ভিডিও EN
  1. Home/
  2. রাজনীতি

আমি আওয়ামী লীগে থাকলে বিএনপিকে নিষিদ্ধ করতাম

সায়েম সাবু | প্রকাশিত: ১০:৩১ এএম, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩

হাসানুল হক ইনু। সাবেক তথ্যমন্ত্রী। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সভাপতি। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের অন্যতম নেতা। সংসদ সদস্য ও বীর মুক্তিযোদ্ধা। নির্বাচন, জোট, রাজনীতির প্রসঙ্গ নিয়ে মুখোমুখি হন জাগো নিউজের। দুই পর্বের সাক্ষাৎকারের আজ থাকছে শেষটি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সায়েম সাবু।

জাগো নিউজ: আপনি আগের পর্বে উল্লেখ করেছেন মামলা থেকে বাঁচতে বিএনপি আন্দোলন করছে। কিন্তু তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি এখন অন্য রাজনৈতিক দলগুলোরও। বিএনপির এই দাবির সঙ্গে জনগণও যুক্ত হচ্ছে কি না?

হাসানুল হক ইনু: আমি এখনো তা মনে করছি না। বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে যে আন্দোলন করছে তা জনগণেরও দাবি কি না এখনো বলার সময় আসেনি। বিএনপি-জামায়াতের সমাবেশগুলো হচ্ছে কর্মী সমাবেশ। এখানে সাধারণ জনগণের অংশগ্রহণ নেই। সরকারের বিরুদ্ধে, ছাত্র সমাজ, শ্রমিক, পেশাজীবীদের স্বাধীন কোনো আন্দোলন দেখতে পাবেন না।

আরও পড়ুন>> জামায়াতকে ছাড় দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই

জাগো নিউজ: গত দেড় দশকে বাংলাদেশের ভোট ব্যবস্থার ক্ষতি হয়েছে কি না? জোটের নয়, একজন নিরপেক্ষ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে কী মূল্যায়ন করবেন?

হাসানুল হক ইনু: বাংলাদেশের ভোট ব্যবস্থার ক্ষতি হয়েছে, অস্বীকার করছি না। কিন্ত কারা এ ক্ষতির জন্য দায়ী তা আপনাকে মূল্যায়ন করতে হবে। বারবার নির্বাচন বানচাল করার চেষ্টা করা হয়েছে। নির্বাচন কাঠামো শক্তিশালী করতে হলে সব রাজনৈতিক দলকে সহযোগিতা করতে হবে।

বিএনপি সন্ত্রাসী দল এটি প্রমাণিত। বঙ্গবন্ধু, ’৭১-কে যে দল মানবে না সেই দলের রাজনীতি করার কোনো অধিকার নেই। আমি সরকার নিয়ন্ত্রণ করলে বিএনপিকে ১৫ দিন সময় দিতাম। তারা যদি শর্ত না মানে তাহলে নিষিদ্ধ করে দিতাম।

জাগো নিউজ: এ প্রশ্নে আপনাদের দায় নিয়ে কী বলবেন?

হাসানুল হক ইনু: আমাদের ওপর দায় চাপানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। প্রতিপক্ষ নির্বাচনের বাইরে ক্ষমতায় আসতে চাইছে। তারা ভোট পদ্ধতি দুর্বল করেছে। আমরা সুরক্ষা দেওয়ার চেষ্টার করছি। তবে এই সুরক্ষা দেওয়া কঠিন কাজ বলে মনে করি।

জাগো নিউজ: আপনার ভাষায় বিএনপি যদি নির্বাচন কাঠামোকে এভাবে দুর্বল করতেই থাকে তাহলে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ কী?

হাসানুল হক ইনু: আপনাকে বিভাজনের রাজনীতি নিয়ে আগে ভাবতে হবে। ১৯৭১, ১৯৭৫, ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার মধ্য দিয়ে দেশের রাজনীতি বিভক্ত করা হয়েছে। আমি তো একাত্তরের পরাজিত শক্তির সঙ্গে সমাঝোতা করে রাজনীতি করতে পারি না। এই সমঝোতা করতে থাকলে বাংলাদেশ আরও ৩০ বছর ভুগবে।

আরও পড়ুন>> বাক্যবাণে উত্তপ্ত রাজনীতি, পাল্টেছে সুর

আমরা ক্ষমতায় থাকলে একাত্তরের পরাজিত শক্তিকে পরাস্ত করেই রাজনীতি করবো। ঠিক এই পরাজিত শক্তি ক্ষমতায় গেলে আমাদের পরাস্ত করেই ক্ষমতায় থাকবে। এখানে আপসের কোনো সুযোগ নেই। লড়াই হবে।

জাগো নিউজ: ক্ষমতায় গিয়ে সম্ভবত এ ধারণা আপনার আরও পোক্ত হয়েছে।

হাসানুল হক ইনু: এই উপলব্ধি মুক্তযুদ্ধের মধ্য দিয়েই। একাত্তর বা ১৫ আগস্টের খুনিদের নিশ্চিহ্ন করা না পর্যন্ত আমাদের লড়াই চলবেই।

জাগো নিউজ: এই লড়াই কতদিনের?

হাসানুল হক ইনু: এই মীমাংসা বিএনপিকে করতে হবে। হয় ১৯৭১ –এর শত্রুদের ছাড়তে হবে না হয় মুসলিম লীগের মতো নিঃশেষ করতে হবে। এই নিঃশেষ করার লড়াই আমাদের আরও ৩০ বছর করা লাগতে পারে।

জাগো নিউজ: এই লড়াই করতে গিয়ে ‘৭১, ’৭৫-এর ষড়যন্ত্র আবারও দেখতে পান?

