ঢাকা ১০ আসন: কে ধরবে নৌকার হাল?
ঢাকা-১০। জাতীয় সংসদের ১৮৩ নম্বর আসন। বেশ কয়েকটি মার্কেট, শিল্প-কারখানা, ব্যবসা বাণিজ্যের হাব এবং গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও রয়েছে এ এলাকায়। আসনটি ধানমন্ডি, নিউমার্কেট, কলাবাগান এবং হাজারীবাগ থানা নিয়ে গঠিত। আসনটিতে মোট ভোটার ৩ লাখ ২১ হাজার ২৭৫ জন।
ঢাকার এ আসনে সর্বশেষ নির্বাচন (উপ-নির্বাচন) হয়েছিল ২০২০ সালের ২১ মার্চ। তৎকালীন সংসদ সদস্য শেখ ফজলে নূর তাপস ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেলে আসনটি ছেড়ে দেন। পরে নৌকা পান ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (এফবিসিসিআই) সাবেক সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন। তিনি ভোট পেয়েছিলেন ১৫ হাজার ৯৯৫৷ তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির শেখ রবিউল আলম পেয়েছিলেন ৮৭১ ভোট। জাতীয় পার্টির হাজি মো. শাহ্জাহান পেয়েছিলেন ৯৭ ভোট। ২০২০ সালের ওই উপ-নির্বাচনে ভোট পড়েছিল ৫.২৮ শতাংশ।
গত সাতটি নির্বাচনের ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, পাঁচটিতেই জয় পেয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা, দুটি নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী জয় পেয়েছিলেন। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে জয় পান ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করা আবদুল মান্নান। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এইচ বি এম ইকবাল, ২০০১ সালে আবারও বিএনপির আবদুল মান্নান, ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের এ কে এম রহমতুল্লাহ এবং ২০১৪ ও ১৮ সালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপস জয়লাভ করেন।
ঘনিয়ে আসছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। মনোনয়ন পেতে এরই মধ্যে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন আওয়ামী লীগের অনেকে। এ আসনটিতে আওয়ামী লীগের হাল ধরতে চান তারা। এরই মধ্যে কয়েকজন ব্যানার-পোস্টার লাগিয়ে প্রচারণা শুরু করেছেন। তাদের মধ্যে সবার আগে রয়েছেন বর্তমান এমপি।
আরও পড়ুন>> ৪ দশমিক ৯৭ শতাংশ ভোটে জয়ী আওয়ামী লীগের মহিউদ্দিন
তবে আওয়ামী লীগের তৃণমূলের অভিযোগ, এ আসনের বর্তমান এমপি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন এলাকায় আসেন না। দেখা মেলে না তার। এমনকি করোনাকালীন সংকটের সময়ও সক্রিয় ছিলেন না তিনি। এছাড়া আওয়ামী লীগের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গেও তার কোনো সম্পর্ক নেই। গুঞ্জন আছে এবারও তিনি এই আসনের মনোনয়ন চাইবেন।
এ আসনের অধীনে মিরপুর রোড ও নায়েম রোড ইউনিট আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. কামাল উদ্দিন মিলন বলেন, উনি এমপি হওয়ার পর স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে কোনো বৈঠকও করেননি। নেতাকর্মীদের খোঁজ-খবর রাখেন না। করোনাকালীনও কোনো কার্যক্রমে অংশ নেননি। জনগণ থেকে অনেক দূরে তিনি।
এসব বিষয়ে জানতে বর্তমান সংসদ সদস্য শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিনকে কয়েকদিন ধরে ফোন করেও সাড়া মেলেনি। গত ৪ অক্টোবর তার ধানমন্ডি কার্যালয়ে গেলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।
