আন্দোলনমুখী নেতৃত্ব চায় বিএনপি, কমিটি পুনর্গঠনে জোর
সরকার পতনের এক দফা দাবির চূড়ান্ত আন্দোলন ত্বরান্বিত করতে আন্দোলনমুখী নেতাদের গুরুত্ব বাড়ছে বিএনপিতে। একই সঙ্গে সুবিধাবাদী নেতারা রয়েছেন পদ হারানোর আতঙ্কে। দলটির নেতাদের ভাষ্য, এটিই এখন চূড়ান্ত আন্দোলন। এ আন্দোলনে যারা গাফিলতি করবেন তাদের বিরুদ্ধে দলের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অতি অল্প সময়ের মধ্যেই আন্দোলনমুখী মাঠের নেতাদের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেওয়ার কথা ভাবছে বিএনপির হাইকমান্ড। বিশেষ করে ঢাকা মহানগর বিএনপির পাশাপাশি কয়েকটি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটিও পুনর্গঠনের কাজ চলতি মাসের মধ্যেই সম্পন্ন হবে। এর অংশ হিসেবে এরই মধ্যে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটি এবং যুবদলের ঢাকা মহানগরের দুটি শাখা পুনর্গঠন হয়েছে।
আরও পড়ুন: এবার নির্বাচন নিয়ে কোনো খেলা খেলতে দেওয়া হবে না
দলীয় সূত্র জানায়, গত ২৯ জুলাই ঢাকার প্রবেশপথে অবস্থান কর্মসূচি ‘সুপার ফ্লপ’ হওয়ায় বিএনপির হাইকমান্ডের বোধোদয় হয়েছে। সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে চলমান আন্দোলনের চূড়ান্ত কর্মসূচিতে যাওয়ার আগে বিএনপি এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর পুনর্গঠন হবে। সে মোতাবেক ঢাকা মহানগর বিএনপির দুই শাখা, যুবদল কেন্দ্রীয় কমিটি ও ছাত্রদলের সভাপতিকে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ সংগঠনের ঢাকা মহানগরের চারটি শাখা, স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় ও ঢাকা মহানগরের দুটি শাখায় জরুরি ভিত্তিতে পুনর্গঠন হবে। আগস্টের মধ্যেই সংগঠনগুলোর পুনর্গঠন কার্যক্রম সম্পন্ন হবে বলে দলটির একাধিক নেতা জানিয়েছেন।
জানা যায়, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুস সালামের বিকল্প হিসেবে কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব এবং এই শাখার সাবেক আহ্বায়ক হাবিবুন নবী খান সোহেল, বর্তমান যুগ্ম আহ্বায়ক হাবিবুর রশিদ হাবিব এবং হামিদুর রহমান হামিদকে ভাবা হচ্ছে। অন্যদিকে সদস্য সচিব তানভীর আহমেদ রবিনকে ভারমুক্ত করে পূর্ণাঙ্গ দায়িত্ব দেওয়ার চিন্তাও রয়েছে। আবার আব্দুস সালামকে আহ্বায়ক রেখে তানভীর আহমেদ রবিনকে সদস্য সচিব এবং হাবিবুর রশিদ হাবিবকে সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়কের দায়িত্ব দেওয়ার কথাও ভাবনায় রয়েছে।
আরও পড়ুন: অঙ্গ সংগঠনের ভূমিকায় ক্ষুব্ধ বিএনপি, সামর্থ্য নিয়ে প্রশ্ন
ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমানুল্লাহ আমানের কারাবাস নিশ্চিত বলে মনে করা হচ্ছে। সেক্ষেত্রে আমিনুল হককে সদস্য সচিব রেখে আহ্বায়ক কাকে করা যায়, সে নেতৃত্ব খুঁজতে বেগ পেতে হচ্ছে দলটির শীর্ষ নেতাদের। উত্তরের যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে যারা দায়িত্ব পালন করছেন তারা সুপার ফাইভের যোগ্য হলেও আহ্বায়ক হিসেবে যোগ্য নন বলে মাঠের কর্মীরা মনে করেন। সে ক্ষেত্রে কারাবন্দি সাবেক যুবদল নেতা সাইফুল আলম নীরব বা এস এম জাহাঙ্গীরকে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির শীর্ষ পদে আনা হতে পারে। এটি না হলে জাতীয় পর্যায়ের কাউকে এই শাখার আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হলে আন্দোলন সংগ্রামে নেতাকর্মীরা আরও সুসংগঠিত, চাঙা হতে পারবেন বলে মনে করছেন তারা।
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির নতুন কমিটি গঠনের আলোচনায় এর আগে কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক ও লক্ষীপুর জেলা বিএনপি আহ্বায়ক শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানীর নাম শোনা গেছে। এবার নতুন করে আন্দোলনমুখী কমিটি গঠনের জন্য দলের ভাইস চেয়ারম্যান ও চেয়ারপারসনের চিকিৎসক দলের সদস্য ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন এবং স্বেচ্ছাসেবক সাবেক দলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েলের নাম শোনা যাচ্ছে।
আরও পড়ুন: রাজনীতিতে জিয়া পরিবারের ভবিষ্যৎ কোন পথে?
অন্যদিকে ঢাকা মহানগরে ছাত্রদলের চার ইউনিটের সম্ভাব্য কমিটির শীর্ষ পদে আলোচনায় রয়েছেন অন্তত ২০ জন নেতা।
ঢাকা মহানগর উত্তর
মনির হোসেন, সাজেদ খান, মনিরুল ইসলাম, মো. সালাউদ্দিন, আব্দুল্লাহ আল হামিদ নীরব, এম এ রহিম এবং সাগর বাবু।
মহানগর পশ্চিম
জুয়েল রাজ, আকরাম আহমেদ, জিন্নাহ, বশির এবং আশরাফুল আলম মামুন।
মহানগর পূর্ব
মো. আলামিন, সোহাগ ভূঁইয়া, ইফতেখার ফয়সাল এবং রিয়াজুল ইসলাম রাসেল।
মহানগর দক্ষিণ
নিয়াজ মাহমুদ নিলয়, আব্দুর রহিম ভূঁইয়া, রফিক হাওলাদার, রাজু আহমেদ এবং শামীম আহমেদ।
এসব নিয়ে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু জাগো নিউজকে বলেন, খুব অল্প সময়ের মধ্যে সরকার পতনের একদফা দাবিতে চূড়ান্ত কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামবে বিএনপি। যাতে এ আন্দোলনে আর কেউ গাফিলতি না করতে পারেন সে জন্যই কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
আরও পড়ুন: ‘যাদের বুকের পাটা আছে তারাই বিএনপি করে’
তিনি বলেন, আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে সব খতিয়ান আছে। পর্যায়ক্রমে সবার বিরুদ্ধেই সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস বলেন, আমরা এখন চূড়ান্ত আন্দোলনে রাজপথে নেমেছি। এ আন্দোলন থেকে পিছু হটার কোনো সুযোগ নেই। আন্দোলনে যারা গাফিলতি করবে তাদের বিরুদ্ধে দলের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, এগুলো চলমান প্রক্রিয়া। সবাই এক জায়গায় সারাজীবন থাকবেন না। কমিটিগুলো দু-বছর মেয়াদি। কমিটি বাতিল হতে পারে, যে কেউ বাদ পড়তে পারেন। এতে হতাশ হওয়ার কিছু নেই।
আরও পড়ুন: ‘সম্মানজনক শাস্তি’ পেলেন ছাত্রদল সভাপতি, এরপর কে?
কেএইচ/এমএইচআর/জিকেএস