ভিডিও EN
  1. Home/
  2. রাজনীতি

ঢাকা-১৭ আসনে উপ-নির্বাচন

দল ও নেত্রী চাইলে অবশ্যই নির্বাচন করবো

সায়েম সাবু | প্রকাশিত: ০৯:৫১ পিএম, ৩০ মে ২০২৩

অধ্যাপক মোহাম্মদ এ আরাফাত। চেয়ারম্যান, সুচিন্তা ফাউন্ডেশন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য তিনি। অধ্যাপনা করছেন বেসরকারি কানাডিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ে।

যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসানীতি, নির্বাচন ছাড়াই বর্তমান সংসদের মেয়াদ বাড়াতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের প্রস্তাব ও আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে জাগো নিউজের মুখোমুখি হন তিনি। আলোচনায় উঠে আসে ঢাকা-১৭ আসনের উপ-নির্বাচন প্রসঙ্গও।

দুই পর্বের সাক্ষাৎকারের আজ শেষ পর্ব। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সায়েম সাবু।

জাগো নিউজ: আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে নানা আলোচনা হচ্ছে। কী ঘটবে সামনের নির্বাচনে?

মোহাম্মদ এ আরাফাত: সামনের নির্বাচনে বিএনপি কী করবে, তা আমি বলতে পারবো না। তবে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলতে পারি- সামনের নির্বাচন ১১০ ভাগ সুষ্ঠু হবে।

জাগো নিউজ: আগের নির্বাচনও সুষ্ঠু করার কথা বলেছিলেন। এবার কী পরিকল্পনা?

মোহাম্মদ এ আরাফাত: আমাদের একটাই পরিকল্পনা, সামনের নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে। এর বাইরে কোনো পরিকল্পনা নেই। বিএনপি না আসলেও অন্য রাজনৈতিক দল আছে। তাদের নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন হবে।

জাগো নিউজ: বিএনপির জায়গায় অন্য কোনো দলকে সুযোগ দেওয়ার পরিকল্পনা আছে কি না?

মোহাম্মদ এ আরাফাত: আওয়ামী লীগ নিজেদের প্রার্থী নিয়ে পরিকল্পনা করছে। অন্য দলের দায়িত্ব তো আওয়ামী লীগ নিতে পারে না।

জাগো নিউজ: জাতীয় পার্টিকে (জাপা) তো কবজায় নিয়ে বিরোধী দল বানানোর চেষ্টা করলো আওয়ামী লীগ?

মোহাম্মদ এ আরাফাত: জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগের জোটের অংশ। প্রধান বিরোধী দল বিএনপি নির্বাচনে না আসায় তৃতীয় বৃহৎ দল স্বাভাবিকভাবেই বিরোধী দলে চলে যায়। সংবিধান অনুযায়ীই হয়েছে। এখানে তো আর কিছু করার নেই। জাতীয় পার্টি আমাদের জোটের অংশ, এটি অস্বীকার করছি না।

আরও পড়ুন>> ‘বিএনপি তাণ্ডব চালালে ২০১৪ সালের মতোই নির্বাচন হবে’

জাগো নিউজ: আওয়ামী লীগ আর জাতীয় পার্টির মধ্যে এমন বোঝাপড়ায় বাংলাদেশের গণতন্ত্র সার্বিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলো কি না?

মোহাম্মদ এ আরাফাত: না। এতে কোনো ক্ষতি হওয়ার প্রশ্নে নেই। বরং গণতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিএনপির হাতে। ভোটের সংস্কৃতি তারাই বারবার নষ্ট করেছে।

জাগো নিউজ: নির্বাচন যথাসময়েই এবং বিএনপি না এলেও হবে?

মোহাম্মদ এ আরাফাত: আমরা চাই, নির্বাচনে বিএনপি আসুক। বিএনপি পরিপূর্ণ শক্তি নিয়ে আসুক।

জাগো নিউজ: বিএনপি নির্দলীয়-নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকার চাইছে?

মোহাম্মদ এ আরাফাত: সংবিধানের বাইরে আর কোনো আলোচনার সুযোগ নেই। সংবিধানের আলোকেই সব হবে। বিএনপি না এলেও অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন হবে।

জাগো নিউজ: নির্বাচন নিয়ে আগে তো বহু আলোচনা হয়েছে। এখন আলোচনার সুযোগ নেই কেন?

