ভিডিও EN
  1. Home/
  2. রাজনীতি

জেলখানায় বসেও সংলাপ হতে পারে

সায়েম সাবু | প্রকাশিত: ০৮:১৫ পিএম, ২৩ নভেম্বর ২০২৩

রাশেদ খান মেনন। বর্ষীয়ান বামপন্থি রাজনীতিক। সভাপতি, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের সাবেক মন্ত্রী। রাজনীতি, নির্বাচন প্রসঙ্গ নিয়ে মুখোমুখি হন জাগো নিউজের। দুই পর্বের সাক্ষাৎকারের আজ থাকছে প্রথমটি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সায়েম সাবু।

জাগো নিউজ: জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হয়েছে। নির্বাচন এলেই উদ্বিগ্ন হয় মানুষ। এবারও ঠিক তাই। সংঘাতের আশঙ্কা বাড়ছে। কোন পথে বাংলাদেশ?

রাশেদ খান মেনন: বাংলাদেশের সব জাতীয় নির্বাচনে সংঘাত হয়েছে এমনটি নয়। শান্তিপূর্ণ নির্বাচনও হয়েছে। ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে জামায়াত যুদ্ধাপরাধের বিচার বন্ধের দাবিতে তাণ্ডব চালিয়েছে। বিএনপি ওই আন্দোলনে যুক্ত থেকেছে। এবারও অবরোধ করছে বিএনপি-জামায়াত। ২০১৮ সালে বিএনপি শেখ হাসিনার অধীনেই নির্বাচন করেছে। যদিও সেটা প্রতীকী নির্বাচন করেছে।

আরও পড়ুন>> যে কারণে পেছাতে পারে নির্বাচন

জাগো নিউজ: প্রতীকী বলছেন কেন? বিএনপি তো সব জায়গায়ই প্রার্থী দিয়েছিল এবং ধানের শীষ প্রতীক নিয়েই…

রাশেদ খান মেনন: কারণ তারা নির্বাচনটা নির্বাচনের মতো করে নেয়নি।

জাগো নিউজ: অভিযোগ আছে সরকার সেই পরিবেশ দেয়নি?

রাশেদ খান মেনন: আমার নির্বাচনী এলাকায় প্রার্থী ছিল বিএনপির নেতা মির্জা আব্বাস। তিনি দিন-রাত প্রচার করেছেন। কোনো সমস্যা হয়নি।

জাগো নিউজ: নির্বাচন নিয়ে আপনি নিজেও প্রশ্ন তুলেছিলেন?

রাশেদ খান মেনন: হ্যাঁ, আমি সমগ্র নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলাম।

জাগো নিউজ: সরকারে থেকে আপনিই যদি অভিযোগ তোলেন, তাহলে বিরোধীদের অভিযোগের তো সত্যতা মেলে।

রাশেদ খান মেনন: বিএনপি এ অভিযোগ তখন তোলেনি। বহু পরে তুলেছে। তবে এবার আপনারা যে সংঘাতের আশঙ্কা করছেন, আমি তা করছি না। এবার সংঘাতের কোনো কারণ আছে বলে আমি মনে করি না।

জাগো নিউজ: কেন এমন মনে করছেন?

রাশেদ খান মেনন: এবার তারা আন্দোলনে জনগণকে সম্পৃক্ত করতে পারেনি। বিরোধীরা এখন যে হরতাল-অবরোধ করছে, তা একেবারে নিরামিষ। এমন আন্দোলনে কোনো ফল আসে না।

আরও পড়ুন>> বিএনপির ‘ব্যর্থতায়’ সফল আওয়ামী লীগ

জাগো নিউজ: আপনি বাংলাদেশ সৃষ্টি থেকে সব আন্দোলনের সক্রিয় নেতা। আন্দোলনে আর কী করতে পারতো বিএনপি?

রাশেদ খান মেনন: বিএনপির সব নির্বাচনে থাকা দরকার ছিল। বিএনপির তো জনসমর্থন আছে।

জাগো নিউজ: বিএনপির জনসমর্থন এখন কি বাড়ছে বলে মনে করেন?

