ভিডিও EN
  1. Home/
  2. রাজনীতি

নারী নেতৃত্ব সংকট বিএনপিতে

খালিদ হোসেন | প্রকাশিত: ০৬:৪৯ পিএম, ১৪ মার্চ ২০২৪

প্রায় চার দশক ধরে দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপিতে চেয়ারপারসনের দায়িত্ব পালন করছেন খালেদা জিয়া। তবে দলটিতে তার পরের প্রজন্মে নারীর সংখ্যা খুবই সীমিত। যারা রয়েছেন, তাদের অধিকাংশই পারিবারিক উত্তরসূরি হিসেবে ‘অতি মূল্যায়িত’। দলে নেতৃত্ব নির্বাচনের ধারাবাহিকতা না থাকায় এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে বলে মত অনেকের। তবে বিএনপি নেতাদের অভিযোগ, দেড় দশক ধরে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বিরোধীদের দমনে যেভাবে নির্যাতন করছে, তাতে নারীরা রাজনীতিতে উৎসাহী হচ্ছেন না। তাদের দাবি, রাজনীতির স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরলে বিএনপিতে নারীর অংশগ্রহণ বাড়বে।

পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, খালেদা জিয়ার পর দলের চেয়ারপারসন হতে পারেন এমন কেউ বিএনপির রাজনীতিতে আসেননি। দীর্ঘ সময়ের ব্যবধানে সেলিমা রহমান হন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য। তার পরে আর কেউই এ পদে আসার মতো রাজনীতিতে সক্রিয় নন। এছাড়া দলটির কিছু নারী নেত্রী মিডিয়ায় সক্রিয় থাকলেও দলের শীর্ষ পর্যায়ে আসার মতো রাজনৈতিক ভূমিকা নেই কারও।

বিএনপির নেতা তৈরির অন্যতম উৎস ছাত্রদল। গত ১ মার্চ বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি (আংশিক) ঘোষণা হয়। নতুন কমিটিতে দেখা গেছে, শীর্ষ নেতাদের মধ্যে নেই কোনো নারীর উপস্থিতি। এ নিয়ে দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা ভিন্ন ধরনের কথা বলছেন।

ছাত্রদলের শীর্ষপদে নারীরা জায়গা পান না কেন, এমন প্রশ্নের জবাবে সংগঠনটির ইডেন মহিলা কলেজ শাখার আহ্বায়ক এবং বিগত কমিটির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রেহেনা আক্তার শিরিন জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের সাংগঠনিক অভিভাবক তারেক রহমান। তার সিদ্ধান্তই আমাদের কাছে শিরোধার্য। উনি যেহেতু সুপার ফাইভ-এ মনে করেননি, তাই দেননি।

আরও পড়ুন

ছাত্রদলে শীর্ষপদে নেতৃত্ব দেওয়ার মতো নারী আছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে শিরিন বলেন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের প্রতিটি কর্মী পরীক্ষিত। তারা নেতৃত্ব দেওয়ার যোগ্যতা রাখেন। আমাদের চেয়ারম্যান যেটা মনে করছেন, এ মুহূর্তে যেটা দরকার, সেটা তিনি দিয়েছেন। বাংলাদেশের যে রাজনৈতিক অবকাঠামো চলছে, আমাদের রাজপথে যে মেয়েরা আছে, সবাই পরীক্ষিত। নেতৃত্ব দেওয়ার যোগ্যতা রাখে।

ছাত্রদলে নারীদের কতটা মূল্যায়ন হচ্ছে, জানতে চাইলে সংগঠনটির গত কমিটির ছাত্রীবিষয়ক সম্পাদক মানসুরা আলম বলেন, আগের কমিটিতে ছাত্রদলের আট থেকে ১০ জন নারী ছিলেন। সবাই কোনো না কোনোভাবে মূল্যায়িত হন। যারা পদ পেয়েছেন তারা নারী কোটায় মূল্যায়িত হন, বিষয়টা তা নয়। আমরা এখন আন্দোলনে আছি। আমাদের অ্যাক্টিভ পার্টিসিপেশন হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ। নারী কোটায় আমি পদ চাইতে পারি না। কারণ যাদের অ্যাক্টিভ পার্টিসিপেশন রয়েছে সে মূল্যায়নে আমি কতটুকু এগিয়ে থাকবো, তার ওপর ভিত্তি করে শীর্ষ নেতৃত্বের ক্যাটাগরি তৈরি করা হয়। আমরা নারীরাও সমানতালে এগিয়ে আছি সবার সঙ্গে। সামনে আমাদের প্রত্যাশা আছে।

