ভিডিও EN
  1. Home/
  2. রাজনীতি

‘বিদেশিরা হস্তক্ষেপ করতে পারে, ক্ষমতার পরিবর্তন করতে পারবে না’

সায়েম সাবু | প্রকাশিত: ০৯:৩৭ পিএম, ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩

মাহবুবউল আলম হানিফ। যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। কুষ্টিয়া-৩ আসনের সংসদ সদস্য। চলমান রাজনীতি, বিদেশি তৎপরতা, জামায়াত প্রসঙ্গ নিয়ে মুখোমুখি হন জাগো নিউজের। দুই পর্বের সাক্ষাৎকারের আজ থাকছে প্রথমটি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সায়েম সাবু।

জাগো নিউজ: ‘শেখ হাসিনার সরকার দুর্বল হলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে সবাই’ এমন শঙ্কা প্রকাশ করে যুক্তরাষ্ট্রকে চিঠি লিখেছে ভারত সরকার। ভারতের দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকা এ বিষয়ে বিস্তর প্রতিবেদনও প্রকাশ করে। দুর্বল প্রসঙ্গ এলো কেন?

মাহবুবউল আলম হানিফ: ভারতের পত্রিকা আনন্দবাজারের বরাত দিয়ে এমন বিষয়ে বাংলাদেশের গণমাধ্যমও প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এই প্রতিবেদনের যৌক্তিকতা বা সত্যতা আমার জানা নেই। তবে একটি বিষয় বলতে পারি, ভারত সরকার বাইডেন প্রশাসনকে অবহিত করেছে যে, বাংলাদেশের বর্তমান সরকার দুর্বল হলে এ অঞ্চলের ভূ-রাজনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এটিই মূল বার্তা বলে মনে করি। যদি এ ধরনের কথা বলেই থাকে, তাহলে আমি মনে করি এর মধ্যে খারাপ কিছু নেই।

কারণ, বাংলাদেশের রাজনীতির সঙ্গে এ অঞ্চলের ভূ-রাজনীতির গভীর সম্পর্ক রয়েছে। বিশেষ করে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এ সরকার ক্ষমতায় আসার পর জঙ্গি-সন্ত্রাস দমনে যে ভূমিকা রেখেছে, তা ভূ-রাজনীতির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করি। সন্ত্রাস দমনের মধ্য দিয়েই দেশে স্থিতিশীলতা বিরাজ করছে।

 

বাংলাদেশের বর্তমান সরকার দুর্বল হলে এ অঞ্চলের ভূ-রাজনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এটিই মূল বার্তা বলে মনে করি। যদি এ ধরনের কথা বলেই থাকে, তাহলে আমি মনে করি এর মধ্যে খারাপ কিছু নেই।

 

আরও পড়ুন>> আনন্দবাজারের প্রতিবেদন/বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকায় খুশি নয় ভারত 

২০০১ সাল থেকে ২০০৬ সালে পর্যন্ত ফিরে তাকান। বিএনপি-জামায়াতের সময় জঙ্গিবাদের চরম উত্থান আমরা দেখতে পাই। প্রকাশ্যে মানুষকে হত্যা করা হয়। একসঙ্গে ৬৩টি জেলায় বোমা ফাটিয়ে বাংলাদেশকে একটি জঙ্গি রাষ্ট্র বানানোর বার্তা দিয়েছিল। বিচারকদেরও হত্যা করা হয়।

এই সময়ে পার্শ্ববর্তী দেশের সন্ত্রাসী, বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীকে মদত দেওয়া, আশ্রয় দেওয়ার ঘটনা দেখতে পাই। দশ ট্রাক অস্ত্র আনাই হয়েছিল সেভেন সিস্টার্সের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন উলফার হাতে তুলে দেওয়ার জন্য। সেখানকার সন্ত্রাসীদের বাংলাদেশে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়, অস্ত্র দেওয়া হয়। এ অবস্থা চলতে থাকলে তো এখানকার ভূ-রাজনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হতোই। ভারত তো সমস্যার মুখোমুখি হয়েছিল। তারা শঙ্কা প্রকাশ করতেই পারে। বাংলাদেশে শেখ হাসিনার সরকার যদি পরিবর্তন হয়, তাহলে এ অঞ্চলে ফের সন্ত্রাসবাদের বিস্তার ঘটতে পারে।

জাগো নিউজ: আপনি ভারতের নিরাপত্তাজনিত স্বার্থের কথা বললেন। বাংলাদেশের জনগণ যদি শেখ হাসিনা সরকারকে না চায়?