রাশেদ খান মেনন: সমাবেশে তারা জনসমাগম ঘটাতে পেরেছে। কিন্তু জনসমর্থন বাড়ছে তা বলা যাবে না। জনসমর্থন বাড়লে তো গণঅভ্যুত্থান ঘটতো। বিএনপির হরতাল-অবরোধে মানুষ তো রাস্তায় নামছে না।

জাগো নিউজ: সরকারের বল প্রয়োগের যে ধারা, বিএনপির জায়গায় আপনারা থাকলে গণঅভ্যুত্থান ঘটাতে পারতেন?

রাশেদ খান মেনন: গণঅভ্যুত্থান ঘটানের মতো পরিস্থিতি দাঁড়ালে অবশ্যই ঘটাতাম। ১৯৬৯ সালে ঘটেছে, ১৯৯০ সালে ঘটেছে। আমরা তো ছিলাম সেই আন্দোলনে।

বিএনপি আন্দোলনের কৌশলে ভুল করেছে। খালেদা জিয়া বন্দি। তারেক রহমান দেশের বাইরে থেকে নির্দেশ দিচ্ছেন। নেতারা মাঠে নেই। এভাবে কি আন্দোলন হয়!

১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানে বঙ্গবন্ধু জেলে ছিলেন। কিন্তু আমরা তো মাঠে ছিলাম। আমরা তো পাকিস্তান সরকারকে ছাড় দেইনি। আপনি বিএনপির অবরোধ দেখেন, কোন নেতা মাঠে আছে? অবরোধ হচ্ছে বলে তো মনে হচ্ছে না।

জাগো নিউজ: অবরোধের প্রভাব তো পড়ছে?

রাশেদ খান মেনন: বিএনপি আগুননির্ভর অবরোধ করছে। আর কোনো প্রভাব নেই।

জাগো নিউজ: দূরপাল্লার পরিবহন চলছে না হরতাল-অবরোধে। তার মানে জনগণের সংহতি তো মিলছে আন্দোলনে?

রাশেদ খান মেনন: ২০১৩/২০১৪ সালের অবরোধে ২৬৫টি গাড়ি পুড়িয়েছিল। এবারে সেই ঝুঁকি পরিবহন মালিকরা নেয়নি।

জাগো নিউজ: এবারে ঝুঁকি না নেওয়ার কারণ কী?

রাশেদ খান মেনন: ক্ষতির সম্মুখীন হতে চাইছে না।

জাগো নিউজ: সরকার তো ক্ষতিপূরণের ঘোষণা দিচ্ছে?

রাশেদ খান মেনন: হ্যাঁ, কিন্তু জানমালের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে তারা পরিবহন চালাতে চাইছে না।

জাগো নিউজ: তাহলে তো বিএনপির হরতাল-অবরোধ সফল?

রাশেদ খান মেনন: কীসের সফল? রাস্তায় লোকটা কই? ভয় দেখিয়ে তো জয় হয় না। আগুন জ্বালিয়ে আন্দোলন হয়?

জাগো নিউজ: এর আগেও আগুন দিয়েছে?

আরও পড়ুন>> ‘বিএনপির সঙ্গে ভারতের স্বার্থ মিলছে না’

রাশেদ খান মেনন: মালিক সমিতি সিদ্ধান্ত নিয়ে গতবার গাড়ি চালিয়েছে। এবারে নিতে পারছে না।

জাগো নিউজ: এবারে ভয়টা বেশি?

রাশেদ খান মেনন: মানুষের জীবনের ভয় তো আছে। গতবার বহু মানুষ মারা গিয়েছে।

জাগো নিউজ: ভাত ও ভোটের অধিকার নিয়ে বাংলাদেশ যে পথে হাঁটার কথা, সে হাঁটা হলো নাকি অন্ধকারে ডুবে গেলো?

রাশেদ খান মেনন: আমি মনে করি না বাংলাদেশ অন্ধকারে ডুবে গেছে। তবে এ ধরনের পরিবেশ থাকলে গণতন্ত্র বিকশিত হয় না। সীমাবদ্ধতা থাকে। আমি প্রতিদিন মানুষ মারবো তা তো গণতন্ত্র হতে পারে না।

জাগো নিউজ: আপনাদের তো শক্তভাবে মোকাবিলা করার কথা ছিল?

