ভিডিও EN
  1. Home/
  2. রাজনীতি

তথ্যমন্ত্রী

বাইডেনের উপদেষ্টা পরিচয় দেওয়া ব্যক্তি ইসরায়েলের এজেন্ট

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ০৩:৪০ পিএম, ২৯ অক্টোবর ২০২৩

বিএনপি জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছে মন্তব্য করে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, গতকাল তারা একজন ব্যক্তিকে ধরে এনে জো বাইডেনের উপদেষ্টা পরিচয় দিয়ে তাকে দিয়ে সেখানে সংবাদ সম্মেলন করিয়েছে। বিভিন্ন সূত্র বলছে সেই ব্যক্তি ইসরায়েলের একজন এজেন্ট।

রোববার (২৯ অক্টোবর) সচিবালয়ে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।

শনিবার মহাসমাবেশকে ঘিরে পুলিশ ও বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের পর হঠাৎ নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন দলটির নেতা ইশরাক হোসেনসহ কয়েকজন। সেখানে একজন বিদেশি নাগরিকও বক্তব্য রাখেন। মিয়ান আরাফি নামে ওই ব্যক্তি নিজেকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের নির্বাচনী উপদেষ্টা হিসেবে পরিচয় দেন।

এ বিষয়ে সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে প্রশ্ন করা হলে তথ্যমন্ত্রী বলেন, গতকাল তারা একজন ব্যক্তিকে ধরে এনে জো বাইডেনের উপদেষ্টা পরিচয় দিয়ে তাকে দিয়ে সেখানে সংবাদ সম্মেলন করিয়েছে। গণমাধ্যমের সামনে কথা বলতে দিয়েছে, কথা বলেছেন। পাশে আবার তাদের বড় বড় নেতারা বসেছিলেন। মার্কিন দূতাবাস বিবৃতি দিয়ে বলেছে তিনি সরকারের কেউ নন এবং মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও বলেছেন এ ব্যাপারে তিনি কিছু জানেন না। কিন্তু এখানে স্পষ্টতো বিএনপি একটি জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছে।

আওয়ামী লীগের এ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, বিভিন্ন সূত্র বলছে- আমাদের কাছে যে খবর আছে সেই ব্যক্তি হচ্ছেন ইসরাইলের একজন এজেন্ট। এটি বিভিন্ন সূত্র বলছে। ইসরায়েলের বর্বরতার বিরুদ্ধে বিএনপি-জামায়াত কিছু বলেনি। এজন্য ইসরায়েল বিএনপির ওপর সন্তুষ্ট। তো অনেকে বলছে একজন ইসরায়েলি এজেন্টকে তারা পাঠিয়েছে, যাকে নিয়ে কালকে তারা সভা করেছে, এটি বিভিন্ন সূত্র বলছে।

আরও পড়ুন>> বিএনপি নেতারা কি সহিংসতার দায় এড়াতে পারবেন?

গতকালের ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস থেকে একটি বিবৃতি দিয়ে নিন্দা জানিয়েছে। পাশাপাশি ভিসানীতিটি আবার স্মরণ করিয়ে দিয়েছে এবং এ ধরনের ঘটনা ঘটলে আবার ভিসানীতি আরোপ হতে পারে- এ বিষয়ে মতামত জানতে চাইলে তথ্যমন্ত্রী বলেন, সহিংসতার নিন্দা তো সবাই জানাতে পারে। আমরাও নিন্দা জানাচ্ছি। আমরা আশা করবো যারা পুলিশ মেরেছে, পুলিশের ওপর হামলা চালিয়েছে, জাজেস কমপ্লেক্সে হামলা করেছে, হাসপাতালে হামলা চালিয়েছে। প্রধান বিচারপতির বাড়িতে হামলা চালিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে ভিসানীতি প্রয়োগ হবে, আমরা সেটা বিশ্বাস করি।

