ভিডিও EN
  1. Home/
  2. প্রবাস

শ্রমিকরাও মানুষ

জমির হোসেন | ইতালি | প্রকাশিত: ০৪:২২ পিএম, ০১ মে ২০১৮

মানুষ তার নিজের বেঁচে থাকার, পরিবারকে ভরণ-পোষণের জন্য যে কাজ করে, তা-ই শ্রম। ধনি-দরিদ্র, শিক্ষিত-অশিক্ষিত, নর-নারী নির্বিশেষে সব মানুষই কোনো না কোনো কাজ করে। আর যে কোনো কাজ করতে গেলেই প্রয়োজন হয় শ্রমের। পৃথিবীর সব ভূ-খণ্ডেই শ্রমিক রয়েছে। আর এসব শ্রমিকেরা দেশজুড়ে প্রতিনিয়ত লাঞ্ছিত হচ্ছে।

শ্রমজীবীদের দেয়া হচ্ছে না ন্যায্য অধিকার। যুগ যুগ ধরে কর্মজীবী মানুষগুলো শ্রম দিয়ে যে কোনো প্রতিষ্ঠানকে তিলে তিলে গড়তে কাজ করে যাচ্ছে। বিনিময়ে অসহায়ত্ব বরণ করতে হয় শ্রমিকদের।

শ্রমিকের সময়ের মূল্যকে সঠিকভাবে মূল্যায়ন না করার কারণে ঠিকমতো সংসার চালাতে পারছে না। শ্রমিক-মালিকের মধ্যে তৈরি হয়েছে বৈষম্য। ফলে খোলামেলা নিজের সমস্যাটুকু প্রকাশ করতে পারে না শ্রমিকেরা। বোবা কান্না নিয়ে কর্ম চালিয়ে যায় বছরের পর বছর। অতিরিক্ত শ্রম দিয়ে যখন ন্যায্য মূল্য পাচ্ছিল না। ঠিক তখন ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের ডাক দেন মেহনতি মানুষেরা।

১৮৮৬ আমেরিকার সিকাগো শহরে হে মার্কেটের ম্যাসাকারে সঠিক শ্রম মূল্যায়ন পেতে আন্দোলন করেন। ওই সময় শ্রমিকদের জীবনের মাধ্যমে নিজেদের অধিকার আদায় করতে সক্ষম হয়। পাশবিক নির্যাতনের মধ্যেও সেদিন ৮ ঘণ্টা কাজ, বাঁচার জন্য ন্যূনতম মজুরি এবং মানবিক আচরণ মালিকদের কাছ থেকে দাবি জানিয়ে আন্দোলনে নেমে পড়েন শ্রমিকেরা।

মালিক শ্রেণিরা যৌক্তিক দাবি না মেনে পুলিশ প্রশাসন লেলিয়ে শ্রমিকদের ওপর নির্যাতন চালায়। তবুও অধিকার আদায়ে থেমে থাকেনি এসব মানুষেরা। অধিকার আদায়ের জন্য সম্মিলিত আন্দোলন গড়ে তোলেন। ওই আন্দোলনে প্রশাসনের অত্যাচারে প্রায় ১২ জনকে প্রাণ দিতে হয়েছে পাশাপাশি একজন পুলিশও নিহত হয়।

এছাড়া শ্রমিক নেতাদের নামে মিথ্যা মামলা দেয়া হয় এবং এসব মামলার অভিযোগ কোর্টে প্রমাণসহ ৭ জনের ফাঁসি এবং ১ জনকে ১৫ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়।

পরবর্তী সময় ১৮৮৭ সালে ১১ নভেম্বর ফাঁসিতে ঝুলানো হয় ‘নিব’ নামে এক শ্রমিককে। পরবর্তীতে আন্দোলন থেমে থাকেনি বরং এ আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বময়। এরপর পহেলা মে জাতীয় শ্রমিক দিবস হিসেবে বিশ্বের প্রায় ৮০ দেশে এ দিনটিকে ছুটির দিন হিসেবে যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করা হয়।

