ভিডিও EN
  1. Home/
  2. প্রবাস

পক্ষাঘাতগ্রস্তদের জন্য আরও কাজ করতে চান টেইলর

কৌশলী ইমা | প্রকাশিত: ০৩:৩১ পিএম, ০৯ আগস্ট ২০১৮

প্রবাসীদের সহযোগিতা পেলে বাংলাদেশে পক্ষাঘাতগ্রস্ত মানুষদের পুনর্বাসনের জন্য আরও বেশি কাজ করবেন বলে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশে ফিজিওথেরাপির স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘সেন্টার ফর দ্য রিহ্যাবিলিটেশন অব দ্য প্যারালাইজড (সিআরপি) এর পরিকল্পক ও প্রতিষ্ঠাতা ভ্যালেরি অ্যান টেইলর।

রোববার (৫ আগস্ট) যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যের বোস্টনের সন্নিকটে বেডফোর্ডের একটি মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় তার এ আগ্রহের কথা জানান টেইলর। আমেরিকান ফ্রেন্ডস অব সিআরপি এ আলোচনা সভার আয়োজন করে।

বোস্টনের বিশিষ্ট আবাসন ব্যবসায়ী সৈয়দ নুরুজ্জামানের সভাপতিত্বে ও সাফোল্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মাওদুদুর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত উক্ত আলোচনা সভায় বোস্টন ও পার্শ্ববর্তী বেশ কয়েকটি শহর থেকে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ উপস্থিত হন।

সভায় ভ্যালেরি অ্যান টেইলরকে ‘বাংলাদেশের মাদার তেরেসা’ উল্লেখ করে বক্তারা বলেন, ‘ভ্যালেরির কাজ দেখে মুগ্ধ হবেন না- এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না।’ এ সময় তারা সাভারে অবস্থিত ‘সেন্টার ফর দ্য রিহ্যাবিলিটেশন অব দ্য প্যারালাইজড (সিআরপি) পরিদর্শন কিংবা ওয়েবসাইটে গিয়ে সিআরপি কর্মকাণ্ড দেখে পক্ষাঘাতগ্রস্ত মানুষদের পুনর্বাসনের জন্য প্রবাসীদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

ভ্যালেরি টেইলর বলেন, ‘আপনাদের ভালবাসায় আমি বাংলাদশে পক্ষাঘাতগ্রস্ত মানুষদের পুনর্বাসনের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। আমার বাকি সময়টাও মানবসেবায় নিয়োজিত করব। আপনারা আমার পাশে থেকে সহযোগিতা করবেন।’

taylor

সৈয়দ নুরুজ্জামান তার বক্তব্যে বলেন, ‘বেশ কয়েক বছর আগে আমি সিআরপির কর্মকাণ্ড দেখতে সাভারে গিয়েছিলাম। মানুষের সেবামূলক এসব কাজ দেখে আমি ভ্যালেরি টেইলরের এ কাজকে ভালবাসতে শুরু করি। সেই থেকেই তার সংগঠনটির সঙ্গে যুক্ত হয়েছি। কারণ পঙ্গু, অসহায় ও বিকলাঙ্গ এসব মানুষের কল্যাণে কাজ করতে পারলে নিজের জীবনকে ধন্য মনে করব।’ এ সময় তিনি তার একক প্রচেষ্টায় দশ হাজার ডলার অনুদানের একটি চেক ভ্যালেরি টেইলরের হাতে তুলে দেন। সৈয়দ নুরুজ্জামান ছাড়াও সভায় আগত অতিথিরা স্ব স্ব অনুদান প্রদান করেন।

সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ম্যাসাচুসেটস ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজির (এমআইটি) ডি-ল্যাব এর নির্বাহী পরিচালক বব নানেস, আমেরিকান ফ্রেন্ডস অব সিআরপি ফিজিক্যালথেরাপির প্রেসিডেন্ট ডা. হোসনে আরা বেগম, সাফোল্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মাওদুদুর রহমান, এ কে ওয়াহিদী প্রমুখ।

