ভিডিও EN
  1. Home/
  2. প্রবাস

মালয়েশিয়ার সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী

রোহিঙ্গা সংকট একটি আসিয়ান সংকট

আহমাদুল কবির | মালয়েশিয়া | প্রকাশিত: ০৯:৫৮ এএম, ১২ এপ্রিল ২০২৫

‘রোহিঙ্গা সংকট শুধু মিয়ানমার ও বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক সমস্যা হিসেবে দেখা যাবে না—এটি এখন আসিয়ান অঞ্চলের একটি সম্মিলিত মানবিক ও নিরাপত্তা সংকট। বর্তমান বৈশ্বিক ব্যবস্থাপনা কাঠামো অকার্যকর প্রমাণিত হয়েছে, ফলে এখন সময় এসেছে বিকল্প কৌশল ও আঞ্চলিক সহযোগিতার মাধ্যমে এর কার্যকর সমাধান অনুসন্ধানের।’

বুধবার (৯ এপ্রিল) ‘রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে বৈশ্বিক অঙ্গীকার’ শীর্ষক একটি আঞ্চলিক গোলটেবিল বৈঠক মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে হোটেলে দেশটির সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও ওয়াইসি স্টাডি গ্রুপের চেয়ারম্যান ড. সৈয়দ হামিদ আলবার এসব কথা বলেন।

মুসলিম ওয়ার্ল্ড রিসার্চ সেন্টার, ওআইসি স্টাডি গ্রুপের যৌথ উদ্যোগে এবং ক্যাবল নিউজ ইন্টারন্যাশনাল) ও ইনস্টিটিউট অব পলিসি, গভর্নেন্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট বাংলাদেশের সহযোগিতায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মালয়েশিয়ার সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও ওয়াইসি স্টাডি গ্রুপের চেয়ারম্যান ড. সৈয়দ হামিদ আলবার। এতে সভাপতিত্ব করেন মুসলিম ওয়ার্ল্ড রিসার্চ সেন্টারের প্রেসিডেন্ট এবং ওআইসি স্টাডি গ্রুপের সেক্রেটারি জেনারেল ড. ইশারফ হোসেন।

রোহিঙ্গা সংকট একটি আসিয়ান সংকট

হামিদ আলবার বলেন, মালয়েশিয়া বর্তমানে আসিয়ানের চেয়ার হওয়ায়, এটি কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের একটি গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ। বিশেষ করে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী দাতো সেরি আনোয়ার ইব্রাহিম ও বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মধ্যে বিদ্যমান সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক থাকা এই সংকটের টেকসই সমাধানে সহায়ক হতে পারে।

বিমসটেক সম্মেলনে মিয়ানমার ১.৮ লাখ রোহিঙ্গা ফেরত নেওয়ার প্রতিশ্রুতি উল্লেখ করে তিনি মন্তব্য করেন, শুধু চুক্তি যথেষ্ট নয়—বাস্তবায়নই মূল চাবিকাঠি। শুধু অ্যাডভোকেসি নয়, এখন প্রয়োজন বহুস্তরীয় কূটনৈতিক উদ্যোগ এবং সংশ্লিষ্ট সকল অংশীজনের সক্রিয় অংশগ্রহণ।

আলোচনায় অন্যান্যদের মধ্যে সিএনআইয়ের ভাইস চেয়ারম্যান আশফাক জামান বলেন, ‘রোহিঙ্গা সংকটের কার্যকর সমাধানে পারস্পরিক আস্থা, প্রত্যাশা এবং বাস্তবায়নযোগ্য দৃষ্টিভঙ্গির প্রয়োজন। চুক্তি কার্যকর করতে হবে—এই মানুষগুলোকে অবশ্যই আশার বার্তা দিতে হবে।’

মালয়েশিয়ার ইসলামি এনজিও অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি জামাল শামসুদ্দিন বলেন, মালয়েশিয়া দীর্ঘদিন ধরে রোহিঙ্গা জনগণের পাশে রয়েছে—এখন সময় এসেছে আসিয়ান জোটের নেতৃত্বে এই সংকট সমাধানের জরুরি কার্যকর ভূমিকা নেওয়ার।

মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাবেক উপদেষ্টা মো. ফাহমি সামসুদ্দিন, বলেন, মুসলিম বিশ্বের নৈতিক ও ধর্মীয় দায়িত্ব হলো রাষ্ট্রহীন ও নিপীড়িত জনগোষ্ঠীর পাশে দাঁড়ানো। এই সংকট সমাধানে আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে কার্যকর সমন্বয় জরুরি।

