জানুয়ারির শুরু থেকেই ‘অসহযোগ আন্দোলন’, বিএনপির সঙ্গী জামায়াত
যে কোনো মূল্যে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ঠেকাতে মরিয়া বিএনপি। মামলায় জর্জরিত দলটির নেতাকর্মীরা মাঠে না থাকলেও কর্মসূচি চলছে টানা। চলতি মাসের পুরোটা সময় হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচি অব্যাহত রেখে জানুয়ারির শুরু থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য অসহযোগ আন্দোলন করতে চায় দলটির হাইকমান্ড। এতে শামিল হবে জামায়াত। মাঠে বাড়বে নেতাকর্মীদের উপস্থিতি। গত কয়েক দিনে বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতাদের বক্তব্যেও বিষয়টি অনেকটা স্পষ্ট।
আন্দোলনের নতুন কৌশলে বিএনপি নির্বাচনের আগে দুটি ধাপে মাঠে নামতে চায়। সেক্ষেত্রে ১৯ ডিসেম্বর থেকে চলতি মাসের বাকি দিনগুলো হরতাল-অবরোধ থাকবে। এর পরের ধাপে নতুন বছরের প্রথম দিন থেকে অসহযোগ কর্মসূচির মাধ্যমে আন্দোলনের চূড়ান্ত বিজয় অর্জনের পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন বিএনপির একটি সূত্র।
আরও পড়ুন>> ‘নির্বাচন ঠেকাতে’ জামায়াতকে কাছে টানছে বিএনপি
জানা যায়, শেষ ধাপের আন্দোলনে বিজয় অর্জনে কর্মসূচিতে নেতাকর্মীদের উপস্থিতি বাড়াতে বিএনপির হাইকমান্ড নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছে। এতদিন বিএনপির সঙ্গে জামায়াত যুগপৎ আন্দোলনে থাকলেও এখন জামায়াতের সঙ্গে যৌথভাবে আন্দোলনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। জামায়াতের সঙ্গ নিয়ে যারা বিরোধিতা করছে তাদের সঙ্গেই প্রয়োজনে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে জোরালো আন্দোলন গড়ে তোলা বিএনপির লক্ষ্য।
ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনতে হলে সব দলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। তাহলে গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার ফিরে আসবে। সে বিষয় মাথায় রেখেই আগামী দিনে বিএনপি-জামায়াত মাঠে থাকবে বলে মনে হচ্ছে।- জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা আজিজুর রহমান
দল দুটির হাইকমান্ডের মধ্যে সম্প্রতি একাধিকবার কথা হয়েছে বলেও জানা যায়। সেখানে যৌথভাবে আন্দোলনের ব্যাপারে ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে। এছাড়া আত্মগোপনে থাকা নেতাদের এবার প্রকাশ্যে মাঠে নামারও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এবার মাঠে নামার ক্ষেত্রে কোনো নেতার অজুহাত আমলে নেবে না বিএনপির হাইকমান্ড।
আরও পড়ুন>> ঐকমত্যে না পৌঁছাতে পারলে পুরো জাতি খাদে পড়বে
সামনে যে কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলতে চায় তার ইঙ্গিত মিলছে দলটির জ্যেষ্ঠ নেতাদের সাম্প্রতিক বক্তব্যেও। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান গত শুক্রবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে অনুষ্ঠিত সভায় বলেন, ‘এবার জুজুর ভয় দেখিয়ে এই সরকারের কোনো লাভ হবে না। নির্বাচনের পর সরকার পাঁচদিনও টিকবে কি না কেউ বলতে পারেন? সুতরাং, ২০১৪ সাল আর ২০২৪ সাল কিন্তু এক নয়। জনগণের শক্তির কাছে কামান বা বুলেট কিছুই টেকে না। বিশ্বে এমন অসংখ্য নজির রয়েছে। এবার সরকারের শেষ রক্ষা হবে না। এ সরকারের ওপর জনগণের আস্থা নেই।’
আবার বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘জোর করে ক্ষমতায় আসীন সরকারের পতন ঘটানোর যে ঐক্যবদ্ধ লড়াই, সেই লড়াইয়ে সবাই শামিল হোন। আর নির্বাচনে যে প্রহসন হচ্ছে, এ খেলায় দয়া করে কেউ যুক্ত হবেন না। এই ভোট দেওয়ার কোনো অর্থ নেই। আমরা আহ্বান জানাই যে, বাংলাদেশে সুষ্ঠু গণতন্ত্রের চর্চা হোক।’
আন্দোলন কর্মসূচি বাস্তবায়নে অতীত অভিজ্ঞতা এবং আগামীর অনিশ্চয়তা নিয়ে বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা তৈরি হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকার পার্শ্ববর্তী একটি উপজেলা বিএনপির দায়িত্বশীল নেতা জাগো নিউজকে বলেন, ‘রাজনৈতিক নেতাদের ভাষণ আর বাস্তবতা এক নয়। গত দেড় দশকে সব জায়গায় আওয়ামী লীগ উচ্ছিষ্টভোগী, সুবিধাভোগী সৃষ্টি করে দলীয়করণের মাধ্যমে নির্বাচনের দিকে হাঁটছে। নির্বাচন ঘিরে সারাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সতর্ক। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও মাঠে রয়েছেন। ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সবাই সশস্ত্র অবস্থায় থাকে। ভোটকেন্দ্র পর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য এবং আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের উপস্থিতিতে আন্দোলনকারীরা কীভাবে মাঠে নামবে?’