১৮৮৯ সালে ফরাসি বিপ্লবের শত বার্ষিকীতে প্যারিসে কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয়। এরপর ১৮৯০ থেকে শিকাগো প্রতিবাদের বার্ষিকী হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে দিনটি বিভিন্ন দেশে পালনের প্রস্তাব দেন রেমন্ড লাভিনে। পরের বছর ১৮৯১ সালে আন্তর্জাতিক দ্বিতীয় কংগ্রেসে এ প্রস্তাব আনুষ্ঠানিকভাবে গৃহীত হয়।

অন্যদিকে ১৮৯৪ সালে মে দিবসেই একটি দাঙ্গার ঘটনা ঘটে। পরবর্তীতে ১৯০৪ সালে আমস্টারডাম শহরে সমাজতন্ত্রীদের আন্তর্জাতিক সম্মেলনে একটি প্রস্তাব গৃহীত হয়। শ্রম কমিয়ে দৈনিক আট ঘণ্টা কাজের সময় নির্ধারণের দাবি আদায়ের জন্য শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বিশ্বজুড়ে পহেলা মে মিছিল ও শোভাযাত্রা আয়োজনে সব সমাজবাদী গণতান্ত্রিক দল এবং শ্রমিক সংঘের (ট্রেড ইউনিয়নের) প্রতি আহ্বান জানানো হয়।

সেই থেকে বহু দেশেই শ্রমজীবীরা পহেলা মে সরকারি ছুটির দিন হিসেবে পালন করার দাবি জানায়। দীর্ঘদিন ধরে সমাজতান্ত্রিক, কমিউনিস্টসহ কিছু কট্টরপন্থী সংগঠন তাদের দাবি জানানোর জন্য মে দিবসকে মুখ্য দিন হিসেবে বেছে নেয়। এরই ধারাবাহিকতায় আবার কোনো কোনো স্থানে শিকাগোর হে মার্কেটের আত্মত্যাগী শ্রমিকদের স্মরণে আগুন জ্বালানো হয়।

সোভিয়েত রাষ্ট্র, চীন, কিউবাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই মে দিবস তাৎপর্যপূর্ণ দিন হিসেবে সম্মান জানানো হয়। এমনকি এ উপলক্ষে এ দেশগুলোতে সামরিক কুচকাওয়াজের আয়োজন করা হয়ে থাকে। দিনটি বাংলাদেশ এবং ভারত যথাযথভাবে পালন করে আসছে। ১৯২৩ সালে ভারতে প্রথম মে দিবস পালন করা হয়। শ্রমিকদের যথাযথ শ্রমের মূল্য দেয়া হয়।

রানা প্লাজা দুর্ঘটনা পৃথিবীতে কলঙ্কময় ইতিহাস। ২৪ এপ্রিল ২০১৩ বেদনাময়, হৃদয় বিদারক এই দুর্ঘটনা শ্রমিকদের হৃদয়জুড়ে এখনো পীড়া দেয়। বিশেষ করে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবসে দুঃখবহ ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয় শ্রমিকদের মনে। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে স্পর্শকাতর বিরল একটি ঘটনা। যা বিশ্বময় তোলপাড় সৃষ্টি হয়। পাশাপাশি বিশ্ব গণমাধ্যমে ফুটে উঠে বাংলাদেশে শ্রমিক ঠকানো চিত্র।

রানা প্লাজা ট্রাজেডির ফলে বিশ্বের উন্নত দেশগুলো শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধিসহ ফ্যাক্টরিগুলোর মধ্যে পর্যাপ্ত নিরাপদ ব্যবস্থার দুরবস্থার কথা তুলে ধরেন। পরবর্তীতে শ্রমিকদের ঠিকমত মজুরিসহ সঠিক নিয়মে ফ্যাক্টরিগুলো মেরামত করার তাগিদ দেন। এই দুর্ঘটনায় কমপক্ষে এক হাজার ১৭৫ জন শ্রমিক নিহত হয় এবং দুই হাজারেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছে যা বিশ্বের ইতিহাসে ৩য় বৃহত্তম শিল্প দুর্ঘটনা হিসেবে বিবেচিত।

লেখক : প্রবাসী সংবাদকর্মী

এমআরএম/এমএস

আরও পড়ুন