মোহাম্মদ এ আরাফাত: তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে আলোচনার কোনো সুযোগ নেই। অন্য বিষয় নিয়ে আলোচনা হতেই পারে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমরা চাই না। এটি কোনো সমাধানও নয়।

জাগো নিউজ: সংবিধান থেকে বাতিল করেছেন। প্রয়োজনে আবারও যুক্ত করা যায় কি না?

মোহাম্মদ এ আরাফাত: আমরা যুক্ত করবো না। এটি আমাদের অবস্থান। তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা অসাংবিধানিক বলে আদালত রায় দিয়েছেন। যে ব্যবস্থা সমাধান দেয় না, সেটা আমরা কেন যুক্ত করবো?

আরও পড়ুন>>‘এই সরকারের অধীনে আর কোনো নির্বাচনে যাবো না, এটি চূড়ান্ত’

জাগো নিউজ: আপনারা (আওয়ামী লীগ) তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারেই সমাধান খুঁজে পেয়েছিলেন...।

মোহাম্মদ এ আরাফাত: বিএনপি তখন অনিবার্য করে তুলেছিল। ১৯৯৪ সালে যদি বিএনপি মাগুরার উপ-নির্বাচনে জালিয়াতি না করতো, তাহলে তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দরকার হতো না। আমরা এটি (তত্ত্বাবধায়ক সরকার) দিতে বাধ্য করেছিলাম। বিএনপি ২০০১ সালে এর সুবিধা নিয়েছে। ২০০৬ সালে এসে বিএনপি এ ব্যবস্থা ফের নষ্ট করেছে। এসব নিয়ে তো আলোচনার দরকার হতো না। যদি বিএনপি ১৯৯৪ সালে মাগুরার নির্বাচনে আদি পাপ না করতো।

এ কারণেই আমরা সংবিধানের আলোকে কীভাবে দীর্ঘমেয়াদে সমাধান মেলে, সে ব্যবস্থায় জোরদার করার চেষ্টা করছি। বর্তমান নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু ভোটের নজির রাখতে শুরু করেছে। আমরা সাধুবাদও জানিয়ে আসছি।

জাগো নিউজ: বিএনপি বলছে, আপনারা সিটি নির্বাচনের মধ্যদিয়ে আইওয়াশ করছেন। এটাকে কীভাবে দেখেন..?

মোহাম্মদ এ আরাফাত: বিএনপি তো তাই মনে করবে। একজন চোর ভালো জিনিসকেও চোরের মতো করেই দেখে। দেশের সব সংকটের মূলে হচ্ছে মাগুরার নির্বাচন। আদমের গন্ধক ফল খাওয়ার মতো আর কি। আদি পাপের সঙ্গে অন্য পাপের তুলনা হয় না।

আরও পড়ুন>> ‘সাধারণ মানুষের জন্য সাধারণ মানুষকেই জাগতে হবে’

জাগো নিউজ: বিএনপি এ পাপের ফলাফল ভোগ করছে নিশ্চয়?

মোহাম্মদ এ আরাফাত: গোটা জাতি এ পাপের ফল ভোগ করছে।

জাগো নিউজ: কিন্তু অভিযোগ তো আছে মাগুরার নির্বাচনের মতো আওয়ামী লীগ শত শত নির্বাচন করছে। আওয়ামী লীগের পাপের ফল কী হবে সামনে?

মোহাম্মদ এ আরাফাত: আগেই তো বললাম, আদি পাপের সঙ্গে আর কোনো পাপের তুলনা হয় না।

জাগো নিউজ: তাহলে বলতে চান আওয়ামী লীগরও কিছুটা পাপ আছে?

মোহাম্মদ এ আরাফাত: আমি তা বলতে চাই না। অন্যরা বলছেন, তার জবাব দিচ্ছি।

জাগো নিউজ: নির্বাচনব্যবস্থার বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আওয়ামী লীগের কোনো দায় নেই?

