আগামী নির্বাচনে জাসদ আরও আসন চাইবে
হাসানুল হক ইনু। সংসদ সদস্য ও সাবেক তথ্যমন্ত্রী। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সভাপতি। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের অন্যতম নেতা। বীর মুক্তিযোদ্ধা। নির্বাচন, জোট, রাজনীতির প্রসঙ্গ নিয়ে মুখোমুখি হন জাগো নিউজের। দুই পর্বের সাক্ষাৎকারের আজ থাকছে প্রথমটি।
সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সায়েম সাবু।
জাগো নিউজ: দোরগোড়ায় জাতীয় নির্বাচন। নানা বাতাস বইছে রাজনীতির মাঠে। আপনার দলের অবস্থান নিয়ে কী বলবেন?
হাসানুল হক ইনু: আমরা আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটে আছি। জোটে থেকেই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছি। এই নির্বাচনে জাসদ আরও আসন চাইবে। এ বিষয়ে সামনে আলোচনা চালিয়ে যাবো। আমরা বেশ কিছু আসন উন্মুক্ত রাখার প্রস্তাব রাখবো, যেখানে জোটভুক্ত দলগুলোর একাধিক প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন।
জাগো নিউজ: গত দুটি জাতীয় নির্বাচন নিয়ে নানা প্রশ্ন আছে। সামনের নির্বাচনের আয়োজন নিয়ে কী বলবেন?
হাসানুল হক ইনু: সামনের নির্বাচনে আর গত দুটি নির্বাচনের পুনরাবৃত্তি হবে না। ভোটকেন্দ্রের পরিবেশ উন্নতমানের হবে বলেই আমার বিশ্বাস।
২০১৮ সালে এসে বিএনপি জোট ডিগবাজি খায়। তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে শোধরানোর চেষ্টা করে। এটি তাদের কাছে ছিল টোকেন নির্বাচন। বিএনপি-জামায়াতের সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করার জন্য আমাদের নির্বাচন করতে হয়েছে এবং সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে হয়েছে।
জাগো নিউজ: এই বিশ্বাসের কথা আগেও বলেছিলেন। টেকেনি। এবার বিশ্বাস করছেন কেন?
আরও পড়ুন>>জামায়াতকে ছাড় দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই
হাসানুল হক ইনু: আমি মনে করি, সময়ের সঙ্গে মিল রেখে নির্বাচন ব্যবস্থাটা ভালো করা দরকার। প্রতিটি নির্বাচনের সময়ই এমন তাগিদ থাকে। নির্বাচন কমিশন একটি ভালো নির্বাচন জাতির সামনে উপহার দেবে বলে মনে করছি।
জাগো নিউজ: এর আগেও এমন তাগিদের কথা বলেছিলেন। নির্বাচন সুষ্ঠু হবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল সরকার জোট।
হাসানুল হক ইনু: আপনার এই মূল্যায়নের সঙ্গে আমি একমত না। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচন পরিস্থিতি ছিল সাংঘর্ষিক, যুদ্ধাবস্থা। ২০১৪ সালের নির্বাচন ছিল আনুষ্ঠানিকতা, যার মধ্য দিয়ে সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষা করা সম্ভব হয়েছে।
আরও পড়ুন>>‘বাংলাদেশ একটি সন্ধিক্ষণে আছে এতে কোনো সন্দেহ নেই’
জাগো নিউজ: ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে কিন্তু বিএনপি-জামায়াত জোট যুদ্ধাবস্থা তৈরি করেনি।
হাসানুল হক ইনু: ২০১৪ সালে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আগুন সন্ত্রাস পরাজিত হয়। আগুন সন্ত্রাসের ধারাবাহিকতা ২০১৮ সালেও বিদ্যামান থাকে। ২০১৩-২০১৪ সালে তারা জঙ্গি সন্ত্রাস করেছে। পুলিশ হত্যা করেছে। ভোটকেন্দ্র পুড়িয়ে দিয়েছে। তারা সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র করেছিল।
২০১৮ সালে এসে বিএনপি জোট ডিগবাজি খায়। তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে শোধরানোর চেষ্টা করে। এটি তাদের কাছে ছিল টোকেন নির্বাচন। বিএনপি-জামায়াতের সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করার জন্য আমাদের নির্বাচন করতে হয়েছে এবং সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে হয়েছে। সুতরাং, নির্বাচনের ভালো-মন্দ নিয়ে মাথা ঘামানোর পরিবেশ ছিল না।
জাগো নিউজ: বিএনপি-জামায়াত জোট এখনো সক্রিয়। নির্বাচন সুষ্ঠুর দাবিতে আন্দোলন করছে।
হাসানুল হক ইনু: এখন তারা দাবিটা উত্থাপন করেছে। তারা এখন আগের মতো সাংঘর্ষিক অবস্থায় নেই।
বিদেশিরা যারা বাংলাদেশের বিষয়ে ওকালতি করছে তাদের চশমা দিয়ে আমাদের গণতন্ত্র দেখাবো না। বিএনপি-জামায়াতের বিরুদ্ধে খুনের মামলা আছে, দুর্নীতির মামলা আছে, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলা আছে। তাদের সঙ্গে অন্তত কোনো আপস হতে পারে না।
আরও পড়ুন>>রাজনৈতিক নবায়ন অপরিহার্য হয়ে পড়ছে
জাগো নিউজ: সাংঘর্ষিক অবস্থায় না গিয়ে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারকে এক প্রকার ছাড় দিচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে। এটি তাদের কৌশলী অবস্থান। শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে তারা অন্তত আপনার সমালোচনার জবাব দিচ্ছে?
হাসানুল হক ইনু: সরকারকে ছাড় দেওয়ার কোনো বিষয় নয়। বিএনপি-জামায়াত মূলত সন্ত্রাসী দল। প্রশাসন, জনগণ ও সরকারের অবস্থানের কারণে বিএনপি-জামায়াতের সশস্ত্র ক্ষমতা হারিয়ে ফেলছে। জঙ্গি-সন্ত্রাসী দলগুলোও শক্তি হারিয়ে ফেলছে। সুতরাং, বিএনপি এখানে কোনো দয়া দেখাচ্ছে না। শক্তিহীন হওয়ার কারণেই ভালো মানুষি দেখানোর চেষ্টা করছে। সরকারকে ছাড় দেওয়ার বিষয় নয়, নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্যই তারা নানা কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে।
জাগো নিউজ: ২০১৪ সালে অংশ না নিয়ে এবং ২০১৮ সালে অংশ নিয়ে নির্বাচন ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে, যে কারণে দেশ ও বিদেশে আপনারা সমালোচিত। এভাবে যদি প্রশ্নবিদ্ধ হতেই থাকে, তাহলে ভবিষ্যৎ কী?
হাসানুল হক ইনু: বিদেশিরা যারা বাংলাদেশের বিষয়ে ওকালতি করছে তাদের চশমা দিয়ে আমাদের গণতন্ত্র দেখাবো না। বিএনপি-জামায়াতের বিরুদ্ধে খুনের মামলা আছে, দুর্নীতির মামলা আছে, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলা আছে। তাদের সঙ্গে অন্তত কোনো আপস হতে পারে না। এদেশের ভবিষ্যৎ জনগণ তৈরি করেবে।
এএসএস/এএসএ/জিকেএস