ভবিষ্যতে রাজনীতিতে নিজেকে কোথায় দেখতে চান, এমন প্রশ্নের জবাবে মানসুরা আলম বলেন, ‘আমি প্রত্যাশা রাখি একদিন আমি ছাত্রদলের নেতৃত্ব দেবো। আন্দোলন সংগ্রামে আমার অ্যাক্টিভ পার্টিসিপেশন রেখে যাবো। আমার নেতা বা আমার সংগঠন আমাকে মূল্যায়ন করবেন, সে প্রত্যাশা রেখে আমি রাজনীতি করছি।’

অতীতে ছাত্রদলের রাজনীতিতে যেসব নারীকে দেখা গেছে পরবর্তীসময়ে তাদের অনেকেই ঝরে গেছেন কী কারণে, জানতে চাইলে মানসুরা আলম বলেন, মেয়েদের ঝরে পড়ার অনেক কারণ থাকে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে মেয়েদের জন্য এতটা এখনো ওপেন হয়ে ওঠেনি। মেয়েদের সামাজিক পারিবারিক বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা থাকে। হামলা মামলার বিষয় নিয়ে পারিবারিকভাবে আমরা সব সময় একটা প্রেসারে থাকি। যে কারণে আমরা সে বাধা সব সময় কাটিয়ে উঠতে পারি না। আমরা এখন এমন একটা পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠছি যেখানে আমাদের নার্ভ আরও শক্তিশালী হচ্ছে। সবারই লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য এক। রাজপথে আছি, লড়াইয়ে আছি।

ছাত্রদলের রাজনীতিতে নারী সদস্য কম কেন, জানতে চাইলে সংগঠনটির নবগঠিত কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, ১৫ বছর ধরে আওয়ামী লীগের শাসনামলে নারীরা শারীরিকভাবে যেভাবে লাঞ্ছিত হচ্ছেন, মামলা হামলার শিকার হচ্ছেন, কারাবরণ করছেন, তাতে তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।

নারী নেতৃত্ব সংকট বিএনপিতেহাসপাতালে চিকিৎসাধীন মানসুরা

বিএনপির রাজনীতিতে নারীদের চ্যালেঞ্জ কী?

ছাত্রদলের মানসুরা আলম বলেন, নারী হয়ে রাজনীতি করা সবচেয়ে কঠিন। আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লেখাপড়া করেছি , আমি তো ক্যারিয়ারমুখী না, আমি সংগ্রামমুখী। ২০২২ সালের ২৪ মে আমার ওপর হামলা হয়েছে। আমার হাত ভেঙে দেওয়া হয়েছে। পরবর্তীসময়ে আবারও হামলার শিকার হয়েছি। ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে চিকিৎসা নিয়েছি। বিভিন্ন সময়ে আমরা নারীরা সামনে ছিলাম এবং আমরা হামলা মামলা সবকিছুর শিকার হয়েছি। কিন্তু এগুলোকে আমরা বড় কোনো বাধা হিসেবে দেখে থেমে থাকি না। আমরা অন্যদের মতো এগিয়ে যাচ্ছি। এখনকার বড় সমস্যা হচ্ছে বর্তমান সরকার মেয়ে বলে রেহাই দিচ্ছে না, বরং তারা আসলে মানুষ না, তারা আমাদের ওপর হামলে পড়ছে। আমাদের নারী নেত্রীরা রাজনীতি করেন প্রত্যেকেই এটা শিকার হয়েছেন।

