স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠন হলে বিএনপি ও জিয়া অবৈধ প্রমাণিত হবেন: পরশ
যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস্ পরশ বলেছেন, ৭ নভেম্বরকে বিএনপি ‘বিপ্লব ও সংহতি’ দিবস বলে, কিন্তু আমাদের সীমিত জ্ঞানে একটা বিষয় পরিষ্কার ৭ নভেম্বর বিপ্লবের অন্তরালে বহু মুক্তিযোদ্ধা নিধন করা হয়েছিল। ৭ নভেম্বর বাংলাদেশের বীর মুক্তিযোদ্ধা হত্যার কলঙ্কিত ষড়যন্ত্রের দিন, বিশ্বাসঘাতকতার দিন। এ দিন ‘বিপ্লব’ বলা আসলে জাতির সঙ্গে একটা তামাশা ছাড়া আর কিছু নয়।
তিনি বলেন, যুবসমাজের আজকের জিয়াউর রহমানে মরণোত্তর বিচার ও জাতীয় তদন্ত কমিশনের দাবি অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। শুধু জিয়াউর রহমানের প্রকৃত চেহারা উন্মোচিত হওয়ার জন্য না, এ তদন্ত কমিশনের মাধ্যমে প্রমাণিত হবে যে সংগঠন হিসেবে বিএনপির প্রতিষ্ঠা এবং প্রতিষ্ঠাতা হিসাবে জিয়াউর রহমান উভয়ই অবৈধ এবং এ তদন্ত কমিশনের রিপোর্টই বিএনপির নিবন্ধন বাতিল ও নিষিদ্ধ করার পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
তিনি বলেন, ৭ নভেম্বরের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, এ ঘটনায় লাভবান হয়েছে শুধু জিয়াউর রহমান ও উগ্রবাদী সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী। আর পরাজিত হয়েছিল বাংলাদেশ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। স্বাধীন বাংলাদেশে রক্তাক্ত ১৫ আগস্ট, ৩ নভেম্বরের ধারাবাহিকতায় ৭ নভেম্বর দেশে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক মুক্তিযোদ্ধা হত্যা করা হয়েছে। দীর্ঘদিন জিয়াউর রহমানের দল বিএনপি বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মকে বিপ্লব ও সংহতির নামে একটি মিথ্যা আজগুবি তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করেছে। আধুনিক তথ্য-প্রযুক্তির যুগে মানুষ এখন সঠিক তথ্য পাচ্ছে। মানুষকে আর বিভ্রান্ত করা যাবে না।
বুধবার (৭ নভেম্বর) জাতীয় জাদুঘরের সামনে যুবলীগের উদ্যোগে ‘মুক্তিযোদ্ধা হত্যা দিবস’ স্মরণে করা এক সমাবেশে এসব কথা বলেন তিনি।
এসময় তিনি আরও বলেন, সেদিন কোনো বিপ্লব হয়নি, আর জনগণের সংহতির তো প্রশ্নই নেই। প্রকৃতপক্ষে ১৯৭৫ সালের এ দিনে বীর মুক্তিযোদ্ধা ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশারফ, বীর মুক্তিযোদ্ধা কর্নেল হুদা, বীর মুক্তিযোদ্ধা কর্নেল হায়দারসহ বহু সৈনিক ও অফিসারকে হত্যা করা হয়। বহু সৈনিক ও অফিসারদের লাশের ওপর দাঁড়িয়ে এ দিন অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করেছিলেন জিয়াউর রহমান। পরবর্তী সময়ে এ হত্যার রাজনীতির মধ্য দিয়েই বিএনপি দলটির সৃষ্টি হয়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর ক্যু’র মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা করেছিল জিয়াউর রমান। জিয়াউর রহমান ছিলেন মুক্তিযুদ্ধে অনুপ্রবেশকারী এবং বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার মাস্টারমাইন্ড।
তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধুকন্যাদের হত্যার ষড়যন্ত্র এখনো করে যাচ্ছে জিয়ার পরিবার। তারেক রহমান হাওয়া ভবনে বসে গ্রেনেড হামলার পরিকল্পনা করে ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের ২৪ নেতা-কর্মীকে হত্যা করেছিল। তার উদ্দেশ্য ছিল বঙ্গবন্ধুকন্যাকে হত্যা করে আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করা।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক মৃনাল কান্তি দাস বলেন, যেসব সেনা কর্মকর্তা মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন ৭ নভেম্বর অভ্যুত্থানের পর জিয়াউর রহমানের নির্দেশে তাদের বেছে বেছে হত্যা করা হয়। এমনকি মুক্তিযোদ্ধা সৈনিকদের বাড়িতে বাড়িতে ঢুকে তাদের স্ত্রী, তাদের পুত্র-কন্যাদের হত্যা করা হয়েছে। এটাই ছিল জিয়ার সিপাহী-জনতার বিপ্লবের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস।
সঞ্চালকের বক্তব্যে যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. মাইনুল হোসেন খান নিখিল বলেন, তারেক রহমান বাংলাদেশকে বিশ্বের মানচিত্রে একটি জঙ্গি রাষ্ট্র হিসেবে পরিচয় করে দিয়েছিলেন। দশ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালান মামলার আসামি, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার আসামি, হাওয়া ভবন, খোয়াব ভবনে বসে দেশকে দুর্নীতি চ্যাম্পিয়ন করেছিলেন। দেশের মানুষকে বিদ্যুতের পরিবর্তে খাম্বা দিয়েছিলেন। আজও পলাতক তারেক রহমান বিদেশের মাটিতে বসে দেশকে নিয়ে চক্রান্ত করছে। এ দেশের যুবসমাজ বিএনপি-জামায়াতের দেশবিরোধী সব ষড়যন্ত্রের দাঁতভাঙ্গা জবাব দিতে রাজ পথে থাকবে।
এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন, যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মামুনুর রশীদ, ডা. খালেদ শওকত আলী, মো. রফিকুল ইসলাম, মো. হাবিবুর রহমান পবন, মো. এনামুল হক খানসহ কেন্দ্রীয় মহানগর ও বিভিন্ন ওয়ার্ড যুবলীগের নেতারা।
এসইউজে/এমআইএইচএস/এমএস