ভিডিও EN
  1. Home/
  2. রাজনীতি

মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারীদের ছবক শুনতে জাতি রাজি নয়: গয়েশ্বর

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ০৯:৪৩ পিএম, ০২ জানুয়ারি ২০২৫

মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারীদের ছবক শুনতে জাতি রাজি নয় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়।

তিনি বলেছেন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ ও পঁচাত্তরের ৭ নভেম্বরের পরাজিত শক্তি মিলে যারা জাতীয়তাবাদী শক্তির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করবেন, তাদের রুখে দেওয়ার ক্ষমতা এদেশের জনগণ রাখে। জাতি তাদের ছবক শুনতে রাজি নয়।

বৃহস্পতিবার (২ জানুয়ারি) রাজধানীর দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানা বিএনপির উদ্যোগে কর্মীসভা ও সদস্য ফরম বিতরণ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। এতে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানা বিএনপির সভাপতি নিপুণ রায় চৌধুরী।

রাষ্ট্র সংস্কারের প্রয়োজন আছে উল্লেখ করে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, আমরাও সংস্কার চাই, এজন্য আমরা ৩১ দফা দিয়েছি। কিন্তু এই যে তারা (বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি) যেটা দিতে চায়, সেটা আমাদের না দিলেও আমরা তা কোনো না কোনোভাবে পেয়েছি। সেখানে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধকে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন

তিনি বলেন, এদের ঘাড়ে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারীরা চেপে বসেছে। তারা আকারে ইঙ্গিতে তারা বলতে চায় বাংলাদেশ ৫ আগস্ট (২০২৪ সাল) স্বাধীন হয়েছে। তাহলে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে কি গরু-ছাগল রক্ত দিয়েছে, নাকি মানুষ রক্ত দিয়েছে? এদের ছবক জাতি শুনতে রাজি নয়।

বিএনপির এ জ্যেষ্ঠ নেতা আরও বলেন, আমরা অনেককেই ক্ষমা করতে পারি, ভুলে যেতে পারি। ক্ষমা মহত্বের লক্ষণ। কিন্তু ক্ষমা করার পরও কেউ যদি আবার একই কাজ করেন, তাহলে ভুলে গেলে চলবে না। মুক্তিযুদ্ধবিরোধীদের রুখে দেওয়ার ক্ষমতা এদেশের জনগণ রাখে। জনগণকে নেতৃত্ব দেওয়ার যোগ্য নেতৃত্বও আছে।

তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান যেখানে থেমেছেন খালেদা জিয়া সেখান থেকে শুরু করেছেন। তাদের যোগ্য উত্তরসূরি তারেক রহমান এখন নেতৃত্ব দিচ্ছেন। যুক্তরাজ্য থেকে দল ও দেশবাসীকে সংগঠিত করে ৫ আগস্ট সরকারের পতন নিশ্চিত করেছেন। কিন্তু এর ফলাফল যতক্ষণ পর্যন্ত নিজেদের গোলায় না উঠে, ততক্ষণ তিনি (তারেক রহমান) সক্রিয় আছেন, আমরাও সক্রিয় আছি।

গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, সবচেয়ে সৌভাগ্যের বিষয় আমি মুক্তিযুদ্ধ করতে পেরেছি। বাংলাদেশে স্বাধীনতারযুদ্ধ তো বারবার হবে না, আমরা সেই যুদ্ধটা করতে পেরেছি। যে আশা নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ করেছি, সেই আশা পূরণ হয়নি বলেই তো আওয়ামী লীগের এমন পরিণতি হয়েছে। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট মর্মান্তিক ঘটনার মধ্যদিয়ে শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হলেও আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেই কিন্তু সরকার গঠন করা হয়েছিল, যার নেতৃত্বে ছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা খন্দকার মোশতাক।