একটি দল সরাসরি গণমাধ্যমকর্মীদের ওপর হামলা চালাচ্ছে, বিষয়টি আপনারা কীভাবে দেখছেন- এমন প্রশ্নেন জবাবে তিনি বলেন, গতকাল বিএনপি-জামায়াত গণমাধ্যমকর্মীদের ওপর যে হামলা চালিয়েছে সেটার তীব্র নিন্দা জানাই। কোনো দলের পক্ষ হয়ে গণমাধ্যমকর্মীরা সেখানে যাননি। তারা সেখানে সংবাদ সংগ্রহে গেছেন। তাদের ওপর কেন হামলা হলো? যাদের ওপর হামলা হয়েছে তারা বিএনপি বিটের সাংবাদিক, তাদের ওপর হামলা পরিচালনা করা হয়েছে। তার মানে এটি গণমাধ্যমকর্মীর ওপর হামলা ও গণমাধ্যমের ওপর হস্তক্ষেপের শামিল। আমি এগুলোর তীব্র নিন্দা জানাই এবং এর বিচার হবে।

এর আগে তথ্যমন্ত্রী বলেন, বিএনপি শান্তিপূর্ণ সমাবেশের কথা বলে ২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশের ডাক দিয়েছিল। সরকার, পুলিশ প্রশাসন এবং অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, প্রশাসন তাদের সার্বিকভাবে সহযোগিতা করেছে। তারা যেখানে সমাবেশ করতে চেয়েছে, সেখানে সমাবেশ করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশের কথা বলে তারা সমাবেশ শুরু হওয়ার আগেই প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা চালিয়েছে। প্রধান বিচারপতি কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব নন, প্রধান বিচারপতি একটি প্রতিষ্ঠান, বিচার বিভাগের প্রধান। তার বাসভবনে তারা হামলা চালিয়েছে এবং সেখানে ঢুকে পড়েছে।

মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনো প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা হয়নি। বাংলাদেশের ৫২ বছরের ইতিহাসে হাজার হাজার মিছিল সেই বাসভবনের সামনে দিয়ে গেছে। কাকরাইলের মোড়ে অনেক সময় অনেক গন্ডগোল হয়েছে, কিন্তু কখনো প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা হয়নি।

‘তবে এর আগে বিএনপির আইনজীবীরা প্রধান বিচারপতির কার্যালয়ের দরজায়, প্রধান বিচারপতির খাস কামরার দরজায় লাথি মেরেছে। অর্থাৎ তারা বিচার বিভাগকে তোয়াক্কা করে না। সেটি প্রমাণ হচ্ছে গতকালের ঘটনা।’ বলেন তথ্যমন্ত্রী।

তিনি বলেন, সরকার বিএনপি এবং জামায়াতকে সমাবেশ করার বিষয়ে সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছে। কিন্তু তারা সমাবেশ শুরু হওয়ার আগেই প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা চালায়, জাজেস কমপ্লেক্সে হামলা চালায় এবং পুলিশ বক্সে হামলা চালায়, পুলিশ বক্স জ্বালিয়ে দেয়। এরপর সবচেয়ে ন্যাক্কারজনক হচ্ছে তারা পুলিশ হাসপাতালে হামলা চালিয়েছে। হাসপাতালে হামলা চালিয়ে ১৯টি গাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছে, অ্যাম্বুলেন্সসহ ভাঙচুর করেছে।

হাছান মাহমুদ আরও বলেন, ইসরায়েলি বাহিনী গাজায় হাসপাতালে হামলা চালিয়েছে। আর এখানে বিএনপি-জামায়াত হাসপাতালে হামলা চালিয়েছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে এ রকম হাসপাতালে হামলা কোনো রাজনৈতিক দল করেছে বলে আমার জানা নেই।

তথ্যমন্ত্রী বলেন, ইসরায়েলি বাহিনী গাজায় হামলা চালিয়ে ৮০০ মানুষকে হত্যা করার পর একটি শব্দও উচ্চারণ করেনি, এই বর্বরতার বিরুদ্ধে একটি শব্দ উচ্চারণ করেনি বিএনপি এবং জামায়াত। বরং ইসরায়েলে বাহিনীর অনুকরণে তারা গতকাল হাসপাতালে হামলা চালিয়েছে এবং তারা পুলিশের ওপর হামলা চালিয়ে। নাইটিংগেল মোড়সহ বিভিন্ন জায়গায় পুলিশের ওপর হামলা চালিয়ে একজন পুলিশকে পিটিয়ে পরে চাপাতি দিয়ে কোপ দিয়ে হত্যা করা হয়। ১০০’র বেশি পুলিশ সদস্য আহত, দুজনের অবস্থা গুরুতর এবং আনসারের ২৫ জন সদস্য আহত।

