ভিডিও EN
  1. Home/
  2. প্রবাস

মালয়েশিয়ায় অবৈধ অভিবাসীদের পাশে দাঁড়ানো উচিত

রাশিদুল ইসলাম জুয়েল | প্রকাশিত: ০৪:০৮ পিএম, ০৫ জুলাই ২০১৮

কয়েকদিন আগে কুয়ালালামপুর এয়ারপোর্টের বোর্ডিং লাউঞ্জে বসে ছিলাম। সঙ্গে ছিলেন ব্যবসায়ী শামিম রহমান। তিনি ব্যবসার কাজে ঢাকা যাবেন। অলস সময়ে শামিম ভাই ফেসবুক চালাচ্ছেন। হঠাৎ একজন তরুণ এসে বললো- ভাই, দেশে এক মিনিট কথা বলা যাবে?

-হ্যা, যাবে। নম্বরটা বলুন

সঙ্গে সঙ্গে কল দিলাম। রিসিভ করলো তার মা পরে বুঝতে পারলাম বাবা অবশ্যই পাশেই ছিল। মা ও ছেলের কথোপকথন চলছে।

ছেলে বলছে- মা আমি আজকে চইলা আইতাছি। কপালে বিদেশ নাই। তোমরা কাইন্দো না। আমার কাছে কোন টাকা-পয়সা নাই, রাতে ঢাকা এয়ারপোর্টে নাইম্যা বাসে উঠার টাকাও নাই। যদি পারো সকালে কাউরে পাঠায়ো আমারে নেয়ার লাইগ্যা।

কয়েকটা কথা বলেই ফোনটা ফেরত দিলো। এই ফাঁকে দেখে নিলাম ছেলেটির পরনের ছেঁড়া কাপড়গুলো ঢাকার কোনো রিকশাচালকের চেয়েও বেশি খারাপ অবস্থায় আছে। পায়ের জুতাটাও ছিঁড়ে গেছে। জীর্ণ-শীর্ণ গায়ে খালি হাতে প্লেনে উঠতে যাচ্ছে ইমিগ্রেশনের কাজ শেষ করে।

সদ্য নির্বাচিত মালয়েশিয়া (মাহাথির-আনোয়ার) সরকারের অবৈধ অভিবাসী বিরোধী অভিযানের শিকার হয়ে এসব অভিবাসীদের দেশে পাঠিয়ে দিচ্ছে।

দালালদের কাছে জমি-জায়গা বিক্রি করে টাকা-পয়সা সর্বস্ব হারিয়ে, হয়তো কিছুদিন হাঁড়ভাঙা খেটে পেটে-ভাতে পড়ে ছিল এই ঝলমলে ধনীদের দেশে। বুক ভরা আশা ছিলো কষ্ট করে একদিন কর্মসংস্থান হবে, টাকা হবে। ভাগ্যের চাকা ঘুরে দাঁড়াবে। কিছুই হয়নি। নিঃস্ব হয়ে ফিরে যেতে হচ্ছে এসব তরুণদের। কার কি আসে যায়?

যদি এই ছেলেটি প্রতি মাসে দেশে টাকা পাঠাতো রেমিট্যান্স এর হিসাবটা না হয় বাড়তো। তবুও কি ওর ভালোমন্দে কারো কিছু এসে যেতো? হাজারও হতভাগার মধ্যে কয়েকশ’ মরে গেলেই বা কার কি? এদের রক্তনালীর উপর জোঁকের মতন বসে থাকা সিন্ডিকেট, যেখানে উভয় দেশের শাসক গোত্রের লোকেরাও জড়িত। এরা বেঁচে থাকলেও ওদের লাভ, মরে গেলেও ওদের লাভ।

আবার সেই আগের ঘটনায় ফিরে আসছি। ওই তরুণে চোখের কোনায় যে হতাশা আর অভিশাপের ছাপ দেখেছি তাতে মনে পড়লো- প্রকৃতির বিচার বলে একটা কথা আছে। একদিন ওদের প্রতি অন্যায়ের বিচার প্রকৃতিই করবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে অনুরোধ রইলো মালয়েশিয়ায় অবৈধ অভিবাসীদের তিনি যেন দেশে ফিরিয়ে নেন।

অবৈধ অভিবাসীদের অমানুষিক ও লোমহর্ষক নির্যাতন থেকে রক্ষা করেন। আপনি রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে বিশ্বের কাছে ‘মানবতার মা’ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন। প্রবাসীরাও আপনার সন্তান। মা সন্তানকে কখনো নিরাশ করে না। আশা করি আপনিও মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত জেলে ও বাহিরে অবৈধ অভিবাসীদের দেশে ফিরিয়ে নিবেন।

লেখক: রাশিদুল ইসলাম জুয়েল, প্রবাসী সাংবাদিক ও লেখক, সিঙ্গাপুর।

এমআরএম/জেআইএম

আরও পড়ুন