বিএনপি নির্বাচনে না এলে চরম পরিণতি ভোগ করতে হবে
রাশেদ খান মেনন। বর্ষীয়ান বামপন্থি রাজনীতিক। সভাপতি, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের সাবেক মন্ত্রী। রাজনীতি, নির্বাচন প্রসঙ্গ নিয়ে মুখোমুখি হন জাগো নিউজ-এর। দুই পর্বের সাক্ষাৎকারের আজ থাকছে শেষটি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সায়েম সাবু।
জাগো নিউজ: নির্বাচন ঘিরে ফের দল ভাঙনের খেলা। নতুন নতুন জোট হচ্ছে। বিএনপি অভিযোগ করছে সরকার বিএনপি ভাঙনের ষড়যন্ত্র করছে।
রাশেদ খান মেনন: বিএনপি নেতা মেজর (অব.) হাফিজ সরকারের অনুঘটক হিসেবে কাজ করছে? তিনি তো বহু আগে থেকেই বিএনপি নিয়ে নানা কথা বলে আসছেন।
জাগো নিউজ: দল ভাঙনে আসলে কার লাভ? আপনারও ভেঙেছে।
রাশেদ খান মেনন: ভাঙন আসলে ভালো কিছু বয়ে আনে না। যে কোনো ভাঙন বিভেদ সৃষ্টি করে। জনগণের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করে।
এরপর যদি অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা দেয় তাহলে দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এটিই তো চাইছে বিরোধীরা। আমি তো মনে করি, স্যাংশন্সের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। কিউবা এগোচ্ছে, উত্তর কোরিয়া এগোচ্ছে, ইরান এগিয়ে যাচ্ছে। এতে অসুবিধা কী?
আমরা ভেঙেছি কারও ষড়যন্ত্রের কারণে নয়। আমরা আন্তর্জাতিক মতবাদ ও নিজেদের মধ্যকার বোঝাপড়া নিয়ে বিভাজিত হয়েছি। সেখানে পাকিস্তান সরকারের কোনো ভূমিকা ছিল বলে মনে করি না। তবে ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
আরও পড়ুন>> আওয়ামী লীগ–বিএনপি আলোচনায় না বসলে সংকট বাড়বে
জাগো নিউজ: বিএনপির সাবেক বা বহিষ্কৃত কিছু নেতা নিয়ে যে ভাঙনের খেলা চলছে তাতে দলটির কি ক্ষতি হতে পারে বলে মনে করেন?
রাশেদ খান মেনন: ভাঙনে বিএনপির তেমন ক্ষতি হবে বলে মনে করি না। তৃণমূল বিএনপি তৈরি হয়েছে বেশ আগে। বিএনপি থেকে আরও লোক বেরিয়ে গিয়ে দল গঠন করেছিল। তাতে বিএনপির জনপ্রিয়তা হারায়নি। আমার কাছে মনে হয়েছে এসব দল বা জোটে মূল বিএনপি থেকে খুব বেশি লোক আসবে না।
জাগো নিউজ: সামনে কী অপেক্ষা করছে?
রাশেদ খান মেনন: নির্বাচন হবে। এতে কোনো সমস্যা দেখছি না। যারা নির্বাচনে আসবে না বলে আছেন, তারা স্যাংশন্সের অপেক্ষায় বসে আছেন।
জাগো নিউজ: স্যাংশন্স তো দিলো। তাতে কী আসে-যায়! অন্তত সরকার তাই বোঝাতে চাইছে।
রাশেদ খান মেনন: আমাদের কিছু আসে-যায় না। তবে অনেকেই তো সে অপেক্ষায় আছে। এরপর যদি অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা দিয়ে দেয় তাহলে দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এটিই তো চাইছে বিরোধীরা।
আরও পড়ুন>> ‘একতরফা নির্বাচন হলে সংকট নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে’
আমি মনে করি, স্যাংশন্সের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। কিউবা এগোচ্ছে, উত্তর কোরিয়া এগোচ্ছে, ইরান এগিয়ে যাচ্ছে। এতে অসুবিধা কী?
জাগো নিউজ: তার মানে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ উত্তর কোরিয়া বা কিউবার পথে?
রাশেদ খান মেনন: যে কোনো স্যাংশন্সের বিরুদ্ধে আমি দাঁড়াবো এটি আমার নাগরিক দায়িত্ব। ৭০ বছর ধরে কিউবাকে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রাখা হয়েছে। ইরানের ওপর স্যাংশন্স দেওয়া হচ্ছে একের পর এক। তাতে কী হয়েছে? জনগণ কষ্টে আছে সেসব দেশে। কিন্তু তারা তো মোকাবিলা করে এগিয়ে যাচ্ছে।
বিএনপি নির্বাচনে আসুক। আমরা চাই শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হোক। মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা পাক। বিএনপি এবার নির্বাচনে না এলে চরম পরিণতি ভোগ করতে হবে।
আমাদের এখানে অনেকেই মনে করছেন স্যাংশন্স আসবে। কিন্তু মনে রাখা দরকার বাংলাদেশের মানুষ খুব সোজা নয়। বাংলাদেশের মাটি এঁটেল। গলে গেলে মোমের মতো। শক্ত হলে ইটের মতো।
জাগো নিউজ: এখানে অনেকেই স্যাংশন্সে উল্লাস প্রকাশ করছে। সেই দেশের মানুষ স্যাংশন্সের বিরুদ্ধে ঘুরে দাঁড়াবে?