পাকিস্তান হাইকমিশনের কূটনীতিক আহাদ আসাদ আব্বাস খান বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যার দ্রুত সমাধানে মুসলিম বিশ্বের একটি ঐক্যবদ্ধ অবস্থান গড়ে তুলতে হবে, যেন রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের ন্যায়বিচার, সুরক্ষা এবং স্বেচ্ছাপ্রসূত প্রত্যাবাসন নিশ্চিত হয়।

ইউনিভার্সিটি অব মালায়ার শিক্ষক ড. সাহাবুদ্দিন আহমেদ ও মালয়েশিয়া বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ডা. বোরহান আহমেদ রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ও প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার উদ্যোগ ও ভূমিকার কথা উল্লেখ করে এই বিষয়ে বর্তমানে বিএনপির অবস্থান তুলে ধরেন।

রোহিঙ্গা সংকট একটি আসিয়ান সংকট

মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি মোহাম্মদ সাদেক বলেন, উদ্বাস্তু রোহিঙ্গাদের ক্ষেত্রে নাগরিক অধিকার, নিরাপত্তা এবং মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসন—নিশ্চিত করা ছাড়া কোনো সমাধান টেকসই হবে না।

ইনস্টিটিউট অব পলিসি, গভর্নেন্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ আলাউদ্দিন বলেন, রোহিঙ্গা সংকট বাংলাদেশের জন্য এখন আর কেবল মানবিক কিংবা রাজনৈতিক সমস্যাই নয়; এটি এখন বাংলাদেশের ভূ-রাজনীতি ও জাতীয় নিরাপত্তার সাথে সরাসরি জড়িত। বঙ্গোপসাগরের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হলে দক্ষিণমুখী কূটনীতির নতুন বাস্তবতা ও শক্ত অবস্থান দরকার।

তিনি আরও উল্লেখ করেন, ৫ জুলাই গণঅভ্যুত্থান ২৪ এর মধ্য দিয়ে সম্প্রতি বাংলাদেশে এনসিপি নামের তারুণ্য শক্তির নেতৃত্বে যে রাজনৈতিক শক্তির উত্থান ঘটেছে তারাও রোহিঙ্গা সংকটের সমাধানের ব্যাপারে খুবই সজাগ ও তৎপর।

সভাপতির বক্তব্যে ড. ইশারফ হোসেন বলেন, রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে বাংলাদেশের বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার যথেষ্ট তৎপর ও আন্তরিক। যার ফলশ্রুতিতে জাতিসংঘ মহাসচিবের সাম্প্রতিক সফরটি সম্ভব হয়েছে। তার এই সফর আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক ক্ষেত্রে রোহিঙ্গা সঙ্কটের ভূরাজনৈতিক ও কৌশলগত গুরুত্ব বাড়িয়ে দিয়েছে। ফলে বৈশ্বিক শক্তিগুলো রোহিঙ্গা সংকটের দিক নতুনভাবে মনোযোগ দিয়েছেন যা গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যবাহী। বর্তমান পরিপ্রেক্ষিতে তাই বাংলাদেশের পক্ষে আসিয়ানের বর্তমান চেয়ারম্যান মালয়েশিয়ার সঙ্গে আরও যোগাযোগ বৃদ্ধি ও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া দরকার কারণ প্রায় সকল বক্তাই আলোচনায় অভিমত ব্যক্ত করেন যে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও বহুস্তরীয় কূটনৈতিক কৌশলের মাধ্যমে, আসিয়ানসহ গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক অংশীদার ও মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোকে সম্পৃক্তকরণের মাধ্যমে এই সংকটের দ্রুত, টেকসই ও সম্মানজনক সমাধান সার্ক, আসিয়ান অঞ্চলের বৃহত্তর আঞ্চলিক স্বার্থে করা দরকার। এক্ষেত্রে প্রফেসর ড ইউনূসের ঘনিষ্ঠ বন্ধু এবং আসিয়ানের বর্তমান চেয়ারম্যান আনোয়ার ইব্রাহিম যৌথভাবে বিশেষ উদ্যোগ নিতে পারেন, যা আসিয়ানের আসন্ন মূল সম্মেলনে আলোচ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত হতে পারে।

এমআরএম/এমএস