এর বাইরে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১৫ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রফিকুল ইসলাম বাবলা বিভিন্ন এলাকায় পোস্টার লাগিয়ে প্রচার চালাচ্ছেন। প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে জানতে গত ৪ অক্টোবর ফোন দিলে তিনি বিস্তারিত কথা বলতে প্রতিবেদককে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে যেতে বলেন। পরে কার্যালয়ের সাময়ে গিয়ে ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। এরপর চারদিন ধরে কল দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান, যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ, ঢাকা দক্ষিণ সিটি মেয়র ফজলে নূর তাপসের স্ত্রী শিউলি আফরিন তাপস প্রার্থী হতে পারেন বলে তৃণমূল আওয়ামী লীগে গুঞ্জন আছে। তবে সাকিব আল হাসান আসলেই প্রার্থী হতে চান কি না, সেটি বিশ্বস্ত কোনো সূত্র থেকে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
আরও পড়ুন>> পুরো পরিবার নিয়ে নির্বাচনী মাঠে ব্যারিস্টার তাপস
১৮ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি বিপ্লব সরকার জাগো নিউজকে বলেন, আমরা চাই বঙ্গবন্ধুর পরিবার থেকে কাউকে মনোনয়ন দেওয়া হোক। তবে দল যাকেই মনোনয়ন দেবে আমরা তার পক্ষেই কাজ করবো। দলই সঠিক সিদ্ধান্ত নেবে।
এছাড়া ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের ১ নং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট কাজী মোরশেদ হোসেন কামাল এবার প্রার্থী হতে চান। তৃণমূল থেকে উঠে আসা এ নেতা জাগো নিউজকে বলেন, আমরা নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত। দল থেকেও বলা হয়েছে নির্বাচনের প্রস্তুতির জন্য। নির্বাচনের জন্য আমরা দলের জন্য কাজ করবো।
আগামী নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, আমি ছাত্রলীগের রাজনীতি করতাম। এরপর আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হয়েছি। আমি ধানমন্ডি থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক থাকার সময় তৃণমূলের নেতাকর্মীদের নিয়ে সব সময় কাজ করেছি, রাজপথে থেকেছি। এখন দল যদি আমাকে মনোনয়ন দেয় তাহলে আমি দলের জন্য জয় আনতে পারবো।
এ আওয়ামী লীগ নেতা আরও বলেন, আমাদের নেত্রী আমাকে ছোটবেলা থেকেই দেখেছেন। দলের প্রতি আমার ত্যাগ, কমিটমেন্ট- এছাড়া আমার কোনো খারাপ ইমেজ নেই। আমি কোনো অন্যায় কাজ করেছি এমন কথাও কেউ বলতে পারবে না। আমি শিক্ষক পরিবারের সন্তান। আমাদের পারিবারিক একটা ঐতিহ্য আছে। দল যদি আমাকে মনোনয়ন দেয় আশা করি জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের মাধ্যমে নির্বাচনে জয়ী হবো।
আসনটির অন্তর্গত বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এবং স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অল্প বৃষ্টিতে রাস্তায় পানি জমে জনদুর্ভোগ, আধুনিক সরকারি হাসপাতাল না থাকাসহ নানান সমস্যা রয়েছে এখানে। এছাড়া হাজারীবাগ এলাকায় সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় কাঁচাবাজার স্থাপনের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
আরও পড়ুন>> নৌকার মনোনয়ন পেলে সাংবাদিকদের ফ্ল্যাট দেবেন জালাল
স্থানীয় বাসিন্দা হৃদয় হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, আমরা চাই এ আসনে এমন একজন এমপি হয়ে আসুন যিনি জনগণের সঙ্গে সব সময় সম্পৃক্ত থাকবেন। শুধু উন্নয়নমূলক কাজ নয়, বিভিন্ন সামাজিক কাজও জনগণকে সঙ্গে নিয়ে করবেন। আমাদের উদ্বুদ্ধ করবেন। সাধারণ মানুষের খোঁজ-খবর রাখবেন।
আসনটির অন্তর্গত ২২ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আয়শা মোকাররমের সঙ্গে কথা হয় জাগো নিউজের। আওয়ামী লীগের রাজনীতি করা এ কাউন্সিলর বলেন, আমাদের এলাকায় অনেক উন্নয়ন হয়েছে। আমরা সব সময় জনগণের পাশে থাকি। আগামী নির্বাচনের জন্যও আমরা প্রস্তুত। এখানকার তৃণমূল আওয়ামী লীগ অনেক সংগঠিত। আমাদের নেত্রী যাকে এ আসনে মনোনয়ন দেবেন, আমরা তার পক্ষেই কাজ করবো।
এমএনএইচ/এমএইচআর/এসএইচএস/এমএস