রাশেদ খান মেনন: এ উল্লাস কোনো কাজে আসবে না। ইরানেও অনেকে উল্লাস করেন। তাতে কি ইরান বসে আছে। এখন যুক্তরাষ্ট্র রীতিমতো ইরানকে নিয়ে চিন্তিত, কারণ কখন যে ইরান ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সরাসরি অবস্থান নেয়।
দেশপ্রেমিক মানুষ ঘুরে দাঁড়ালে এমন নিষেধাজ্ঞা গুরুত্ব পায় না। কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হবো হয়তো। স্যাংশন্সে গার্মেন্টশিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হবে। রপ্তানিশিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আমরা করোনা মহামারি মোকাবিলা করে এগিয়ে যাচ্ছি তো। নিষেধাজ্ঞাও মোকাবিলা করতে পারব। বাঙালির সে সাহস আছে।
আরও পড়ুন>> ‘শেখ হাসিনা সরকার উৎখাত হলে রাজনৈতিকভাবেই মূল্য দিতে হবে’
জাগো নিউজ: জোটে আছেন। এবার আসন ভাগাভাগি নিয়ে নতুন দর কষাকষি করছেন?
রাশেদ খান মেনন: দর কষাকষি চলছে। বেশি আসন চাইবো। তবে আলোচনার মাধ্যামে যেটা ভালো হবে সেটাই প্রত্যাশা করবো।
আমরা বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে জোট করেছি। মন্ত্রী হয়েছিলাম। এখন নেই। তাতে কোনো দুঃখ নেই। জোটে আছি।
জাগো নিউজ: নির্বাচনের ফলাফল কী প্রত্যাশা করবেন?
রাশেদ খান মেনন: আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোট জিতবে। সম্প্রতি অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আবুল বারকাত যে গবেষণা জরিপ প্রকাশ করেছেন সেখানেও এমন বিজয়ের কথা উঠে এসেছে।
জাগো নিউজ: এমন আত্মবিশ্বাস থাকলে তো সরকার দল নিরপেক্ষ সরকার ব্যবস্থার মাধ্যমে নির্বাচন আয়োজন করতেই পারে?
রাশেদ খান মেনন: আমরা এমন সরকার ব্যবস্থায় যাবো কেন? আমাদের সংবিধান আছে। আইন আছে। এর মধ্যে থেকে আলোচনা করতে হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ধ্বংস করেছে বিএনপি। আমরা আর এমন ব্যবস্থায় যেতে চাই না।
জাগো নিউজ: বিএনপি ধ্বংস করেছে। আপনারা তো ঠিকঠাক করতে পারতেন?
রাশেদ খান মেনন: আর সময় নেই। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার কথা মানুষ ভোলেনি। কারচুপির অভিযোগ তখনও উঠেছিল।
জাগো নিউজ: মানুষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জালিয়াতির কথাও ভোলে না, দলীয় সরকারের জালিয়াতির কথাও ভোলে না।
রাশেদ খান মেনন: দলীয় সরকারের অধীনেই সব দেশে নির্বাচন হয়। বিএনপি মাগুরা উপ-নির্বাচনে জালিয়াতি করেছিল বলেই আমরা তখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার দাবি তুলেছিলাম।
জাগো নিউজ: সম্প্রতি লক্ষ্মীপুরে উপ-নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে ৫৭ মিনিটে ৪৩ জাল ভোট দেওয়ার ঘটনা প্রকাশ পেয়েছে। এরকম বহু নজির তৈরি হয়েছে আপনাদের আমলে।
রাশেদ খান মেনন: অভিযোগ পাওয়া মাত্র নির্বাচন কমিশন ব্যবস্থা নিচ্ছে। মাগুরা থেকে নির্বাচন কমিশন পালিয়ে এসেছিল। এরকম তো এখন ঘটছে না।
জাগো নিউজ: নির্বাচন কমিশন এখন যা করছে তা লোকদেখানো বলে অনেকে মনে করছেন। মানুষ অভিযোগ করে এ সরকার মাগুরার মতো শত শত উদাহরণ তৈরি করেছে।
রাশেদ খান মেনন: এটি ভুল অভিযোগ। বিএনপি নির্বাচনে আসুক। আমরা চাই শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হোক। মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা পাক। বিএনপি এবার নির্বাচনে না এলে চরম পরিণতি ভোগ করতে হবে।
এএসএস/এএসএ/এএসএম