উল্লেখ্য, ভ্যালেরি টেইলরের জন্ম, শৈশব ও কৈশোর কেটেছে যুক্তরাজ্যের কেন্ট শহরে। ৮ ফেব্রুয়ারি, ১৯৪৪ সালে উইলিয়াম টেইলর এবং মেরি টেইলর দম্পতির ঘরে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তিনি তরুণ বয়সে ১৯৬৯ সালে ভলান্ট্যারি সার্ভিস ওভারসীজ (ভিএসও) নামক একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কাজে বাংলাদেশ আসেন। উদ্দেশ্য ছিল ফিজিওথেরাপি প্রদান। তিনি বাংলাদেশের চট্টগ্রামের নিকটে অবস্থিত চন্দ্রঘোনা খ্রিস্টান হাসপাতালে ফিজিওথেরাপিস্ট হিসেবে যোগ দেন।

১৯৯৮ সালে তাকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব প্রদান করা হয়। স্বেচ্ছাসেবা এবং সম্পূর্ণ আপন প্রচেষ্টায় একটি পূর্ণাঙ্গ সংগঠন প্রতিষ্ঠা করে তিনি বিশ্বে এক বিশেষ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।

taylor

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হওয়ার কারণে তিনি ইংল্যান্ডে ফিরে যেতে বাধ্য হন। কিন্তু ১৯৭১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তিনি পুনরায় বাংলাদেশে ফিরে আসেন। তখনও যুদ্ধ শেষ হতে দুই মাস বাকি ছিল। এ সময় তার কাজ আরও বেড়ে গিয়েছিল। কারণ যুদ্ধের কারণে পঙ্গুত্বের হার বেড়ে গিয়েছিল কয়েকগুণ। তিনি সফলভাবেই একাজ করতে সমর্থ হন। নয় মাস যুদ্ধের পর বাংলাদেশ নামে স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম হওয়ার পর তিনি আরও ২ বছর এদেশে থেকে তার কাজ চালিয়ে যান।

১৯৭৩ সালে আবার ইংল্যান্ডে ফিরে যান। উদ্দেশ্য ছিল মানবসেবার লালিত স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে বাংলাদেশে একটি স্বার্থক ফিজিওথেরাপি সংগঠন তৈরির জন্য উপযুক্ত অর্থ ও অন্যান্য সাহায্যের ব্যবস্থা করা। ১৯৭৫ সালে তিনি আবার বাংলাদেশে ফিরে আসেন।

দুস্থ ও দুর্গত মানুষের সেবার স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৯৫ সালে ব্রিটিশ সরকার তাকে ‘অর্ডার অব দ্য ব্রিটিশ এম্পায়ার’ পদকে ভূষিত করে। ১৯৯৬ সালে তিনি আর্থার আয়ার স্বর্ণপদক লাভ করেন। স্বাস্থ্যসেবায় অসামান্য অবদানের জন্য ১৯৯৮ সালে বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব প্রদান করেন। ২০০৪ সালে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক স্বীকৃতি হিসেবে ‘স্বাধীনতা পদক’ দেয়া হয়।

এছাড়াও তিনি বেসরকারি হাউজিং প্রতিষ্ঠান শেলটেক (প্রা.) লিমিটেড কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ১৯৯৮ সাল থেকে প্রবর্তিত শেলটেক পদক, ২০১১-এর জন্য মনোনীত হন। মানবসেবায় অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করায় সিআরপির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে তাকে এ পদক প্রদান করা হয়। একই কারণে রোটারি ইন্টারন্যাশনাল ডিস্ট্রিক্টের ‘দি ওয়ান প্রজেক্ট’ কর্তৃক তাকে এক লাখ মার্কিন ডলার পুরস্কারের ঘোষণা দেয়া হয়।

এসআর/জেআইএম

আরও পড়ুন