মাহবুবউল আলম হানিফ: দেখুন, ভারত কেন যুক্তরাষ্ট্রকে এই বার্তা দেবে যে শেখ হাসিনার সরকার ক্ষতিগ্রস্ত হলে ভূ-রাজনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে? কারণ ভারত সরকার দেখেছে সম্প্রতি ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন মহল বাংলাদেশের রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করছে। প্রভাব বিস্তার করার চেষ্টা করছে। এটি একটি দেশের রাজনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।

আমাদের দেশের নির্বাচন কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্র নতুন ভিসানীতি চালু করেছে। কেন? এটি তো চরম অসম্মানজনক নীতির প্রতিফলন। মার্কিন ভিসানীতি বাংলাদেশে অভ্যন্তরে সরাসরি হস্তক্ষেপ। এমন হস্তক্ষেপের মাধ্যমে বাংলাদেশের সরকার যেন দুর্বল না হয়, সেটাই হয়তো ভারত সরকার বোঝাতে চাইছে।

জাগো নিউজ: যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি তো শুধু এই সরকার বা আওয়ামী লীগের ওপরে নয়। সব রাজনৈতিক দলের জন্যই প্রযোজ্য। সরকার দুর্বল হবে কেন?

আরও পড়ুন>> সংকট বাড়লে রাজনীতি রাজনীতিবিদদের নাগালের বাইরে চলে যায় 

মাহবুবউল আলম হানিফ: সরকারের ওপর বর্তায়। যদি সত্যিই তারা ভিসানীতির মাধ্যমে গণতন্ত্রের জন্য কাজ করে তাহলে তো বিএনপির ওপর এ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার কথা। কারণ অতীতে বিএনপি-জামায়াত সরকার যেভাবে হত্যা, সন্ত্রাস করেছে তা নজিরবিহীন।

জাগো নিউজ: তাহলে তো ভিসানীতি নিয়ে বিএনপি-জামায়াত ভয়ে থাকার কথা। আপনারা এত সমালোচনা করছেন কেন?

মাহবুবউল আলম হানিফ: আমরা বলেছি, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি জাতির জন্য অসম্মানজনক।

 

আমরা শঙ্কিত তখনই হতাম, যদি আমাদের জনসমর্থন না থাকতো। বিদেশি কোনো শক্তি নয়, দেশের মালিক জনগণ। বিদেশিরা হস্তক্ষেপ করতে পারে, কিন্তু ক্ষমতার পরিবর্তন করতে পারবে না। জনগণ আমাদের সঙ্গে আছে।

 

জাগো নিউজ: এর দায় শুধুই বিএনপি-জামায়াতের। আওয়ামী লীগের কোনো দায় নেই?

মাহবুবউল আলম হানিফ: যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতির দায় আওয়ামী লীগের থাকবে কেন? ২০১৩ সালে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া নিজে যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে চিঠি লিখেছিলেন গার্মেন্টসের জিএসপি সুবিধা বাতিল করার জন্য। ওই সময় বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরু হয়। এই বিচারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে বিএনপি-জামায়াত। আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে জিএসপি সুবিধা বাতিলের চিঠি লেখে, যাতে সরকার চাপে পড়ে। জিএসপি সুবিধা বাতিল হলে তো আওয়ামী লীগ সরকার দায়ী থাকতো না।

আরও পড়ুন>> রাজনৈতিক নবায়ন অপরিহার্য হয়ে পড়ছে 

জাগো নিউজ: সেবার সফল হয়নি বিএনপি-জামায়াত। এবার কী দেখছেন?

মাহবুবউল আলম হানিফ: যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির লবিস্টদের কতটুকু গুরুত্ব দিচ্ছে না দিচ্ছে, সে ব্যাখ্যায় আমি যাবো না। আমরা কোনো আতঙ্কেও নেই। আমরা বলেছি, এমন নীতি একটি দেশের জন্য অসম্মানজনক।

আমরা শঙ্কিত তখনই হতাম, যদি আমাদের জনসমর্থন না থাকতো। বিদেশি কোনো শক্তি নয়, দেশের মালিক জনগণ। বিদেশিরা হস্তক্ষেপ করতে পারে, কিন্তু ক্ষমতার পরিবর্তন করতে পারবে না। জনগণ আমাদের সঙ্গে আছে। যুক্তরাষ্ট্রেরই এক গবেষণা প্রতিষ্ঠান বলেছে, দেশের ৭০ শতাংশ মানুষ শেখ হাসিনা সরকারের সঙ্গে আছে। যে দলের প্রতি ৭০ শতাংশ মানুষের সমর্থন আছে, সে কাকে ভয় পাবে!

এএসএস/এএসএ/জিকেএস