বিএনপি পুনর্গঠনে আলোচনায় ‘রিজভী বলয়’
বিএনপির দল পুনর্গঠন প্রক্রিয়া চলমান। বিষয়টি নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে আলোচনা তুঙ্গে। কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটিতে শিগগির আসছে আরও পরিবর্তন। মহাসচিব, স্থায়ী কমিটিসহ দপ্তরে এ ধাপে নতুন মুখ দেখা যাবে বলে প্রত্যাশা নেতাকর্মীদের।
সাম্প্রতিক রদবদল ও পদোন্নতিতে একটি বিশেষ বলয়ের প্রভাব স্পষ্ট। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ওই বলয়ের নেতৃত্বে রয়েছেন বলে দলের অন্দরমহলে আলোচনা প্রবল।
এ বিষয়ে রিজভীসহ দায়িত্বশীল বিএনপি নেতাদের ভাষ্য, পুনর্গঠন চলমান প্রক্রিয়া। সাংগঠনিক প্রয়োজনেই দলে বিভিন্ন সময় শূন্যপদ পূরণ, ছোটখাটো রদবদল হয়। এবারও সেটা হয়েছে। বলয়ের বিষয় মানতে নারাজ তারা। বলছেন, পুনর্গঠনের চূড়ান্ত ক্ষমতা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের হাতেই।
বিভিন্ন সূত্রের দাবি, বলয়ভিত্তিক চলমান পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায় বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল, আইন বিষয়ক সম্পাদক কায়সার কামাল, গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক মোরশেদ হাসান বলয়ের জয়জয়কার।
দলীয় গঠনতন্ত্র মোতাবেক দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে যে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে সেই অনুযায়ী পুনর্গঠন হচ্ছে।–রুহুল কবীর রিজভী
এই এক বলয়ের দাপটে বাকি বলয়ের নেতাকর্মী ও অনুসারীরা কোণঠাসা। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর দল পুনর্গঠন কার্যক্রমের যে কয়টি ধাপ অতিক্রম হয়েছে তাতে এই একটি বলয়ের প্রভাব স্পষ্ট। এরই ধারাবাহিকতায় দলের মহাসচিব, সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটিসহ দল ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ে রদবদলের কথা শোনা যাচ্ছে। সেখানে রিজভীসহ এই বলয়ের যারা আছেন তাদের পদোন্নতির সম্ভাবনা তুঙ্গে। কাঙ্ক্ষিত পদপ্রত্যাশীরা হালের এই প্রভাবশালী বলয়ের সংশ্লিষ্ট নেতাদের কাছে হাজিরা দিচ্ছেন এবং দলের পরবর্তী প্রেস বিজ্ঞপ্তির অপেক্ষায়।
সম্ভাব্য পদোন্নতির আলোচনায় রিজভীপন্থি নেতারা
স্থায়ী কমিটি
বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য হওয়ার আশায় রিজভীপন্থিদের মধ্যে রয়েছেন উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য জয়নুল আবদিন ফারুক, আব্দুস সালাম, আবুল খায়ের ভূঁইয়া, হাবিবুর রহমান হাবিব, আতাউর রহমান ঢালী, ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আজম খান, এজেড এম জাহিদ হোসেন, নিতাই রায় চৌধুরী এবং এই বলয়ের প্রধান সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
মহাসচিব
ঢাকায় প্রতিদিন বিএনপির যে সব নেতাকর্মী ঝটিকা মিছিল করেন তারা সবাই মনে করেন, দলের দ্বিতীয় সাংগঠনিক পদটির নিখুঁত অলঙ্করণ একমাত্র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীকে দিয়েই সম্ভব। কারণ হিসেবে রিজভীপন্থি এসব কর্মী মনে করেন, দলের দুঃসময়ে নিজের পরিবারের হক নষ্ট করে দলীয় কার্যালয়ে ছোট্ট একটি কক্ষে দীর্ঘদিন অবস্থান করেছেন রিজভী।
- আরও পড়ুন
- বিএনপি পুনর্গঠনে অতিমূল্যায়ন আর অবমূল্যায়নের অভিযোগ
- পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায় ধীরগতি, সংকটে বিএনপি
- দুকূল হারানো নেতাদের কি দলে ফেরাবে বিএনপি?