রাশেদ খান মেনন: রাস্তায় তো আমরাই ছিলাম। আমরাই তো মোকাবিলা করছি।

বিএনপিকে আগে ঠিক করতে হবে তারা নির্বাচনে আসবে। তবেই আলোচনার জন্য বসতে পারে। তখন বলতে পারে নির্বাচনী পরিবেশ ঠিক করো। নেতাকর্মীদের মুক্তি দাও। তখন বলতে পারে এই এই মন্ত্রণালয় আমাদের হাতে বা নিরপেক্ষ লোকের হাতে দাও।

জাগো নিউজ: পুলিশ ছাড়া আপনারা কোথাও নেই। এই অভিযোগ বিএনপি প্রকাশ্যে করে আসছে?

রাশেদ খান মেনন: আমরা পুলিশ ছাড়াই মিছিল করছি। আমাদের সঙ্গে কোথায় পুলিশ আছে?

জাগো নিউজ: পুলিশের সঙ্গে সরকারি দলের হেলমেট বাহিনী থাকে, গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়ে আসছে বারবার?

রাশেদ খান মেনন: ফেক ভিডিও, ছবি আমরা বহু দেখেছি। বিচারপতির বাসার হামলা তো সবাই দেখেছে।

জাগো নিউজ: এর মূল্য বিএনপিকে দিতে হচ্ছে।

রাশেদ খান মেনন: তাহলে? পুলিশের দোষ দিচ্ছেন কেন?

জাগো নিউজ: কিন্তু আপনি সব ফেক বলছেন কেন?

রাশেদ খান মেনন: শাপলা চত্বরে ঘটনার পরে সোমালিয়ার মৃত মানুষের ছবি দিয়ে প্রচার করা হয়েছিল। এরকম বহু ফেক ঘটনা দেখানো হয় এখানে।

জাগো নিউজ: সবই কি ফেক বলে উড়িয়ে দেওয়া যায়? বুয়েটের আবরার হত্যাকাণ্ড, ক্যামেরার সামনে বিশ্বজিৎ হত্যাকাণ্ড তো মানুষকে শিহরিত করে?

রাশেদ খান মেনন: কোথায় আবরার হত্যাকাণ্ড আর কোথায় আন্দোলন? আপনি বলতে চাইছেন সবই সরকারের সৃষ্টি। এটি হলে তো এতদিন অভ্যুত্থান ঘটতো। আমাদের আন্দোলনে কৃষক-শ্রমিক রাস্তায় চলে এসেছে।

জাগো নিউজ: তার মানে আপনি বলতে চাইছেন সমাধান ঠিক রাস্তায়-ই?

রাশেদ খান মেনন: আমি চাই বিএনপি নির্বাচনে আসুক।

বিএনপি আগে বলুক তারা নির্বাচনে আসবে, তবেই সংলাপ গুরুত্ব পায়। জেলখানায় বসেও সংলাপ হতে পারে। অতীতে আমরাও জেলখানায় বসে আলোচনা করেছি।

জাগো নিউজ: এক্ষেত্রে সংলাপ, আলোচনার দাবিও গুরুত্ব পায়?

রাশেদ খান মেনন: বিএনপি আগে বলুক তারা নির্বাচনে আসবে, তবেই সংলাপ গুরুত্ব পায়। জেলখানায় বসেও সংলাপ হতে পারে। অতীতে আমরাও জেলখানায় বসে আলোচনা করেছি।

জাগো নিউজ: আপনি কি মনে করেন আলোচনার জন্যই বিএনপির নেতাদের আটক, জেল দেওয়া হচ্ছে?

রাশেদ খান মেনন: এ ব্যাপারে আমি কিছু বলতে পারবো না। তবে আলোচনার জন্য বিদেশিরা তো চিঠি চালাচালি করছে।

জাগো নিউজ: আপনার কাছে এর গুরুত্ব কতটুকু?

রাশেদ খান মেনন: বিএনপিকে আগে ঠিক করতে হবে তারা নির্বাচনে আসবে। তবেই আলোচনার জন্য বসতে পারে। তখন বলতে পারে নির্বাচনী পরিবেশ ঠিক করো। নেতাকর্মীদের মুক্তি দাও। তখন বলতে পারে এই এই মন্ত্রণালয় আমাদের হাতে বা নিরপেক্ষ লোকের হাতে দাও।

এএসএস/এএসএ/জেআইএম