমান টিকিটসহ দিনক্ষণ নির্ধারণ করে দিয়েছিল ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই)।
কিন্তু প্রবাসীদের বিক্ষোভ, প্রতিবাদ আর স্থানীয় মার্কিন রাজনীতিবিদের জোর প্রচেষ্টার ফলে ২৯ ঘণ্টা আগে সালমার বহিষ্কারাদেশ বাতিল করতে বাধ্য হন আইসিই।
সালমার বাংলাদেশে ফেরত যাবার নির্দেশ বাতিলের দাবিতে কানেকটিকাটের প্রবাসী বাংলাদেশিসহ হিউম্যান রাইটস প্রতিনিধিরা ইউএস কোর্টের সামনে দু’দফায় বিক্ষোভ ও সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। শেষে গত মঙ্গলবার বিকেলে ৪টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত সালমা কানেকটিকাটের হার্টফোর্ড শহরে ইউএস কোর্ট হাউসের সামনে ৪১ ঘণ্টার অনশন ধর্মঘট শুরু করেন সালমার পরিবার ও হিউম্যান রাইটসের প্রতিনিধিরা।
বুধবার দুপুর ২টার দিকে ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিস বিভাগের বোর্ড অব ইমিগ্রেশন আপিল (বিআইএ) সালমার যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান সংক্রান্ত আবেদন নাকচ করে দেন। এ খবর শুনে সালমার পরিবার, আন্দোলনকারী প্রবাসী বাংলাদেশি ও সংশ্লিষ্ট মার্কিন রাজনীতিবিদরা বিচলিত হয়ে পড়েন।
কিন্তু শেষ মুহূর্তে বিকেল চারটার দিকে সালমার বহিষ্কারাদেশ বাতিল করে আরও এক বছর যুক্তরাষ্ট্রে থাকার অনুমতি দেন ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই)। আইসিই’র এই আদেশের খবর পেয়ে সবার মনে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফিরে আসে।
দীর্ঘ ১৯ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন বাংলাদেশি সালমা রেজা সিকান্দার। ১৯৯৯ সালে ভ্রমণ ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিলেন সালমা। ভিসার মেয়াদ শেষ হবার পর আর দেশে ফিরে যাননি। যুক্তরাষ্ট্রে ছেলে জন্ম নেবার পর তিনি তার ছেলের দেখাশোনা করার জন্য এদেশের থাকার জন্য একটি কষ্ট’র আবেদন করেন।
সালমার ১৭ বছর বয়সী ছেলে সামির মাহমুদ স্থানীয় কুইনিপিয়াক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছেন। আগামী ২৭ আগস্ট সোমবার থেকে তার ক্লাস শুরু হবে।
সালমার সুসংবাদ শুনে অসুস্থ মাকে দেখতে বাংলাদেশে অবস্থানরত কমিউনিটি অ্যাক্টিভিস্ট, ওয়ালিংফোর্ড বেঙ্গল সেন্টেনিয়াল লায়ন্স ক্লাবের সভাপতি ও ডেমোক্রাট লিডার মো. মাসুদুর রহমান (অপু) মুঠোফোনে এ প্রতিনিধিকে জানান, সালমার বহিষ্কারাদেশ খবর পেয়ে গত দু’সপ্তাহ ধরে আমি একক প্রচেষ্টায় মার্কিন রাজনীতিবিদদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক আর ইমেইল চিঠি লিখে জোর লবিং চালিয়েছি।
তাকে ও তার পরিবারকে সান্তনা দিতে বাংলাদেশি আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন অব কানেকটিকাট (বাক)-এর সাবেক সভাপতি ময়নুল হক চৌধুরী হেলাল ও তারেক আম্বিয়া কেচ সঙ্গে নিয়ে রাত ১২টায় ছুটে গিয়েছিলাম তার বাসায়।
শুধু তাই নয় সালমার এ দুঃসংবাদ শোনার পর পরদিন থেকেই স্থানীয় কংগ্রেসম্যান, সিনেটরসহ মূলধারার রাজনীতিবিদদের সঙ্গে কথা বলি। তারা সকলেই এ পরিবারটিকে সাহায্য করার আশ্বাস দিয়েছেন। সকলেই একযোগে ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই) এবং বোর্ড অব ইমিগ্রেশন আপিল (বিআইএ)-এর সঙ্গে যোগাযোগ করতে শুরু করেন।
সালমার বহিষ্কারাদেশ স্থগিত হওয়ায় তিনি খুব আনন্দিত বলে উল্লেখ করেন। একই সঙ্গে কানেকটিকাটে সব প্রবাসী বাংলাদেশিসহ স্থানীয় মার্কিন রাজনীতিবিদ সিনেটর খ্রিস মারফি, সিনেটর রিচার্ড ব্লুমেন্থাল, কংগ্রেসম্যান জন বি লার্সন, কানেকটিকাট স্টেট গভর্নর ড্যানিয়েল মলয়, হাউস অব জুডিসিয়াল কমিটির চেয়ারম্যান উইলিয়াম টম, কংগ্রেসম্যান জন বি লার্সন ও রোসা দেলারো, হিউম্যান রাইটসের প্রতিনিধিরা, হার্টফোর্ড সিটি মেয়র লুক ব্রোনিনকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান তিনি।
তিনি বলেন, ভবিষ্যতেও প্রবাসীদের এ ধরনের কোন সমস্যা দেখা দিয়ে তিনি তার প্রচেষ্টায় সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করবেন।
গত তিন মাসেরও অধিক সময় ধরে ঢাকার ল্যাবএইড হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন মা মাহফুজা খাতুন (৭৬)-এর সুস্থতার জন্য তিনি সকল প্রবাসীদের কাছে দোয়া কামনা করেন।
সালমা পরিবারের অনশন ধর্মঘট ও দু’দফা বিক্ষোভ সমাবেশে তাদের পাশে এসে সান্তনা দেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রবাসী বাংলাদেশিরা। এরা হলেন- বাংলাদেশি আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন অব কানেকটিকাট (বাক) এর সাবেক সভাপতি ড. তামিম আহমেদ, আশফাকুল তরফদার, ময়নুল হক চৌধুরী হেলাল, মীর আজম, হালিম আকবর, ওয়ালিংফোর্ড বেঙ্গল সেন্টেনিয়াল লায়ন্স ক্লাবের সভাপতি ও বাংলাদেশি ডেমোক্রেট লিডার মো. মাসুদুর রহমান (অপু), তারেক আম্বিয়া, মোহম্মদ রহমান তুহিন, সাদেক নজরুল, শাহাজ ইসলাম, সুহেলুর রহমান স্বপন, ডেভিড রোজারিও স্বপন, মোল্লা বাহাউদ্দিন পিয়াল, হুমায়ুন চৌধুরী, আনোয়ার হোসেন হিমু, মোবারক নওশাদ, এমএ হাসেম, মীর সাব্বির, নিক্সন বিশ্বাস, আব্দুর রাজ্জাক রেজা, মিসেস হালিম, সুফিয়া আম্বিয়া, মোহা. আজাদ, রোজি আজাদ ও মেসবাহ উদ্দিন প্রমুখ।
এমআরএম/পিআর