সাড়ে ৭ বছর পর দেখা হবে মা-ছেলের
উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডন যাচ্ছেন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। এরইমধ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন তিনি। কাতারের আমিরের পাঠানো বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে মঙ্গলবার রাত ১০টায় লন্ডনের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়বেন তিনি। চিকিৎসকদের পরামর্শে তার দেশের ফেরার তারিখ নির্ধারণ হবে। এই সফরের মধ্য দিয়ে নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে সাড়ে সাত বছর পর খালেদা জিয়ার সঙ্গে তার বড় ছেলে ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেখা হবে।
দলীয় সূত্র বলছে, লন্ডনে পৌঁছে সরাসরি হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার কথা রয়েছে খালেদা জিয়ার। তারেক রহমানের সঙ্গে লন্ডনে কিছুদিন থাকার পর যাবেন যুক্তরাষ্ট্রে। মেরিল্যান্ডের পূর্ব বাল্টিমোরে অবস্থিত জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের হাসপাতালে চিকিৎসা নেবেন তিনি।
২০১৭ সালের ১৬ জুলাই সর্বশেষ সাক্ষাৎ
তারেক রহমান ২০০৭ সাল থেকে লন্ডনে রয়েছেন। কাল মঙ্গলবার রাত ১০টায় বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকার আকাশ থেকে উড্ডয়নের কয়েক ঘণ্টা পর লন্ডনে পৌঁছাবেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। আর সেখানেই দেখা হবে তারেক রহমানের সঙ্গে।
এর আগে চোখ ও পায়ের ফলোআপ চিকিৎসার জন্য ২০১৭ সালের ১৫ জুলাই সন্ধ্যায় এমিরেটস এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে লন্ডনের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেছিলেন খালেদা জিয়া। সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে তিনি যাত্রাবিরতি করেন। ১৬ জুলাই বাংলাদেশ সময় দুপুর ১২টা ৫০ মিনিটের দিকে খালেদা জিয়া লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দরে অবতরণ করেন। সে সময় বিএনপির তৎকালীন সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং যুক্তরাজ্য বিএনপির বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী বিমানবন্দরে খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানান। লন্ডনে সাক্ষাৎকালে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান উভয়ই আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। তারেক রহমান তখন নিজের গাড়িতে করে মা খালেদা জিয়াকে গন্তব্যে নিয়ে যান।
খালেদা জিয়ার বিদেশ যাত্রার প্রস্তুতি সম্পন্ন
সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসায় বিদেশ যাত্রার জন্য কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি রাজকীয় বহরের এয়ার অ্যাম্বুলেন্স দিয়েছেন। সর্বাধুনিক চিকিৎসা সুবিধা সংবলিত এই বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের ফ্লাইটে করে মঙ্গলবার রাতে লন্ডন যাবেন খালেদা জিয়া। এ সফরের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। তারই অংশ হিসেবে রোববার রাতে দলের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যরা শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন খালেদা জিয়ার সঙ্গে। এছাড়াও এলডিপি চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) অলি আহমদ ও রাষ্ট্রদূত মুশফিকুল ফজল আনসারী পৃথকভাবে সাক্ষাৎ করেছেন বিএনপি নেত্রীর সঙ্গে।
আরও পড়ুন:
- মঙ্গলবার রাতে লন্ডন যাচ্ছেন খালেদা জিয়া: ফখরুল
৪ বছরে ৮ মাসই হাসপাতালে ছিলেন খালেদা জিয়া
খালেদা জিয়ার সঙ্গে সেনাপ্রধানের সাক্ষাৎ
অর্ধযুগ ধরে খালেদা জিয়ার বিদেশ চিকিৎসার দাবি
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দুই মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কারাগারে যান খালেদা জিয়া। এরপর থেকেই খালেদা জিয়ার বিদেশে উন্নত চিকিৎসার জন্য তার পরিবার এবং দল থেকে একাধিকবার দাবি জানানো হচ্ছিল। কারাবাসকালীন খালেদা জিয়াকে কারা কর্তৃপক্ষ তৎকালীন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে ভর্তি করলেও বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দেয়নি সরকার। ২০২০ সালের মার্চে তৎকালীন সরকারের নির্বাহী আদেশে শর্তসাপেক্ষে সাময়িক মুক্তি পান তিনি। কারামুক্তির পর থেকে খালেদা জিয়া গুলশানের বাসভবন ফিরোজায় থাকলেও এ সময়ে তাকে একাধিকবার জরুরি ভিত্তিতে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার হার্টে রিং পরানো হয়েছে, লিভার সিরোসিসের চিকিৎসায় যুক্তরাষ্ট্র থেকে চিকিৎসক এনে ‘টিপস’ করানো হয়েছে। কিন্তু তারপরও তার বিদেশে চিকিৎসার দরজা উন্মুক্ত হচ্ছিল না।
আরও পড়ুন:
- জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালাস পেলেন খালেদা জিয়া