হাসানুল হক ইনু: ষড়যন্ত্র শেষ হয়েছে বলে আমি মনে করি না।

স্বাধীনতার পরাজিত শক্তি, সামরিক শক্তির রেশ রাজনীতিতে থাকলে বাংলাদেশ কখনই সঠিক পথে এগোবে না। সংবিধানের চার নীতি, জাতির পিতা, স্বাধীনতার ঘোষণা, ৩০ লাখ শহীদের সংখ্যা, জাতীয় সংগীত, জাতীয় পতাকার বিষয় মীমাংসিত। এই মীমাংসিত বিষয়ে যতদিন বিতর্ক থাকবে ততদিন বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না।

জাগো নিউজ: এই ষড়যন্ত্র বাস্তব রূপ নিলে আপনাদের ভবিষ্যৎ কী?

হাসানুল হক ইনু: এটি তো যুদ্ধের মতো। হেরে গেলে ফের লড়াই করবো জেতার জন্য। ওরা হেরে গেলে আমরা ধ্বংস করে ফেলবো। আমি আওয়ামী লীগে থাকলে বিএনপিকে নিষিদ্ধ করতাম। বিএনপি সন্ত্রাসী দল এটি প্রমাণিত। বঙ্গবন্ধু, ’৭১-কে যে দল মানবে না সেই দলের রাজনীতি করার কোনো অধিকার নেই। আমি সরকার নিয়ন্ত্রণ করলে বিএনপিকে ১৫ দিন সময় দিতাম। তারা যদি শর্ত না মানে তাহলে নিষিদ্ধ করে দিতাম।

আরও পড়ুন>> আগামী নির্বাচনে জাসদ আরও আসন চাইবে

জাগো নিউজ: আওয়ামী লীগ তো জামায়াতকেই নিষিদ্ধ করতে পারলো না?

হাসানুল হক ইনু: জামায়াতকে ছাড় দেওয়া আওয়ামী লীগের ভুল রাজনীতি মনে করি।

জাগো নিউজ: ভুল বলবেন নাকি ব্যর্থতা বলবেন?

হাসানুল হক ইনু: একাত্তর, পঁচাত্তরের খুনিদের সঙ্গে কোনোভাবে আপস হতে পারে না। তাদের ছাড় দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আমি শুধু এটুকু বলবো।

স্বাধীনতার পরাজিত শক্তি, সামরিক শক্তির রেশ রাজনীতিতে থাকলে বাংলাদেশ কখনই সঠিক পথে এগোবে না। সংবিধানের চার নীতি, জাতির পিতা, স্বাধীনতার ঘোষণা, ৩০ লাখ শহীদের সংখ্যা, জাতীয় সংগীত, জাতীয় পতাকার বিষয় মীমাংসিত। এই মীমাংসিত বিষয়ে যতদিন বিতর্ক থাকবে ততদিন বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না।

জাগো নিউজ: এর পরেও তো শেষ আছে। এই রাজনীতির শেষ কোথায়?

হাসানুল হক ইনু: শোনেন, অতীতে চারটি নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হয়েছে। পরাজিতরা কেউই ফলাফল মেনে নেয়নি। আওয়ামী লীগ-বিএনপি দুবার করে ফল বাতিলের দাবি জানিয়েছে। আগামী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মধ্য দিয়ে শান্তি আসবে এই কথার গ্যারান্টি কি? যিনি আসবেন তাকে তো আমি মানবো না। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হওয়ার পরেও কেন সংঘর্ষ হয়। তার মানে এটি ইস্যু নয়। ইস্যু হচ্ছে একাত্তরের পরাজিতরা নিজেদের দায়মুক্তি চায়। নইলে যুদ্ধাপরাধী সাঈদীর মৃত্যুর পর বিএনপি এবং তারেক রহমান প্রকাশ্যে বিবৃতি দিতো না। সাঈদী একজন অপরাধী।

জাগো নিউজ: সাঈদীর মৃত্যুতে শোক জানিয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও…

হাসানুল হক ইনু: আওয়ামী লীগ তো দলীয়ভাবে শোক জানায়নি। আওয়ামী লীগের মধ্যে খন্দকার মোশতাকের লোক ঘাপটি মেরে আছে। তারাই শোক জানিয়েছে। এদের শোক জানানো রাজনীতি না। রাজনীতি হচ্ছে তারেক রহমান যখন লেখেন, ‘আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী’ তখন। তিনি কোথাকার আল্লামা? তিনি আন্তর্জাতিক অপরাধে অপরাধী।

জাগো নিউজ: একাত্তরের চেতনা দাঁড় করানোর চেষ্টা করছেন দেড় দশক ধরে। আবার সংকটময় রাজনীতি থেকে বেরোনোর পথ খুঁজছেন বলেও আলোচনা রয়েছে। তাহলে চেতনার কী হলো?

হাসানুল হক ইনু: সংবিধানের বাইরে আর কোনো পথ খুঁজছি না। তত্ত্বাবধায়ক সরকার হলেও এই প্রশাসন দিয়েই ভোট করতে হবে। আমরা অযথা অন্য পথে যাবো কেন? তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিরপেক্ষ নির্বাচন করার ক্ষমতা রাখে না।

জাগো নিউজ: দলীয় সরকার রাখে?

হাসানুল হক ইনু: দলীয় সরকার পারে কি না, সেটা আরেক প্রশ্ন। ভালো নির্বাচনের বিকল্প পথ খুঁজতে হবে। আস্তে আস্তে ভালো করার লড়াইটা চালিয়ে যেতে হবে। সর্বদলীয় সরকার ব্যবস্থার মধ্য দিয়েও নির্বাচন আয়োজনের ব্যবস্থা হতে পারে।

এএসএস/এএসএ/জেআইএম