ভিডিও EN
  1. Home/
  2. রাজনীতি

লাঙ্গল নিয়ে ফের কাদের-রওশনের টানাটানি

সাইফুল হক মিঠু | প্রকাশিত: ০৭:১২ পিএম, ১৬ জুন ২০২৩

বহুদিন ধরেই ভিন্ন পথে হাঁটেন জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ এবং দলটির চেয়ারম্যান জিএম কাদের। এর আগে সর্বশেষ কাউন্সিল করা নিয়ে উত্তাপ ছড়ায় দলটির রাজনীতিতে। গত বছরের শেষ দিকে থাইল্যান্ডে চিকিৎসা শেষে দেশে ফেরেন রওশন। এরপর তিনি কাউন্সিলের তারিখ ঘোষণা করেন। তার অনুসারীরা তাকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানও ঘোষণা করে। পরে সবই স্থগিত হয়। অন্যদিকে জিএম কাদেরের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন বন্ধ করতে আদালতে যান ‘রওশনপন্থি’ নেতারা। এবার ঢাকা-১৭ আসনের উপ-নির্বাচনে প্রার্থী নিয়ে ফের উত্তপ্ত হয়ে পড়েছে দলটির অভ্যন্তরীণ রাজনীতি।

এই আসনে নির্বাচন করতে চেয়ারম্যান জিএম কাদের মনোনয়ন দিয়েছেন সিকদার আনিছুর রহমানকে। অন্যদিকে রওশন এরশাদের মনোনয়ন পেয়েছেন কাজী মামুনূর রশীদ। দুজনের কাছ থেকে একই দলের মনোনয়ন পাওয়া দুজনই নির্বাচন কমিশনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। কেউ কাউকে ছাড় দিতেও নারাজ।

এই আসনে ভোটে অংশ নিতে বুধবার জাতীয় পার্টির নামে মনোনয়নপত্র জমা দেন কাজী মামুনূর রশীদ। আর বৃহস্পতিবার মনোনয়নপত্র জমা দেন অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিকদার আনিছুর রহমান।

আনিছুর রহমান বলেন, দলীয় প্রার্থী হতে হলে বিষয়ে দলীয় কাগজপত্র জমা দিতে হয়। জাপা চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে যথাযথ প্রক্রিয়া মেনে জমা দিয়েছি, আরেকজন যথাযথ প্রক্রিয়ায় দলীয় মনোনয়ন পাননি।

আরও পড়ুন: ঐক্যের দেখা নেই, ফের ভাঙছে জাতীয় পার্টি?

জানতে চাইলে রওশনপন্থি নেতা ইকবাল হোসেন রাজু জাগো নিউজকে বলেন, হাইকোর্টের রায় আমাদের পক্ষে আছে। লাঙ্গল রওশন এরশাদের। জিএম কাদেরের সঙ্গে আমাদের কোনো কথা হয়নি। জিএম কাদের যাকে নমিনেশন দিয়েছেন, তিনি কোনোকালেই জাতীয় পার্টির কর্মী ছিলেন না।

শেষ পর্যন্ত মামুনূর রশীদ পিছু হটবেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা সরবো না। প্রয়োজনে এটি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে যাবো। আমরা যদি লাঙ্গল না পাই তাহলে উচ্চ আদালতে যাব।

তবে এ বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত নেয়নি ইসি। দুই প্রার্থীর মনোনয়নপত্রই নিয়েছে নির্বাচন আয়োজনের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাটি। লাঙ্গল প্রতীক কাকে দেওয়া হবে, এমন প্রশ্নে রিটার্নিং অফিসার মুনীর হোসাইন খান জাগো নিউজকে বলেন, মনোনয়নপত্র যাচাই বাছাই করা হবে। রোববার আইন বিধি পর্যালোচনা করে যাচাই-বাচাইয়ের দিন জানানো যাবে।

আরও পড়ুন: প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে রওশন এরশাদ-জি এম কাদেরের সাক্ষাৎ

এ বিষয়ে দলটির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেছেন, আনিছুর জাপার প্রার্থী, এই বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। দলের চেয়ারম্যানকে পাশ কাটিয়ে রওশনের মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষমতা নেই।

জিএম কাদেরের সভাপতিত্বে মনোনয়ন বোর্ডর সভায় মেজর (অব.) সিকদার আনিছুর রহমানকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে চুন্নু বলেন, এখানে অন্য কারও মনোনয়ন দেওয়ার অধিকার নাই। আর কে দিল না দিল, সেটাতে আমাদের কিছু যায় আসে না।

এদিকে মামুনূর রশীদকে লাঙ্গল প্রতীক দেওয়ার অনুরোধ করে ইসিতে চিঠি দিয়েছের রওশন এরশাদ। চিঠিতে তিনি বলেছেন, জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক, সংসদীয় দলের নেতা এবং বিরোধী দলীয় নেতা হিসেবে ঢাকা-১৭ আসনে জাপার দলীয় প্রার্থীর অনুকূলে দলীয় প্রতীকে লাঙ্গল ব্যবহারের একমাত্র অধিকারী। ২০১৯ সালের ২৮ ডিসেম্বরে কাউন্সিলে গৃহীত ও তৎকালীন মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গা কর্তৃক গঠনতন্ত্রের ব্যাখ্যা ২০ এর উপধারা ১ অনুযায়ী আমি দলের পতাকা বহন ও সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী।

আরও পড়ুন: জিএম কাদের আউট, রওশন ইন

চিঠিতে তিনি আরও বলেন, সুপ্রিম কোর্টের মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগ কর্তৃক রিট পিটিশনে প্রচারিত রায় ও আদেশ দ্বারা বিষয়টি প্রতিষ্ঠিত। এমন অবস্থায় মামুনূর রশীদকে জাতীয় পার্টির দলীয় প্রতীক লাঙ্গল বরাদ্দ প্রদান করা একান্ত আবশ্যক।

এর আগে গত ১৪ জুন ঢাকা-১৭ আসনে জাতীয় পার্টির মনোনয়ন দেওয়া হয় মেজর (অব.) সিকদার আনিছুর রহমানকে।
সেদিন সন্ধ্যায় জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের বনানী কার্যালয় মিলনায়তনে মনোনয়ন বোর্ডের সভায় প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা হয়। পরের দিন বুধবার জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের ঢাকা-১৭ ও চট্টগ্রাম-১০ আসনে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন।

এরও আগে ৫ জুন রওশন এরশাদ তার মুখপাত্র কাজী মামুনূূর রশীদকে প্রার্থী ঘোষণা করেন। এর দুদিন পর মামুনূর রশীদের পক্ষে জাপার সাবেক ছাত্রনেতা খন্দকার মনিরুজ্জামান টিটু রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন। কাজী মামুনূর রশীদও উপ-নির্বাচন সামনে রেখে গণসংযোগ ও নির্বাচনী কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য তোড়জোড় শুরু করে দিয়েছেন।

আরও পড়ুন: আলাদাভাবে এরশাদের জন্মদিন পালন করবেন রওশন-জিএম কাদের

গত ১৫ মে ৭৫ বছর বয়সে চিত্রনায়ক ও সংসদ সদস্য ফারুকের মৃত্যু হলে ঢাকা-১৭ আসন শূন্য ঘোষণা করে সংসদ সচিবালয়।

এসএম/এমএইচআর/এএসএম