মানহানির পাঁচ মামলায় খালাস পেলেন খালেদা জিয়া
সেনাকুঞ্জে খালেদা জিয়া
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পরদিন ৬ আগস্ট খালেদা জিয়া মুক্তি পান। এর পরপরই তার বিদেশযাত্রা নিয়ে প্রস্তুতি শুরু হয়। তিনি কোন দেশে যেতে পারেন, সেটা নিয়ে খালেদা জিয়ার মেডিকেল বোর্ড ও পরিবার একাধিকবার বৈঠক করেছে। এ সময়ের মধ্যে বেগম জিয়ার শারীরিক অবস্থাও দীর্ঘ ভ্রমণের জন্য সায় দিচ্ছিল না। এমন অবস্থায় তার শারীরিক অবস্থা দীর্ঘ ভ্রমণের উপযোগী করে তোলা, কোনোভাবে তাকে বিদেশে নেওয়া যায় এবং তার পাসপোর্ট জটিলতা নিরসনের ব্যাপারেও উদ্যোগ নেওয়া হয়। এরইমধ্যে তার নতুন পাসপোর্ট করানো, ভিসা জটিলতা সব কিছু কেটে গেছে। তিনি যুক্তরাজ্য ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরবের ভিসাও পেয়েছেন।
২০০৭ সাল থেকে খালেদা জিয়ার বড় ছেলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডনে। মঙ্গলবার রাত ১০টায় বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে ঢাকার আকাশ থেকে উড্ডয়নের কয়েক ঘণ্টা পর লন্ডনে পৌঁছাবেন খালেদা জিয়া। সেখানেই দেখা হবে তারেক রহমানের সঙ্গে।
খালেদা জিয়ার সফর সঙ্গী
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার এবারের বিশেষ সফর সঙ্গীর বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো না হলেও চিকিৎসক, পরিবারের সদস্য এবং দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতাসহ অন্তত ২৫ থেকে ৩০ জন যেতে পারেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। তবে এরইমধ্যে সোশ্যাল মিডিয়াসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে খালেদা জিয়ার সফর সঙ্গী হিসেবে সাতজন চিকিৎসকসহ ১৫ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল যাবে এমন তথ্য প্রচারিত হয়েছে। ওই তথ্য অনুযায়ী, সফর সঙ্গীদের মধ্যে রয়েছেন খালেদা জিয়ার প্রয়াত ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী সৈয়দা শর্মিলা রহমান, বিএনপির চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, ডা. মো. এনামুল হক চৌধুরী, তাবিদ মোহাম্মদ আওয়াল, ফখরুদ্দীন মোহাম্মদ সিদ্দিক, মো. শাহাবুদ্দীন তালুকদার, নুরুদ্দীন আহমাদ, মো. জাকির ইকবাল, মোহাম্মদ আল মামুন, শরিফা করিম স্বর্ণা, চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা এবিএম আব্দুস সাত্তার, মো. মাসুদুর রহমান, এসএম পারভেজ, ফাতেমা বেগম এবং রুপা শিকদার। তবে এ নিয়ে এখন পর্যন্ত বিএনপির পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক তথ্য পাওয়া যায়নি।
খালেদা জিয়ার চিকিৎসা হবে যেখানে
লিভার সিরোসিস, হৃদরোগ, কিডনি সমস্যাসহ নানা স্বাস্থ্য জটিলতায় দীর্ঘদিন ভুগতে থাকা ৭৯ বছর বয়সী খালেদা জিয়া লন্ডনে ছেলের বাসায় কয়েকদিন থাকার পরে লিভারের উন্নত চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে যাবেন।
চিকিৎসা সম্পন্ন হলেই খালেদা জিয়া দেশে ফিরবেন। ফেরার পথে সৌদি আরবে পবিত্র ওমরাহ পালন করতে পারেন তিনি। আলোচনা আছে, মায়ের সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও একত্রে দেশে ফিরতে পারেন।
যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ডে জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটি হাসপাতালের মাল্টি ডিসিপ্ল্যানারি কেয়ার ইউনিটে খালেদা জিয়া লিভার ট্রান্সপারেন্টের চিকিৎসা নেবেন। এরইমধ্যে তার যাবতীয় চিকিৎসার কাগজপত্র, বিভিন্ন পরীক্ষার রিপোর্টসমূহ সেখানে পাঠানো হয়েছে। এই হাসপাতালের তিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক গত ২৬ অক্টোবর ঢাকায় এসে এভারকেয়ার হাসপাতালে খালেদা জিয়ার লিভার ও পেটের ফ্লুইড জমা ও রক্তক্ষরণ রোধে চিকিৎসা বিজ্ঞানের বিশেষ পদ্ধতি টিআইপিস-টিপস সম্পন্ন করেছিলেন। তাদের নেতৃত্বে একটি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক টিম বিএনপি চেয়ারপারসনের লিভার ট্রান্সপারেন্ট চিকিৎসা কার্যক্রম পরিচালনা করবেন। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, বেগম খালেদা জিয়ার এই চিকিৎসায় কমপক্ষে দুই মাস সময় লাগতে পারে।
আরও পড়ুন:
- তারেক রহমানকে রিমান্ডে ‘নিষ্ঠুর নির্যাতন’ করা হয়েছে
রাষ্ট্রপক্ষের আপিল খারিজ, তারেক রহমানের ৪ মামলা বাতিলের রায় বহাল
মানবকল্যাণে নিজেদের সম্পৃক্ত করলে স্রষ্টার সন্তুষ্টি অর্জন সম্ভব
পবিত্র ওমরাহ শেষে একত্রে দেশে ফিরতে পারেন মা-ছেলে
বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে আলোচনা রয়েছে, চিকিৎসা সম্পন্ন হলেই খালেদা জিয়া দেশে ফিরবেন। ফেরার পথে সৌদি আরবে পবিত্র ওমরাহ পালন করতে পারেন তিনি। এমনও আলোচনা আছে, মায়ের সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও একত্রে দেশে ফিরতে পারেন।
কেএইচ/এসএনআর/এমএমএআর/জেআইএম