২০১৪-১৮ সালে নির্বাচন খেয়েছেন, আর খেতে দেবো না: ফখরুল
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘নির্বাচনের মাধ্যমেই আমরা ক্ষমতার পরিবর্তন চাই। তবে সেই নির্বাচন আপনার মতো শেয়ালের হাতে হোক, তা চাই না। আপনি বারবার নির্বাচন গিলে খেয়ে ফেলেছেন। ২০১৪ সালে খেয়েছেন, ২০১৮ সালে একবার খেয়েছেন, আবারও খেতে চাইছেন। সেই সুযোগ আর দেওয়া হবে না। ভয়াবহ লুটেরা, ফ্যাসিস্ট অবৈধ এ সরকারকে সরিয়ে দেওয়া হবে।’
বুধবার (১২ জুলাই) রাজধানীর নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত মহাসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
আরও পড়ুন: আ’লীগের ভোট চুরির প্রকল্প গুঁড়িয়ে দেওয়া হবে: আমীর খসরু
আগামী নির্বাচনকে ঘিরে সরকার ছক কষছে অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘প্রশাসন, পুলিশ, বিচার বিভাগ; সব জায়গায় নিজেদের লোক বসাচ্ছেন। মন্ত্রীদের এপিএসদের পদোন্নতি দিয়ে জেলায় জেলায় ডিসি বানাচ্ছেন।’
তিনি বলেন, ‘ছক কষে আর কোনো লাভ হবে না। জনগণ রাস্তায় নেমে গেছে। আজকে দেখুন- ঢাকায় সুনামি হয়ে গেছে। মাত্র দুদিনের নোটিশে নয়াপল্টনের এ মহাসমাবেশ মানুষে মানুষে সয়লাব। পথে পথে বাধা দিয়েছেন, তবুও জনস্রোত থামাতে পারেননি। তরুণ-যুবকরা এ মহাসমাবেশে ছুটে এসেছেন।’
আরও পড়ুন: আ’লীগের সমাবেশে লোক নেই, আগামীতে থাকবেই না: আব্বাস
বর্তমান সরকারের আমলে নেতাকর্মীদের খুন-গুম, মামলা-হামলার শিকার হতে হয়েছে জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এ সরকার আমাদের ছয় শতাধিক নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে। এ স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকার শত শত মায়ের বুক খালি করেছে। সন্তানদের এতিম করেছে। সরকারের পেটোয়া বাহিনীর নির্যাতনে অনেকে পঙ্গু হয়ে বিছানায় কাতরাচ্ছেন। এমন অবস্থা থেকে আমাদের তরুণ-যুবকরা রুখে দাঁড়াচ্ছেন। তারা তারুণ্যের নেতা তারেক রহমানের আহ্বানে সাড়া দিয়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছে।’
‘দেখুন, আজকের সমাবেশে চারদিকে তরুণ-যুবকের মুখ। তাদের প্রত্যাশা- একটি নতুন বাংলাদেশ দেখতে চাই। এ প্রত্যাশা নিয়ে সবাই এখানে এসেছেন। তারা পরিবর্তন চান। তারা গুম হওয়া মানুষগুলো ফেরত চান। সরকারকে বলবো- দিনে দিনে বাড়িতেছে দেনা, শুধিতে হইবে ঋণ। বহু ঋণ হয়ে গেছে, সব শোধ করতে হবে’ যোগ করেন মির্জা ফখরুল।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের ব্যর্থতা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘চালের দাম এখন ৮০-৯০ টাকা। অথচ তারা (আওয়ামী লীগ) কথা দিয়েছিল ১০ টাকা কেজি চাল খাওয়াবেন। ঘরে ঘরে চাকরি দেবেন। চাকরি ঠিকই দিয়েছে, সেটা তাদের নিজেদের লোকদের। যদিও তাদের কাছ থেকেও ১০ লাখ, ১৫ লাখ টাকা ঘুস নিয়েছেন।’
আরও পড়ুন>> সরকারের পদত্যাগ ও সংসদ বিলুপ্তির ১ দফা ঘোষণা ফখরুলের
ফখরুল বলেন, ‘কৃষকদের কথা দিয়েছিল- বিনামূল্যে সার দেবে। সেই সারের দাম এখন তিন-চারগুণ বেড়েছে। মধ্যবিত্তদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। অথচ মন্ত্রীরা বলেন, উন্নয়নশীল দেশে দাম তো বাড়বেই। সবাই ভালো আছে, খেয়ে-দেয়ে শুয়ে বসে ভালোই চলছে।’
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী খাদিজার মুক্তি চেয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘তার (খাদিজা) অপরাধ, সে একটি ইউটিউব চ্যানেলে উপস্থাপনা করেছিল। যেখানে বক্তারা কিছু কথা বলেছিলেন। সেই কারণে তাকে রাতের অন্ধকারে তুলে নিয়ে গেছে। তার জামিনের জন্য হাইকোর্ট-সুপ্রিম কোর্টে গিয়েও মুক্তি মেলেনি। জামিন দিয়েও তা বাতিল করা হয়েছে। একটা নাবালক মেয়েকে দিনের পর দিন, মাসের পর মাস কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে থাকতে হচ্ছে। তার মা বলছেন, আমার মেয়ের কী অপরাধ, তা তারা জানেন না।’
আরও পড়ুন>> ১৮ জুলাই ঢাকাসহ সারাদেশে পদযাত্রা
সরকার শুধু দেশের নির্বাচনব্যবস্থা নয়, অর্থনীতি, স্বাস্থ্যব্যবস্থা সব ধ্বংস করেছে অভিযোগ করে তিনি আরও বলেন, ‘ব্যাংকগুলো সব ফাঁকা হয়ে গেছে। দেশ থেকে টাকা নিয়ে আমেরিকায় রাখছিলেন, আমেরিকা যেই স্যাংশনস দিয়েছে, সেখান থেকে অন্য দেশে সরাচ্ছেন। সেই টাকা দেশে ফেরাতে আবার প্রণোদনাও দেওয়া হচ্ছে। কালো টাকা দেশে আনতেও প্রণোদনা দিতে হচ্ছে।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আজকের এই এক দফা আন্দোলনের ঘোষণা ব্যক্তি মির্জা ফখরুলের নয়, তরুণ প্রজন্মের তরুণ্যের নেতা তারেক রহমানের পক্ষ থেকে এ ঘোষণা। দেশের ১৮ কোটি মানুষ, যারা গণতন্ত্রের জন্য তাকিয়ে আছেন, তাদের জন্য ঘোষণা।’
কেএইচ/এএএইচ/জিকেএস