রোহিঙ্গাদের সাহায্যার্থে নিউইয়র্কে কনসার্ট
বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের সাহায্যার্থে কনসার্টের আয়োজন করেছে জাতিসংঘের স্টাফ রিক্রিয়েশন কাউন্সিলের ‘ইউএন চেম্বার মিউজিক সোসাইটি’। ২৫ জুন সোমবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭টায় ম্যানহাটানের বারুক পারফর্মিং আর্টস সেন্টারে এ কনসার্টের আয়োজন করা হয়। কনসার্টটিতে সহযোগিতা প্রদান করে বেসরকারি পারফর্মিং আর্টস গ্রপ ‘ব্রুকলীন রাগা ম্যাসিভ’।
মানবতার জন্য আয়োজিত এ কনসার্ট উপলক্ষে দেয়া জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেজের বাণী পাঠ করেন জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল অ্যান্ড্রু গিলমোর। জাতিসংঘ মহাসচিব তার বাণীতে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের আশ্রয়দান ও মানবিক সহযোগিতা প্রদানে বাংলাদেশের উদারতার কথা উল্লেখ করেন এবং রোহিঙ্গাদের সাহায্যার্থে এগিয়ে আসার জন্য এ জাতীয় কনসার্টের আয়োজনকে স্বাগত জানান।
অনুষ্ঠানটিতে বক্তব্য রাখেন জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন। তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের এই মানবিক সঙ্কট আমাদেরকে বহুমুখী চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে। সঙ্কটের মাত্রা এতটাই ব্যাপক যে, জাতিসংঘের সংস্থাসমূহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এই সঙ্কটে পাশে দাঁড়ানোর জন্য আহ্বান জানিয়েছে। এই মানবিক সঙ্কটে আমাদের সরকার ও জনগণের পক্ষে যা করা সম্ভব আমরা তার সবটুকুই করছি।'
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রদূত মাসুদ বলেন, ’শুধু মানবিক সহযোগিতাই নয়, বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গারা যাতে স্বেচ্ছায়, নিরাপদে এবং নিরাপত্তা ও মর্যাদার সাথে দ্রুততম সময়ে নিজভূমিতে ফিরে যেতে পারে, সে বিষয়ে আমরা আপনাদের সহযোগিতা প্রত্যাশা করছি।' জাতিসংঘ মহাসচিব ব্যক্তিগতভাবে রোহিঙ্গা সঙ্কটের বিষয়টি দেখছেন বলে উল্লেখ করেন রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন। মহাসচিবের আশু বাংলাদেশ সফর রোহিঙ্গা সঙ্কটের সমাধানে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে প্রত্যাশা করেন বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি।
নিউইয়র্কের জাতিসংঘ শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার অফিসের পরিচালক মিজ নিনিতি কেলী তার বক্তব্যে একসাথে বিপুলসংখ্যক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণের মতো ভয়াবহ পরিস্থিতি এবং তাদের মানবিক বিপর্যয়ের কথা তুলে ধরেন। রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য তিনি বাংলাদেশ সরকার ও জনগণকে ধন্যবাদ জানান। এ ধরনের কনসার্টের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের সাহায্যার্থে মেধাবীদের এগিয়ে আসার উদ্যোগের ভূয়সী প্রশংসা করেন কেলী।
অনুষ্ঠানটিতে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য পর্ব শেষে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের উপর নির্মিত একটি ভিডিও চিত্র প্রদর্শন করা হয়। এরপর শুরু হয় মূল আয়োজন কনসার্ট। পিয়ানো, ভায়োলিন ও তবলাসহ মধ্যযুগীয় বাদ্যযন্ত্র হারপিস্টের সুর-মূর্ছনায় মূখরিত হয়ে ওঠে গোটা অডিটোরিয়াম। একে একে পরিবেশিত হয় ৯টি মিউজিক্যাল আইটেম। ‘ইউএন চেম্বার মিউজিক সোসাইটি’র শিল্পীদের পরিবেশিত কন্ঠ ও যন্ত্রসঙ্গীতের পাশাপাশি স্থান পায় তবলাকে প্রাধান্য দিয়ে ‘আমারও পরানও যাহা চায়’ এই রবীন্দ্র সঙ্গীতের মিউজিক্যালটি। তবলায় সুর তোলেন ‘ব্রুকলীন রাগা ম্যাসিভ’র বিশিষ্ট শিল্পী প্রবাসী বাংলাদেশী মীর নকিবুল ইসলাম।
‘ইউএন চেম্বার মিউজিক সোসাইটি’র শিল্পীদের মধ্যে ছিলেন আরিয়েল হরোইটিস, জোনা উ, ফ্লোরি মার্শাল, মেইয়ানা জিয়াং, ক্রেইগ কেলোনোস্কি, ব্রেন্দা ভনগোভা ও ডেভিড ইয়ার্ডলী।
গোটা অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন ‘ইউএন চেম্বার মিউজিক সোসাইটি’র আর্টিস্টিক ডাইরেক্টর ব্রেন্দা ভনগোভা।
এই কনসার্ট থেকে উপার্জিত অর্থ বাংলাদেশের বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের মাধ্যমে বাংলাদেশে আশ্রিত বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের মানবিক সাহায্যার্থে প্রদান করা হবে। অনুষ্ঠানটিতে বিপুল সংখ্যক সঙ্গীত পিপাসু দর্শক-শ্রোতার পাশাপাশি জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনের কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
এসআর/পিআর