আরও পড়ুন

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্য নাদিয়া পাঠান পাপন ছাত্রদলের রাজনীতি থেকে এখানে এসেছেন। তার মতে, রাজনীতিতে নারীর প্রথম প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে তার পরিবার। দ্বিতীয় হচ্ছে, নারীরা রাজপথে আন্দোলন করবে প্রতিবাদ করবে এটা অনেকেই মানতে পারেন না। আবার দেখা যাচ্ছে একজন পুরুষ নেতা পাঁচটা নারী কর্মী নিয়ে হাঁটছে সেক্ষেত্রে ওই পুরুষ নেতাকে কটাক্ষের শিকার হতে হয়। সব মিলিয়ে রাজনীতির পরিবেশ নেই নারীর জন্য। কমিটি গঠনের সময় প্রভাবশালী বিত্তশালীদের প্রভাব থাকে যে কারণে যোগ্য নারীরা যোগ্য পদ পায় না।

সংরক্ষিত আসনের সাবেক সংসদ সদস্য বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক রেহেনা আক্তার রানু বলেন, আসলে রাজনীতিতে কেউ কাউকে জায়গা দিতে চায় না। যার যার জায়গা নিজেকেই তৈরি করে নিতে হয়। অনেক চ্যালেঞ্জ আছে। যারা সাহসী, কর্মে উদ্দ্যমী তারা চ্যালেঞ্জটা কাটিয়ে উঠতে পারে।

বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান বলেন, প্রথমত পরিবার থেকেই রাজনীতির জন্য নারীরা বাধার সম্মুখীন হন। এরপর এসব বাধা পার হয়ে যখন রাজনীতিতে যুক্ত হন তখন আরও নানামুখী প্রতিকূলতার শিকার হতে হয়। বর্তমান বাস্তবতায় যোগ্যতাসম্পন্ন নারী হলে তার জন্য রাজনীতি আরও চ্যালেঞ্জের হয়ে যায়। তবে সব ক্ষেত্রেই সংগ্রামের মাধ্যমেই সফলতা অর্জন হয়।

রাজনীতি বিশ্লেষক মহিউদ্দিন খান মোহন এক সময় বিএনপির কেন্দ্রীয় রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তার মতে, বর্তমানে রাজনীতির যে পরিবেশ সেই পরিবেশে ভদ্র পরিবারের নারীরা রাজনীতি করতে চান না।

তিনি বলেন, কমিটি গঠনের সময় যথাযথ রাজনৈতিক মূল্যায়ন হয় না। আর্থিক লেনদেনসহ নানান অনৈতিক চর্চার কারণে নারীরা রাজনীতিতে অনাগ্রহী হয়ে ওঠেন।

খালেদা জিয়া এলেন যেভাবে

১৯৮১ সালের ৩০ মে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে হত্যার পর ভাইস-প্রেসিডেন্ট বিচারপতি আব্দুস সাত্তার অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পান। বিচারপতি আব্দুস সাত্তারের বার্ধক্য এবং দল পরিচালনা নিয়ে অসন্তোষের কারণে তৎকালীন বিএনপির একাংশ জিয়াউর রহমানের সহধর্মিণী খালেদা জিয়াকে রাজনীতিতে নিয়ে আসার পরিকল্পনা করেন। তখন খালেদা জিয়া ছিলেন নিতান্তই একজন গৃহবধূ। দুই শিশুসন্তান নিয়ে তখন ঢাকা সেনানিবাসে অবস্থান করছিলেন তিনি। রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি তখন বিপর্যস্ত এবং দিশেহারা।

১৯৮২ সালের ৩ জানুয়ারি একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে খালেদা জিয়া আত্মপ্রকাশ করেন এবং বিএনপির প্রাথমিক সদস্যপদ লাভ করেন। একই বছরের ৭ নভেম্বর জিয়াউর রহমানের সমাধিস্থলে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে গিয়ে খালেদা জিয়া প্রথম বক্তব্য দেন।

১৯৮২ সালের ২১ জানুয়ারি বিএনপির চেয়ারম্যান নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হয়। বিএনপির চেয়ারম্যান হওয়ার জন্য একই সঙ্গে প্রার্থী হয়েছিলেন খালেদা জিয়া এবং রাষ্ট্রপতি আব্দুস সাত্তার। সে সময় বিচারপতি সাত্তার খালেদা জিয়াকে দলের সহ-সভাপতির পদ এবং দেশের ভাইস-প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের অনুরোধ জানান। তবে খালেদা জিয়া তা গ্রহণ করেননি। অবশেষে বিচারপতি সাত্তারের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনার পর খালেদা জিয়া চেয়ারম্যান পদ থেকে তার প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেন।