মোহাম্মদ এ আরাফাত: নির্বাচনব্যবস্থার যতটুকু উন্নয়ন, তার সবই আওয়ামী লীগের হাত ধরে। নির্বাচন কমিশন আইন আওয়ামী লীগ সরকারই করেছে। নির্বাচনে বাধা দিলে ৭ বছরের কারাদণ্ড দেওয়ার বিধানও করা হয়েছে। এ বিষয়গুলো তো আমলে নিতে হবে। শুধু অভিযোগ করলেই তো হবে না। দীর্ঘমেয়াদে ভাবতে হবে। পাঁচ বছরের জন্য ভাবলে সংকট থেকেই যাবে।

আরও পড়ুন>> কূটনীতিকরা বিএনপির পরিকল্পনা জানতে চায়: শামা ওবায়েদ

জাগো নিউজ: আওয়ামী লীগের নানান অবদানের কথা বলছেন। যদি আওয়ামী লীগের পতন হয়, তখন রাষ্ট্রকাঠামোয় কী ঘটবে?

মোহাম্মদ এ আরাফাত: এ কারণেই আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রকে শক্ত কাঠামোর ওপর দাঁড় করানোর চেষ্টা করছে। সমস্যা হচ্ছে আওয়ামী লীগ তার বিরোধীদের কাছ থেকে কোনো সহযোগিতা পায়নি। বরং প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। আওয়ামী লীগ আলোচনার জন্য প্রস্তাব দেয়। বিরোধীরা হরতাল দেয়।

জাগো নিউজ: যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসানীতি রাজনীতির মাঠে ঝড় তুলেছে। যুক্তরাষ্ট্রের এ ভিসানীতি বাংলাদেশের মানুষের জন্য কী বার্তা দিলো?

মোহাম্মদ এ আরাফাত: যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি নতুন এবং সম্ভবত আরও দু-একটি দেশকে দিয়েছে। সামনে আরও কিছু দেশের জন্য প্রযোজ্য হতে পারে। তবে বাংলাদেশে নির্বাচন নিয়ে জটিলতা একটু আছে, এটি অস্বীকার করছি না। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচন ভালো নির্বাচন হয়নি, তা আমি সবসময় বলে আসছি।

কিন্তু নির্বাচন খারাপ হলো কেন? এটি তো বুঝতে হবে। এর দায় বিএনপির। বিএনপির কারণে যুক্তরাষ্ট্র যে নীতি গ্রহণ করছে, তা আমাদের জন্য সম্মানকজনক না। মনে রাখতে হবে পৃথিবীর কোনো দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা শতভাগ ত্রুটিমুক্ত না। আমাদেরটা নয়, তা আগেই বলেছি। আমরা পরিবর্তনের অঙ্গীকারে এগিয়ে যাচ্ছি। কোনো ভিসানীতির কারণে পরিবর্তন নয়। আমাদেরটা আমাদেরকেই করতে হবে।

আরও পড়ুন>> ‘চোখ-কান খোলা রাখলেই গরিবের কান্না দেখতে পাওয়া যায়’

জাগো নিউজ: যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি আওয়ামী লীগে বিশেষ চাপ সৃষ্টি করবে কি না?

মোহাম্মদ এ আরাফাত: প্রথমত, এটি কোনো নিষেধাজ্ঞা নয়। এটি একটি নীতি। আওয়ামী লীগের জন্য এখানে কোনো চাপ নেই।

জাগো নিউজ: যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার আগ্রহ থাকে অনেকের। বিশেষে করে তরুণ শিক্ষার্থীদের অনেকের সাধনার ব্যাপার, যারা অনেকেই সরাসরি রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকেন। তারা চাপ মনে করতেই পারেন কি না?

মোহাম্মদ এ আরাফাত: আমি সবার দায়িত্ব নিয়ে কথা বলতে পারবো না। আমি আওয়ামী লীগের কথা বলতে পারবো। একটি দল হিসেবে আওয়ামী লীগ চাপ মনে করছে না। শেখ হাসিনার নীতিকে সমর্থন করে যুক্তরাষ্ট্রের এ ভিসানীতি। যারা নির্বাচনে বাধা দেবেন, তারা চিন্তা করুক। আমাদের চিন্তার কোনো কারণ নেই।

বিএনপি এখানে চিন্তা করুক। এমনকি আওয়ামী লীগের কেউ যদি অতিউৎসাহী হয়ে সমস্যা সৃষ্টি করেন, তিনি চিন্তা করুন। আমরা কোনো চিন্তা করছি না। আমার দলের কারও সৃষ্টি করা সংকটের দায় তো আমি নেবো না। আমি রাজনীতি করছি মানুষের জন্য, উন্নয়নের জন্য। তার দায় আমি নেব কেন?