আরও পড়ুন>> ‘সরকার ৭ জানুয়ারি নির্বাচন করতে পারবে বলে মনে করি না’
তিনি বলেন, ‘এছাড়া অতীত অভিজ্ঞতায় দেখা যায় স্থায়ী কমিটির সদস্যসহ বিভিন্ন পর্যায়ের অধিকাংশ দায়িত্বশীল নেতা গ্রেফতার–আতঙ্কে আত্মগোপনে থাকেন। ঢাকায় নেতাকর্মীরা মাঠে সেভাবে দৃশ্যমান থাকেন না। এ পরিস্থিতিতে সরকারের ওপর শক্ত আন্তর্জাতিক চাপ ছাড়া মাঠে নেমে বিএনপি নেতাকর্মীদের গণতান্ত্রিক আন্দোলন করার সুযোগ নেই।’
বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও যশোর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু জাগো নিউজকে বলেন, ‘জেলা-উপজেলা পর্যায়ের মাঠে সক্রিয় সব নেতার নামে অসংখ্য মামলা দেওয়া হয়েছে। বর্তমান সরকারের বিরোধী দল দমনে সবচেয়ে বড় অস্ত্র হচ্ছে মামলা। তাই নেতাদের অনেকে মাঠে কম নামলেও ভিন্নভাবে কাজ করছেন। আগামী কর্মসূচিতে সবাই একযোগে মাঠে নামবেন।’
বিএনপি নেতারা মাঠে নেই এটি সত্য নয়। কৌশলগত কারণে আমাদের নেতাদের একেকজন একেক ধরনের কর্মকাণ্ডে রয়েছেন। যখন যা করা দরকার দল করছে। আগামী দিনেও দেশে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার ফিরিয়ে আনতে যা করার বিএনপিসহ সমমনারা তাই করবে। কর্মসূচি বাস্তবায়ন নিয়ে কোনো সংশয় আছে বলে মনে করি না।-বেগম সেলিমা রহমান
জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা আজিজুর রহমান বলেন, ‘ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনতে হলে সব দলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। তাহলে গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার ফিরে আসবে। সে বিষয় মাথায় রেখেই আগামী দিনে বিএনপি-জামায়াত মাঠে থাকবে বলে মনে হচ্ছে।’
বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না জাগো নিউজকে বলেন, ‘দেশের বর্তমান অবস্থায় সবাই মিলেই মাঠে থাকতে হবে। আমরা সেদিকেই যাচ্ছি।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘বিএনপি নেতারা মাঠে নেই এটি সত্য নয়। কৌশলগত কারণে আমাদের নেতাদের একেকজন একেক ধরনের কর্মকাণ্ডে রয়েছেন। যখন যা করা দরকার দল করছে। আগামী দিনেও দেশে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার ফিরিয়ে আনতে যা করার বিএনপিসহ সমমনারা তাই করবে। কর্মসূচি বাস্তবায়ন নিয়ে কোনো সংশয় আছে বলে মনে করি না।’
কেএইচ/এএসএ/জেআইএম