তিনি বলেন, এভাবে যখন তাণ্ডব শুরু করে তারা তখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাণ্ডব বন্ধ করার জন্য পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয়। যখন তাণ্ডব বন্ধ করার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পদক্ষেপ গ্রহণ করে তখন প্রথমে বিএনপির নেতারা মঞ্চ ত্যাগ করে চলে যান, তাদের সঙ্গে সঙ্গে কর্মী-সমর্থকরাও চলে যান।

তিনি আরও বলেন, গতকালকের চিত্র আপনারা টেলিভিশনে দেখিয়েছেন, আবার অনেকে দেখেছেন। এটি মনে হচ্ছিল যেন কোনো জায়গায় যুদ্ধ হচ্ছে। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী রাজারবাগে হামলা চালিয়েছিল আপনাদের মনে আছে, গতকাল বিএনপি-জামায়াত রাজারবাগে হামলা চালিয়েছে, রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতাল হামলা চালিয়েছে।

আরও পড়ুন>> নাশকতা-ভাঙচুরের ঘটনায় ২৪ মামলার প্রস্তুতি, আটক ৬৮২

তথ্যমন্ত্রী বলেন, গতকাল রাতে আমি হাসপাতালে গেছি। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গেছি। রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালেও গেছি। সেখানে বহু পুলিশ যন্ত্রণায় ছটফট করছেন। বেশিরভাগ পুলিশের মাথায় তারা আঘাত করেছে, যাতে মৃত্যু হয়।

‘যে পুলিশ সদস্যকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে আপনারা সেই জায়গায় দেখেননি, আমি লাশ দেখেছি। পেছনে কোপ দিয়ে নামিয়ে ফেলা হয়েছে, মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য। এগুলো কোনো রাজনৈতিক দলের কাজ হতে পারে না। এগুলো সন্ত্রাসী দলের কাজ। বিএনপি-জামায়াত যে আবার ২০১৩, ২০১৪, ২০১৫ সালের অবস্থায় ফিরে এসেছে গতকাল আপনারা দেখেছেন।’ বলেন হাছান মাহমুদ।

তিনি বলেন, এভাবে বর্বরতা কোনো রাজনৈতিক দল করতে পারে না। এটির দায় শুধু যারা করেছে তাদের নয়, এটির দায় এটির নির্দেশ দাতাদের। কারণ তারা এই প্রস্তুতি নিয়ে এসেছিল। তারা বোমা নিক্ষেপ করেছে, পুলিশের ওপর ককটেল নিক্ষেপ করেছে এবং পুলিশ সর্বোচ্চ ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছে। যদি সর্বোচ্চ ধৈর্যের পরিচয় না দিতো, তাহলে শতাধিক পুলিশ, আনসার সদস্যসহ প্রায় দেড় শতাধিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য আহত হতেন না। পুলিশ সর্বোচ্চ ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছে বিধায় বিএনপি নেতাকর্মীরা আহত হননি। ওরা হয়তো একটা মনগড়া তথ্য দেবে।

তিনি আরও বলেন, গতকালের সংঘর্ষে শামীম মিয়া নামের যে যুবদল নেতা মারা গেছেন বলে মির্জা ফখরুলরা বলেছেন, তাদের রাজনীতি তো মিথ্যাচারের ওপর। তার পরিবার বলছে দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। তার গায়ে কোনো আঘাতের চিহ্ন ছিল না। হাসপাতাল বলছে তিনি হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা গেছেন। অর্থাৎ কী রকম মিথ্যাচার।

তথ্যমন্ত্রী বলেন, পুলিশ সদস্য হত্যার দায় এড়ানোর জন্য একজন সাধারণ মানুষ তাদের এই অপকর্মের জন্য মৃত্যুবরণ করেছে, সেটিকে যুবদল বলে পরিচয় দিচ্ছে। এ ধরনের ন্যাক্কারজনক ঘটনা দেশ, জনগণ, সরকার বরদাশ করতে পারে না এবং আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ এ ধরনের ন্যাক্কারজনক ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটতে দিতে পারি না। যারা এরকম ন্যাক্কারজনক ঘটনার নেতৃত্ব দিয়েছেন তারা দায় এড়াতে পারেন না। আমাদের দায়িত্ব দেশে শান্তিশৃঙ্খলা, জনগণের স্বস্তি স্থাপন করা, জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

এমএএস/ইএ/এএসএম