১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ তৎকালীন সেনাপ্রধান এইচএম এরশাদ এক সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি আব্দুস সাত্তারকে ক্ষমতাচ্যুত করেন। আব্দুস সাত্তার দলের আনুষ্ঠানিক চেয়ারম্যান থাকলেও বার্ধক্য, অসুস্থতা এবং নিষ্ক্রিয়তার কারণে তিনি ক্রমশ দলের আড়ালে পড়ে যান। দল পরিচালনায় খালেদা জিয়ার প্রভাব বাড়তে থাকে। ১৯৮৩ সালের মার্চ মাসে খালেদা জিয়া দলের সিনিয়র ভাইস-চেয়ারম্যান হন এবং এপ্রিল মাসের প্রথমে বিএনপির এক বর্ধিত সভায় তিনি ভাষণ দেন। সিনিয়র ভাইস-চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালনের কয়েক মাস পরই খালেদা জিয়া দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হন। এরপর ১৯৮৪ সালের ১০ মে খালেদা জিয়া বিএনপির চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।

রাজনীতিতে আসার ১০ বছরের মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী হন খালেদা জিয়া।

ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিল থেকে বিএনপিতে পারিবারিক আধিপত্য

ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিল থেকে বিএনপির সাংগঠনিক পদগুলোতে নারী পদায়নের ক্ষেত্রে দলটির প্রভাবশালী নেতাদের পারিবারিক সদস্যদের প্রাধান্য দেখা যায়।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের মেয়ে অপর্ণা রায় বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির প্রান্তিক ও জনশক্তি উন্নয়নবিষয়ক সহ-সম্পাদক হিসেবে দায়িত্বে রয়েছেন। স্থায়ী কমিটির সদস্য প্রয়াত তরিকুল ইসলামের সহধর্মিণী অধ্যক্ষ নার্গিস বেগম যশোর জেলা বিএনপির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের স্ত্রী আফরোজ আব্বাস মহিলা দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি, ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরীর মেয়ে নিপুণ রায় চৌধুরী বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য এবং ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

বিএনপি চেয়ারপারসনের সাবেক উপদেষ্টা মরহুম ফজলুর রহমান পটলের স্ত্রী অধ্যক্ষ কামরুন নাহার শিরিন নাটোর জেলা বিএনপির সদস্য, কন্যা অ্যাডভোকেট ফারজানা শারমিন পুতুল বিএনপির মানবাধিকার বিষয়ক কমিটির সদস্য এবং মিডিয়া সেলের সদস্য।

রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুর স্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন ছবি জেলা বিএনপির সদস্য এবং নাটোর-২ আসন থেকে বিএনপি মনোনীত ধানের শীষের প্রার্থী ছিলেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের স্ত্রী হাসনা জসীমউদদীন মওদুদের এলাকার রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার করছেন এবং নির্বাচন করতে চান।

স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলামের স্ত্রী অধ্যাপক শাহিদা রফিক খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা পরিষদে রয়েছেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর স্ত্রী সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি। প্রয়াত মহাসচিব কে এম ওবায়দুর রহমানের মেয়ে শ্যামা ওবায়েদ ফরিদপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বিএনপির নিখোঁজ নেতা এম ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর লুনা চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

তারেক রহমানের নেতৃত্বাধীন বিএনপিতে নারী

সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব হয়ে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই বিএনপির সাংগঠনিক কার্যক্রমে প্রভাব বাড়তে থাকে তারেক রহমানের। ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি দুর্নীতির মামলায় খালেদা জিয়া কারাবন্দি হওয়ার পর ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হন তারেক রহমান। তারপর বিএনপির কাউন্সিল না হলেও বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ে নেতাদের পদোন্নতি হয়েছে। এরমধ্যে মিডিয়া সেলে নিযুক্ত হয়েছেন চারজন নারী।