আরও পড়ুন>> দু-একটি দল ভোটে অংশ না নিলে গণতন্ত্র বিলীন হয়ে যায় না

জাগো নিউজ: যুক্তরাষ্ট্রের এমন নীতি (ভিসানীতি) গ্রহণের ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের দুর্বল কূটনীতি দায়ী কি না?

মোহাম্মদ এ আরাফাত: আমি তা মনে করি না। এখানে কূটনৈতিক দুর্বলতা দেখি না।

জাগো নিউজ: সরকারকে চাপে রাখতে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো অ্যাজেন্ডা আছে কি না?

মোহাম্মদ এ আরাফাত: এ বিষয়ে আমি এখন বলতে পারবো না।

জাগো নিউজ: আপনার নিজের প্রসঙ্গে আসতে চাই। আপনি দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। ঢাকা-১৭ আসন তথা গুলশানে বসবাস করছেন। এ আসনে উপ-নির্বাচন হতে যাচ্ছে। দল ও আপনার নিজের ভাবনা জানতে চাই।

মোহাম্মদ এ আরাফাত: দল আমাকে নিয়ে ভাবছে কি না, আমি জানি না। সত্যি বলছি, আমি নিজেও এ নিয়ে ভাবার সুযোগ পাইনি। বিশেষ করে গত কয়েকদিন ধরে কূটনৈতিক বিষয়গুলো নিয়ে ভীষণ ব্যস্ত ছিলাম। 

জাগো নিউজ: দল যদি আপনাকে নিয়ে ভাবে?

মোহাম্মদ এ আরাফাত: দল ভাববে কি না, আমি জানি না। অতীতে অনেক অফার (প্রস্তাব) পেয়েছি নির্বাচন করার জন্য। আমি হাতজোড় করে ক্ষমা চেয়ে নিজেকে সরিয়ে রেখেছি।

সরাসরি নির্বাচন করার চেয়ে আমি বাইরে থেকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করে দলের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। এটি যেন বাধাগ্রস্ত না হয় সেজন্যই আমি নির্বাচনে অংশ নিইনি। আমি অতীতের কথা বলছি। তবে দল ও সভাপতি (শেখ হাসিনা) চাইলে অবশ্যই নির্বাচন করবো।

আমি মনে করি, আওয়ামী লীগ এত বড় একটি দল যেখানে আমার চেয়ে যোগ্য ও ত্যাগী অনেক নেতা রয়েছেন। তাদের সঙ্গে তুলনা করে আমি আসলে ভাবতে চাই না। তাদের ত্যাগ অনেক বেশি।

আরও পড়ুন>> ‘বাংলাদেশ এখন মধুর চাক, অনবরত মৌমাছি ভিড়ছে’

জাগো নিউজ: সংসদের বাইরে থেকে অবদান রাখছেন। কিন্তু সংসদে গিয়ে দলের প্রতি অবদান আরও বেশি রাখার সুযোগ…।

মোহাম্মদ এ আরাফাত: আমি আসলে অতীতে এভাবে চিন্তা করিনি। দেখা যাক কি হয়...।

জাগো নিউজ: গুলশানবাসী এর আগে তিনজন সংসদ সদস্য পেয়েছেন বটে, কিন্তু তাদের সেই অর্থে কাছে পাননি বলে ক্ষোভ রয়েছে। এ ব্যাপারে কী বলবেন?

মোহাম্মদ এ আরাফাত: এ নিয়ে আসলে আমার কোনো ধারণা নেই। আপনার কাছে থেকে জানতে পারলাম। গুলশানবাসীর ভাবনা বা তাদের মনের মধ্যে কী আছে, তা তো আমি এখন বলতে পারবো না। খুব অল্প সময়েই দল সিদ্ধান্ত নেবে, দেখা যাক।

এএসএস/এএএইচ/এএসএম