ভিডিও EN
  1. Home/
  2. রাজনীতি

তিন বছরের কমিটিতে এক যুগ পার, ঢাকা মহানগর যুবলীগের সম্মেলন কবে?

সালাহ উদ্দিন জসিম | প্রকাশিত: ০৯:৫৩ এএম, ২০ মার্চ ২০২৪

এক যুগ ধরে বন্ধ ঢাকা মহানগর যুবলীগের সম্মেলন। চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি ও ক্যাসিনোকাণ্ডে বিতর্কিত এ সংগঠনটি চলছে ভারপ্রাপ্ত নেতৃত্ব দিয়ে। তাদের অধীন ঢাকার শতাধিক ওয়ার্ডেও সম্মেলন বা কমিটি হয়নি এর মধ্যে। ঝিমিয়ে পড়েছে গুরুত্বপূর্ণ এ দুই শাখা সংগঠনের কার্যক্রম। কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচিতে নামমাত্র অংশগ্রহণ ছাড়া নেই কোনো কার্যক্রম। এ নিয়ে কোনো উদ্যোগও নেই কেন্দ্রীয় যুবলীগের।

এ নিয়ে ঢাকা মহানগর নেতাদের সঙ্গে কথা বলে সম্মেলনের কোনো সুসংবাদ পাওয়া যায়নি। বরাবরের মতো কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক দাবি করেছেন, তারা মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি করছেন, করবেন। ঈদের পরই প্রক্রিয়া শুরু হবে।

২০১২ সালের জুলাইয়ে সম্মেলনের পর কেন্দ্রীয় যুবলীগের দুবার সম্মেলন হলেও ঢাকা মহানগরের গুরুত্বপূর্ণ দুই শাখায় হয়নি। নানা সময়ে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি ও ক্যাসিনোকাণ্ডে যুক্ত নেতাদের বাদ দিলেও তাদের অনুসারীদের দিয়েই ঢিমেতালে চলছে সংগঠন। কেন্দ্রীয় যুবলীগ শিগগির সম্মেলন হবে, হচ্ছে করেও পার করে দিয়েছে বেশ কয়েক বছর।

দলীয় সূত্রমতে, যুবলীগের ষষ্ঠ জাতীয় কংগ্রেস হয় ২০১২ সালের ১৪ জুলাই। তার আগে ৩ জুলাই ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও ৮ জুলাই ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের সম্মেলন হয়। এতে মহানগর উত্তরে মাইনুল হোসেন খান নিখিল সভাপতি ও ইসমাঈল হোসেন সাধারণ সম্পাদক এবং মহানগর দক্ষিণে ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট সভাপতি ও ওয়াহিদুল আলম আরিফ সাধারণ সম্পাদক হন।

এরপর কেটে গেছে এক যুগ। সম্মেলন হয়নি এই দুই শাখার। তবে নানা সময়ে সংগঠনটির নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের ফলে অব্যাহতি/বহিষ্কারের ঘটনা বেশ আলোচনা জন্ম দিয়েছে। ঘটেছে হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনাও। ২০১৩ সালের ২৯ জুলাই টেন্ডার নিয়ে দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রিয়াজুল হক খান মিল্কি হত্যাকাণ্ডের পর গাঢাকা দেন দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক ওয়াহিদুল আলম আরিফ। তার পরিবর্তে যুগ্ম-সম্পাদক এইচএম রেজাউল করিমকে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এরপর ভারপ্রাপ্ত দায়িত্বে থাকা রেজাউলকেও টিকাটুলি এলাকার রাজধানী সুপার মার্কেটে চাঁদাবাজির অভিযোগে ২০১৫ সালে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। যদিও সময়ের আবর্তে সেই রেজাউল করিমই এখনো নেতৃত্বে।

আরও পড়ুন

২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর ক্যাসিনোকাণ্ডে গ্রেফতার হন যুবলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট। ২২ অক্টোবর সেখানে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি করা হয় সহ-সভাপতি মাইনুদ্দিন রানাকে।

