ভিডিও EN
  1. Home/
  2. রাজনীতি

নিষিদ্ধের সিদ্ধান্তে জামায়াতের প্রতিক্রিয়া

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ০৬:২১ পিএম, ০১ আগস্ট ২০২৪

সরকার নিজেদের অপকর্ম ঢাকার জন্য বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে চলমান আন্দোলনকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে চাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে দলটি। আজ বৃহস্পতিবার নিষিদ্ধ ঘোষণা করে সরকারের গেজেট জারির পর এক বিবৃতিতে এই অভিযোগ করেছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান।

বিবৃতিতে জামায়াতে ইসলামীর আমির বলেন, ‘বাংলাদেশের সংবিধান সব নাগরিকের সভা-সমাবেশ ও সংগঠন করার অধিকার দিয়েছে। সরকার ‘বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী’ ও ‘বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির’ কে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে সংবিধান লঙ্ঘন করেছে। আমরা সরকারের এই অসাংবিধানিক, অগণতান্ত্রিক ও অন্যায় সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’

জামায়াতে ইসলামীর সব স্তরের জনশক্তিকে ধৈর্য ও সহনশীলতার সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলা করার আহ্বান জানিয়ে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, সরকার বিভিন্ন অঘটন ঘটিয়ে জামায়াতের ওপর দোষ চাপানোর চেষ্টা চালাতে পারে। এই ব্যাপারে দেশবাসী সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। সরকারের পাতা ফাঁদে পা দেয়া যাবে না।

জামায়াতের আমির বলেন, ‘নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে নিয়মতান্ত্রিকভাবে প্রতিবাদে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। সেই সঙ্গে বিশ্বের গণতান্ত্রিক দেশ, প্রতিষ্ঠান, মানবাধিকার সংস্থা ও সংগঠন এবং বিশ্ব বিবেককে বাংলাদেশের ডামি সরকারের সব অগণতান্ত্রিক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছি।’

এদিকে, নিষিদ্ধের সিদ্ধান্তে পৃথক বিবৃতিতে প্রতিক্রিয়া দিয়েছে ছাত্র শিবির। ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি মঞ্জুরুল ইসলাম ও সেক্রেটারি জেনারেল জাহিদুল ইসলাম বিবৃতিতে বলেন, সম্পূর্ণ স্বৈরাচারী কায়দায় অবৈধ সরকার কর্তৃক বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধের প্রজ্ঞাপন বাংলাদেশের জনগণ মানে না। অবৈধ সরকারের এই হাস্যকর সিদ্ধান্ত ছাত্রশিবিরসহ দেশের ছাত্রসমাজ ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছে।

অনতিবিলম্বে এ অবৈধ প্রজ্ঞাপন বাতিলের আহ্বান জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, অন্যথায় ছাত্রসমাজ ও আপামর জনতা অবৈধ সরকারের অবৈধ প্রজ্ঞাপনকে রুখে দেবে।

জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ, গেজেট জারি

এর আগে আজ নির্বাহী আদেশে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও দলটির ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ করে সরকার। স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী দলটি নিষিদ্ধ করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে, পরে প্রজ্ঞাপনটি গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়।

গেজেটে বলা হয়, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেওয়া কয়েকটি মামলার রায়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী (পূর্বনাম জামায়াত-ই-ইসলামী/জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ) এবং এর অঙ্গ সংগঠন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির (পূর্বনাম ইসলামী ছাত্রসংঘ)-কে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালে সংঘটিত গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধে দায়ী হিসাবে গণ্য করা হয়েছে।

এছাড়া হাইকোর্ট বিভাগের এক রিট পিটিশনের রায়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর রাজনৈতিক দল হিসেবে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন দলটির নিবন্ধন বাতিল করে দিয়েছেন। আপিল বিভাগ, হাইকোর্ট বিভাগের ওই রায়কে বহাল রেখেছেন বলে গেজেটে উল্লেখ করা হয়।

এতে আরও বলা হয়, সরকারের কাছে যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ রয়েছে যে, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এবং এর অঙ্গ সংগঠন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির সাম্প্রতিককালে সংঘটিত হত্যাযজ্ঞ, ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে সরাসরি এবং উসকানির মাধ্যমে জড়িত ছিল। সরকার বিশ্বাস করে যে, জামায়াত ও শিবিরসহ এর সব অঙ্গ সংগঠন সন্ত্রাসী কার্যকলাপের সঙ্গে জড়িত রয়েছে।

তাই ‘সন্ত্রাস বিরোধী আইন, ২০০৯’ এর ধারা ১৮(১) এ দেওয়া ক্ষমতাবলে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এবং বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরসহ এর সব অঙ্গ সংগঠনকে রাজনৈতিক দল ও সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করলো। এ আইনের তফসিল-২ এ জামায়াত ও ছাত্র শিবিরসহ এর সব অঙ্গ সংগঠনকে নিষিদ্ধ সত্ত্বা হিসেবে তালিকাভুক্ত করলো ফলে বলে প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়।

বুধবারের মধ্যে জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ করা হচ্ছে বলে এর আগে মঙ্গলবার সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক। যদিও প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে কিছুটা সময় লাগায় বুধবার প্রজ্ঞাপন জারি হয়নি।

এরপর বৃহস্পতিবার দুপুরে আইনমন্ত্রী সাংবাদিকদের জানান, জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধের প্রস্তাব লেজিসলেটিভ বিভাগ ভেটিং (আইনি মতামত) করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ফেরত পাঠিয়েছে, কিছুক্ষণের মধ্যেই সেখান থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।

স্বাধীনতার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল জামায়াত

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল জামায়াত। মুক্তিযুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মামলায় দলটির সাবেক বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতার সাজা হয়েছে। গঠিত বিশেষ ট্রাইব্যুনালে বিচারের পর মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, আবদুল কাদের মোল্লা এবং মোহাম্মদ কামারুজ্জামানের মতো পাঁচ নেতার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়।

জামায়াতের আমির অধ্যাপক গোলাম আযমের মামলার রায়ে জামায়াতকে একটি ‘ক্রিমিনাল সংগঠন’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ে বলা হয়, জামায়াত একটি অপরাধী সংগঠন। একাত্তরে তাদের ভূমিকা ছিল দেশের স্বার্থের পরিপন্থি।

বাংলাদেশে ১৯৭২ থেকে ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত নিষিদ্ধ ছিল জামায়াত। রাজনৈতিক নানান পট পরিবর্তনের পর দেশের রাজনীতিতে আবারও সক্রিয় হয় দলটি। ১৯৮৬ সালে প্রথম বাংলাদেশে নির্বাচনে অংশ নেয় জামায়াত। ২০০১ সালে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকার গঠন করলে জামায়াত নেতা মতিউর রহমান নিজামী ও আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ মন্ত্রিসভায় স্থান পান, যা তখন ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেয়।

জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করে প্রজ্ঞাপন

২০০৮ সালে জামায়াতে ইসলামীকে রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন দেওয়া হয়। এরপর দলটির নিবন্ধনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০০৯ সালে রিট আবেদন করেন তরিকত ফেডারেশনের তৎকালীন মহাসচিব সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরীসহ ২৫ ব্যক্তি। ২০১৩ সালের ১ আগস্ট হাইকোর্ট জামায়াতের নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করে রায় ঘোষণা করেন। আপিল বিভাগেও এ রায় বহাল থাকে। এরপর ২০১৮ সালের ৮ ডিসেম্বর দলটির নিবন্ধন বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করে নির্বাচন কমিশন।

কেএইচ/এমএমএআর/জিকেএস