তিনি আরও বলেন, পঁচাত্তরের ৭ নভেম্বর সিপাহী-জনতার সংগঠিত হওয়ার মধ্যদিয়ে ধারাবাহিক প্রক্রিয়ায় জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এলেন। তিনি বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করলেন। নব্বইয়ে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে স্বৈরাচারের পতন ঘটে। মুক্তিযুদ্ধ, সিপাহী-জনতার বিপ্লব এবং নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থান কি ইতিহাসের পাতা থেকে বের করে দেবেন? স্বাধীনতাযুদ্ধ থেকে প্রতিটি আন্দোলনে ছাত্র-জনতা ছিল, তারা কি রাষ্ট্রক্ষমতায় বসেছিল?

গত ১৬ বছর ধরে বিএনপি আন্দোলন করছে উল্লেখ করে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ছাত্রদের কোটাবিরোধী ও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ৮ দফার মধ্যে সরকার পতনের দাবি ছিল না। তারা এই আন্দোলনে নামার পরই আমরা প্রকাশ্যে সমর্থন জানিয়েছি, আমি নিজে সাক্ষী। ছাত্ররা আন্দোলনে নামার পরপরই আমি আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে মোবাইল ফোনে ক্ষুদে বার্তা পাঠালাম। পাঁচ মিনিটের মধ্যে তিনি আমার ফোনে কল করলেন। বললেন, বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, তাহলে সবাইকে ডেকে বসি। বিকেল চারটার দিকে কথা, ছয়টায় দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির জরুরি বৈঠক ডাকলেন। সেই বৈঠক থেকে ছাত্রদের আন্দোলনের প্রতি নৈতিক সমর্থন জানানো হলো।

আরও পড়ুন

‘ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানও সক্রিয় হয়ে উঠলেন। টেলিফোনে তিনি সবার সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করলেন। আমাকে বললেন, শুধু নৈতিক সমর্থন যথেষ্ট নয়, সবাইকে সক্রিয় করতে হবে। আমি বললাম অবশ্যই সক্রিয় করতে হবে। তবে দলীয় ব্যানার ছাড়া আমরা সবাই এই আন্দোলনে অংশ নেবো। আমাদের ছাত্র-যুবক নেতাকর্মীরা মাঠে নেমে পড়লো। শেখ হাসিনা কিন্তু বারবার বলছেন, এটি (আন্দোলন) বিএনপির ষড়যন্ত্র।’

বিএনপির এ নেতা বলেন, এরপর আমরা (আন্দোলনে) সর্বাত্মক সমর্থন জানালাম। আমরা বিএনপির পোশাক ছেড়ে ছাত্র-জনতার হয়ে গেলাম। এই আন্দোলনে শুধু ছাত্ররাই নামেনি, দেশের সব মানুষ নেমেছিল। কারা এদের রাজপথে নামিয়েছিল, বিএনপিই নামিয়েছিল।

গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, আমরা ছাত্রদের এখনো অভিনন্দন জানাই। তবে ১৫ দিনের পুঁজি দিয়ে রাস্তায় বেশিদিন হাঁটা যায় না। আমরা ১৬ বছর ধরে আন্দোলন করছি। প্রত্যেকের রক্তের মূল্য আছে। যে সর্বশেষ রক্ত দিয়েছে তারও যেমন আছে, যে সবার আগে দিয়েছে তারও আছে।

তিনি বলেন, বিগত সময়ে ছাত্রদের প্রতিটি আন্দোলনে বিএনপি সমর্থন দিয়েছে। এ কারণে আন্দোলনে সফলতাও এসেছে। কিন্তু গত ১৬ বছরে আমাদের কয়টি আন্দোলনে তারা রাস্তায় নেমেছেন? সেই কারণে জনগণের কাছে মুখ্য হচ্ছে গণতন্ত্র, নির্বাচন, নির্বাচিত প্রতিনিধি ও নির্বাচিত সরকার।

কেএইচ/এমকেআর/জেআইএম