শুধু ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ নয়, যেসব শাখা কমিটির মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে, সবগুলোর সম্মেলন আমরা করছি। পর্যায়ক্রমে সবই করবো। ঈদের পরে আমরা সে প্রক্রিয়ায় যাবো।-মাইনুল হাসান খান নিখিল

এরপর নানান নাটকীয়তা শেষে ২০১৯ সালের ২৩ নভেম্বর যুবলীগের সপ্তম কংগ্রেস হয়। সেখানে যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা শেখ ফজলুল হক মণির জ্যেষ্ঠ সন্তান শেখ ফজলে শামস পরশকে চেয়ারম্যান ও ঢাকা উত্তর শাখার সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক করা হয় মাইনুল হোসেন খান নিখিলকে। সেদিনই উত্তরে সহ-সভাপতি জাকির হোসেন বাবুলকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি করা হয়। সেই থেকে উত্তরেও আসে ভারপ্রাপ্ত নেতৃত্ব।

এ নিয়েই চলছে যুবলীগের এই ঢাকা মহানগরের দুই শাখা। এমনকি শাখা দুটোর মধ্যে উত্তরের ৬৭টি ওয়ার্ড ও দক্ষিণের ৭৫টি ওয়ার্ডেও হয়নি নিয়মমাফিক কোনো সম্মেলন। রুটিন দায়িত্ব পালন করছেন ভারপ্রাপ্ত নেতারা।

ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জাকির হোসেন বাবুল চিকিৎসার প্রয়োজনে ও সাধারণ সম্পাদক ইসমাঈল হোসেন ব্যক্তিগত প্রয়োজনে বিদেশে অবস্থান করায় এ বিষয়ে তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। শাখার দপ্তর সম্পাদক কামরুজ্জামান কামরুল জাগো নিউজকে বলেন, ‘সম্মেলন আয়োজনের সেরকম প্রস্তুতি নেই। তবে কেন্দ্র নির্দেশ দিলে নিশ্চয় সভাপতি-সম্পাদকের নেতৃত্বে আমরা কাজ শুরু করবো।’

এ নিয়ে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাইনুদ্দিন রানা ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পদক রেজাউল করিমের সঙ্গে এক সপ্তাহ ধরে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। খুদেবার্তায়ও সাড়া দেননি তারা।

ঢাকা মহানগরের একাধিক নেতা জাগো নিউজকে বলেন, ২০১২ সালের পর আর সম্মেলন হয়নি। কবে নাগাদ সম্মেলন হবে এমন আভাসও নেই। সম্মেলন যে কেন হচ্ছে না, সেটাও পরিষ্কার নয়। ভারপ্রাপ্ত নেতৃত্ব দিয়ে কোনো রকম সংগঠন চলছে। ওয়ার্ডগুলোতেও কোনো সম্মেলন বা কার্যক্রম নেই। কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচিতে নামকাওয়াস্তে নেতারা অংশ নেন। সেভাবে কার্যক্রম নেই মহানগর ও ওয়ার্ডে। যে কারণে সংগঠনও ধীরে ধীরে ঝিমিয়ে পড়েছে। নেতাকর্মীদের সঙ্গে সুসমন্বয় নেই। ব্যক্তি পর্যায়ে দু-একজন কিছু কর্মী ধরে রাখলেও বেশিরভাগই নার্সিংয়ের অভাবে হারাতে বসেছে। এখন আর যুবলীগে সেই পুরোনো সাংগঠনিক জৌলুস নেই।

আওয়ামী যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান খান নিখিল জাগো নিউজকে বলেন, ‘শুধু ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ নয়, যেসব শাখা কমিটির মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে, সবগুলোর সম্মেলন আমরা করছি। পর্যায়ক্রমে সবই করবো। ঈদের পরে আমরা সে প্রক্রিয়ায় যাবো।’

এসইউজে/এএসএ/জেআইএম