অন্যদিকে ত্রিবার্ষিক কাউন্সিল হওয়ার কথা থাকলেও সর্বশেষ ২০১৬ সালে বিএনপির ষষ্ঠ কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে দলের স্থায়ী কমিটি, উপদেষ্টা পরিষদ ও জাতীয় নির্বাহী কমিটি মিলে নারীর সংখ্যা হয়েছে ৭৩, যেখানে আগের কমিটিতে ছিলেন ৪৪ জন। সে হিসাবে গতবারের চেয়ে এবার বিএনপিতে নারী নেতা বেড়েছে ২ দশমিক ৩ শতাংশ।

৫০২ সদস্যের নির্বাহী কমিটিতে ভাইস চেয়ারম্যান, সাংগঠনিক সম্পাদক, সম্পাদক, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও নির্বাহী সদস্য মিলে মোট নারীর সংখ্যা ৬৭ জন, যা শতকরা হিসাবে ১৩ দশমিক ৩৪ শতাংশ।

এছাড়া ১৯ সদস্যের স্থায়ী কমিটির ফোরামে একজন এবং ৭৩ সদস্যের উপদেষ্টা কাউন্সিলে ছয়জন নারী রয়েছেন।

বিএনপির স্থায়ী কমিটি, উপদেষ্টা পরিষদ ও জাতীয় নির্বাহী কমিটি মিলে নারী প্রতিনিধিত্ব এখন ১২ দশমিক ৩ শতাংশ।

বিএনপির গত কেন্দ্রীয় কমিটির ৩৮২ জনের মধ্যে নারী ছিলেন ৪২ জন। স্থায়ী কমিটি মিলে এ সংখ্যা ছিল ৪৪। অর্থাৎ গত কমিটিতে নারী প্রতিনিধিত্ব ছিল ১০ শতাংশ।

২০০৮ সালে রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন চালুর সময় রাজনৈতিক দলগুলো গঠনতন্ত্রে সংশোধনী এনে নারী সদস্যদের এক-তৃতীয়াংশ পদে রাখার শর্ত ২০২০ সালের মধ্যে পূরণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। তবে এর কাছাকাছি পৌঁছেনি বিএনপি। অন্যদিকে এখন কোয়ান্টিটি বাড়লেও কোয়ালিটি কমে গেছে বলে মত অনেকের।

বিএনপির আগের নারীদের সঙ্গে বর্তমানে নারীদের ব্যবধান প্রসঙ্গে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্য নাদিয়া পাঠান পাপন বলেন, আমি আমার ইমিডিয়েট সিনিয়র জেনারেশনের কথা বলতে পারি, তাদের যে দক্ষতা-যোগ্যতা ছিল সে তুলনায় আমার জেনারেশনে নেই। এ থেকে বলতে পারি, কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে যোগ্যতার মূল্যায়ন যথাযথভাবে হচ্ছে না।

নির্বাচন কমিশনের গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশ অনুযায়ী দলের সব পর্যায়ে ৩৩ শতাংশ নারী নেতৃত্বের যে বাধ্যবাধকতা রয়েছে, সে চর্চা বিএনপিতে কতটা হচ্ছে, এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপির সহ-প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক রেহেনা আক্তার রানু বলেন, আমি জানি বিএনপি নারীবান্ধব দল এবং নারীকর্মীকে বিএনপি অনেক সম্মান দেয়। মূল্যায়নের চেষ্টা করে। ধীরে ধীরে এটার চেষ্টা চর্চা হচ্ছে। আমি আশা করবো আগামীতে আরও বেশি নারী যেন সম্পৃক্ত হয়।

এ বিষয়ে স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান জাগো নিউজকে বলেন, এতদিন শুধু আন্দোলন, আন্দোলন আর আন্দোলনের মধ্যেই আমরা আছি। এটা তো আমাদের সব সময় মাথায় আছে। ৩৩ শতাংশ নারী নেতৃত্বের বিষয়টি ধীরে ধীরে পূরণ হচ্ছে এবং হবেও। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কাজ হচ্ছে। অনেক জায়গায় কার্যকর হয়েছে। কাজেই ওটা আমাদের হচ্ছে।

কেএইচ/এমএইচআর/জিকেএস