সহকর্মী, শুভাকাঙ্ক্ষী, সতীর্থরা তাদের সামর্থ্যের মধ্যে খাবার-দাবার আনলেও তিনি পারিবারিক পরিবেশে তা গ্রহণ করতে পারেননি। পরিবার-পরিজন বাদ দিয়ে রিজভী সারাদিন অন্তত পার্টি অফিসটা তদারকি করেন। তার এ ত্যাগ বিএনপির ইতিহাসে বিরল।
সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব
ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান প্রবর্তন করা এ পদে বর্তমান পরিস্থিতিতে যুগ্ম মহাসচিব হাবীব-উন নবী খান সোহেলের বিকল্প নেই বলে রিজভী বলয়ের নেতাকর্মীরা মনে করেন।
সংগঠনে প্রত্যেকের একটা জবাবদিহিতা থাকে। যাকে যে দায়িত্ব দেওয়া হয়, তিনি সেটা সঠিকভাবে পালন না করলে সেক্ষেত্রে বেটার রিপ্লেসমেন্ট মাস্ট।-গয়েশ্বর চন্দ্র রায়
যুগ্ম মহাসচিব
দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম মহাসচিব পদে ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল যুগ্ম মহাসচিব পদের জন্য আদাজল খেয়ে চেষ্টা করছেন। এ পদে পদোন্নতির আশায় এই বলয়ের আরও রয়েছেন আইন বিষয়ক সম্পাদক কায়সার কামাল, তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু এবং সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ। তবে রুহুল কবির রিজভীর মহাসচিব বা স্থায়ী কমিটিতে যদি জায়গা না হয় সেক্ষেত্রে প্রথম যুগ্ম মহাসচিব রকিবুল ইসলাম বকুল না কায়সার কামাল হবেন তা নিয়ে দ্বন্দ্ব তৈরি হতে পারে বলে আশঙ্কা রিজভী বলয়ের নেতাকর্মীদের।
সম্পাদক
শামা ওবায়েদকে যুগ্ম মহাসচিব করা হলে ফরিদপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক হবেন ওই বিভাগের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মো. সেলিমুজ্জামান সেলিম। তবে শামার পদায়ন না হলে সেলিম বিশেষ সম্পাদক পদে পদোন্নতি পেতে পারেন। সহ-দপ্তর সম্পাদক মুহাম্মদ মুনির হোসেন এবং সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আকন কুদ্দুস- এই দুজনের মধ্যে থেকে একজন বরিশাল বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক, সহ-প্রচার সম্পাদক আসাদুল করিম শাহিন, সহ-অর্থনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক মাহমুদুর রহমান সুমন, সহ-যুব বিষয়ক সম্পাদক মীর নেওয়াজ আলী সম্পাদকীয় পদ পাবেন এমন বিশ্বাস রিজভীপন্থিদের।
সহ-সম্পাদক
রিজভী বলয়ের ধারণা দপ্তরে সংযুক্ত নির্বাহী কমিটির সদস্য তারিকুল ইসলাম তেনজিংসহ দপ্তর সম্পাদক, নির্বাহী কমিটির সদস্য জাকির হোসেন সিদ্দিকী একটি সহ-সম্পাদক পদে পদোন্নতি পাবেন।
নির্বাহী কমিটির সদস্য
জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি জাহিদুল কবির এবং জাতীয়তাবাদী কৃষকদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান পলাশের এই বলয় থেকে বিএনপির নির্বাহী কমিটিতে জায়গা প্রায় নিশ্চিত বলে আলোচনা রয়েছে।
পুনর্গঠন নিয়ে বিএনপির দায়িত্বশীল নেতাদের ভাষ্য
দলের পুনর্গঠন নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে নানা আলোচনা থাকলেও ব্যক্তিগত ঘনিষ্ঠতার মাপকাঠিতে পদোন্নতি-পদাবনতির বিষয়টি মানতে নারাজ দলের অভ্যন্তরে আলোচিত ‘রিজভী বলয়ের প্রধান’ বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
তার পাল্টা অভিযোগ, দল পুনর্গঠনে অধিকাংশ রিজভীর ঘনিষ্ঠদের পদোন্নতি হয়েছে- যারা এমন বক্তব্য দিচ্ছেন তারা বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন। বিএনপির সব নেতাকর্মী তার ঘনিষ্ঠ বলে দাবি করেন রিজভী।
জাগো নিউজের প্রশ্নের জবাবে রিজভী বলেন, ‘দলীয় গঠনতন্ত্র মোতাবেক দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে যে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে সেই অনুযায়ী পুনর্গঠন হচ্ছে।’
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য জয়নুল আবদিন ফারুক বলেন, ‘সত্যিকার জাতীয়তাবাদী কর্মী হিসেবে তারেক রহমান যাদের চেনেন তাদের মূল্যায়ন করা হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘অভিজ্ঞতার আলোকে সিনিয়রদের সঙ্গে আলোচনা করে তারেক রহমান যে কমিটি দিয়েছেন সেটা অত্যন্ত সঠিক মূল্যায়ন করেছেন নেতাদের প্রতি। এতে দলের কোনো ক্ষতি হবে না। দলে দীর্ঘদিন কাউন্সিল হয় না। সরকারের দমন-পীড়নের কারণে চলমান প্রক্রিয়ায় দলের পরিবর্তন হচ্ছে, এটা আসতে থাকবে।’
স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় জাগো নিউজকে বলেন, ‘সংগঠনে প্রত্যেকের একটা জবাবদিহিতা থাকে। যাকে যে দায়িত্ব দেওয়া হয়, তিনি সেটা সঠিকভাবে পালন না করলে সেক্ষেত্রে বেটার রিপ্লেসমেন্ট মাস্ট।’
তিনি বলেন, ‘পুনর্গঠন একটি চলমান প্রক্রিয়া। সাংগঠনিক প্রয়োজনেই দলে বিভিন্ন সময় শূন্যপদ পূরণ, ছোটখাটো রদবদল করা হয়। এবারও সেটা করা হয়েছে। সাংগঠনিকভাবে এতে দলের ভালোই হবে। এতে আগামীতে সংগঠন আরও সুসংহত, গতিশীল হবে।
কেএইচ/এএসএ/জিকেএস