সরকারের ওপর বিদেশিদের কোনো চাপ নেই: হানিফ
সরকারের ওপর বিদেশিদের কোনো চাপ নেই বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ। তিনি বলেন, আমরা পরিষ্কারভাবে বলে দিতে চাই, আমাদের ওপর কিসের চাপ থাকবে? বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বলেছেন, আগামী সংসদ নির্বাচন হবে সব দলের অংশগ্রহণে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ।
শনিবার (১৩ মে) বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে যুবলীগ আয়োজিত শান্তি সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
বিএনপির উদ্দেশে হানিফ বলেন, আপনারা গণতান্ত্রিক পথ অনুসরণ করে শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করুন। আমাদের কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু নৈরাজ্য সৃষ্টির চেষ্টা করলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।
তিনি বলেন, জনগণের ওপর আপনাদের ভরসা নেই। আপনাদের ভরসা এখন বিদেশি প্রভুদের ওপর। তাই ষড়যন্ত্রের রাস্তা খুঁজে বেড়াচ্ছেন। ভাবছেন বিদেশিদের কাছে ধরনা দিলেই বিদেশি প্রভু সরকারের পতন ঘটিয়ে দেবে।
এ আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, আমাদের বিদেশি বন্ধুরা বলেছেন, তারাও অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চান। আমাদের ও তাদের চাওয়া তো এক। তাহলে সরকারের ওপর কিসের চাপ থাকবে? আমরা তো বলিনি কাউকে বাদ রেখে নির্বাচন করবো। নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু হবে না- এ কথা তো কেউ বলেনি। তাহলে কিসের চাপ থাকবে? এ মিথ্যাচারের ধোয়া তুলে জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
সংসদ সদস্য হানিফ বলেন, দেশে কোনো ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করলে দমন করার জন্য সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রস্তুত আছে। আর রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলার চেষ্টা করলে তা মোকাবিলায় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ সহযোগী সংগঠন প্রস্তত আছে।
হানিফ বলেন, ২০২৩ সালের শেষদিকে অথবা ২০২৪ সালের প্রথম সপ্তাহে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে আবার সরকার গঠন হবে। কিন্তু এ নির্বাচন বানচাল করার জন্য এরই মধ্যে একটি মহল ষড়যন্ত্র শুরু করে উঠেপড়ে লেগেছে।
আওয়ামী লীগের এ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, নির্বাচন বানচাল করার উদ্দেশ্য হচ্ছে উন্নয়নের ধারাবাহিকতাকে স্তব্ধ করা, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে ধ্বংস করা। দেশের উন্নয়ন দেখলে তাদের গায়ে জ্বালা ধরে। তাই তারা ষড়যন্ত্র করে। এরা কারা? তারা বিএনপি-জামায়াত অপশক্তি। তবে এর পেছনেও তাদের আরও পরিচয় আছে।
তিনি বলেন, জামায়াত পাকিস্তানের তৈরি। তাদের প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা মওদুদী পাকিস্তানে দাঙ্গা, ফ্যাসাদ করার মূল হোতা। বিএনপিও পাকিস্তান রাষ্ট্রের তৈরি। একাত্তরে যাদের পরাজিত করে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে, সেই পাকিস্তানের তৈরি বিএনপি।
‘২০১২ সালে একটা খবর এসেছিল, পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান মেজর জেনারেল আসাদ দুররানি আদালতে সাক্ষী দেওয়ার সময় বলেছিলেন বিএনপি নামক দলকে নানা সময়ে আর্থিক সহায়তা করেছে পাকিস্তান। যাদের আমরা পরাজিত করে স্বাধীনতা পেয়েছি সেই পাকিস্তান কোন স্বার্থে বিএনপিকে অর্থ দিয়ে সহযোগিতা করে?’ যোগ করেন তিনি।
হানিফ বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় সন্ত্রাস এবং জঙ্গিবাদের সৃষ্টি করেছে আইএসআই। বাংলাদেশেও হরকাতুল জিহাদসহ বিএনপি নামক দল করেছে তারা। যে বিএনপি পাকিস্তানের তৈরি সেই দল রাষ্ট্রের জন্য কল্যাণকর, মানুষের জন্য ভালো কাজ করতে পারে না।
আওয়ামী লীগকে আন্দোলনের ভয় দেখিয়ে লাভ নেই জানিয়ে তিনি বলেন, আজকে তারা নতুন করে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। আন্দোলন, আন্দোলন খেলা খেলছে। এদেশের মানুষ বহু আন্দোলন দেখেছে। ১৯৪৯ সালের পর থেকে আন্দোলন করে দেশ স্বাধীন করেছে আওয়ামী লীগ। স্বৈরাচার জিয়া, এরশাদ সরকারকে প্রতিহত করে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে আওয়ামী লীগ।
বিএনপি নেতাদের সমালোচনা করে হানিফ বলেন, সরকার নাকি তাদের (বিএনপি) নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জনপ্রিয়তাকে ভয় পায়। এজন্য তাকে আটকে রেখেছে। ২০০৭ সালে বেগম খালেদা জিয়ার নামে এতিমের টাকা আত্মসাৎ, নাইকো-গ্যাটকো মামলা হয়েছিল। তখন আমি বলেছিলাম, যদি অপরাধী হিসেবে বেগম খালেদা জিয়া আদালত কর্তৃক দোষী সাব্যস্ত হন তাহলে আইনের আওতায় এনে গ্রেফতার করা হবে। তখন বিএনপি নেতারা আস্ফালন করে বলেছিলেন খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার করা হলে এ বাংলাদেশ রক্তগঙ্গা হবে, সরকার থাকবে না। আজ খালেদা জিয়া কারাগারে আছেন। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার অনুকম্পায় বাসায় আছেন।
তিনি বলেন, দেশে কোনো আন্দোলনও হয়নি, সরকারও উল্টায়নি। এর মধ্যদিয়ে প্রমাণ হয়েছে দেশের মানুষ দুর্নীতিবাজ বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে নেই। দুর্নীতিবাজ খালেদা জিয়ার সঙ্গেও নেই।
হানিফ বলেন, পাকিস্তানের ইমরান খানকে যখন গ্রেফতার করা হয়, লাখো মানুষ রাজপথে প্রতিবাদ জানিয়ে সরকারকে চাপ প্রয়োগ করেছেন। কই এত জনপ্রিয় নেত্রী ছিলেন বেগম খালেদা জিয়া, কারাগারে নেওয়ার পর লাখ তো দূরের কথা হাজার মানুষও তো রাজপথে নামেনি। এরপরও বিএনপি নেতারা কোন মুখে বলেন খালেদা জিয়ার জনপ্রিয়তায় ভীত হয়ে সরকার তাকে কারাগারে রেখেছে।
বিএনপিকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের আহ্বান জানিয়ে হানিফ বলেন, আন্দোলনের হুমকি দিয়ে আন্দোলন, আন্দোলন খেলে লাভ নেই। নির্বাচনে অংশ নিন। নির্বাচনে অংশ নিয়ে প্রমাণ করুন আপনাদের জনপ্রিয়তা কতখানি। তখন প্রমাণ হবে জনগণ উন্নয়ন-অগ্রগতি, শান্তি চায় নাকি আপনাদের দুর্নীতিবাজ নেতা খালেদা জিয়া, সন্ত্রাসী তারেক রহমানকে চায়।
তিনি বলেন, জনগণ সন্ত্রাসী, দুর্নীতিবাজদের ক্ষমতায় দেখতে চায় না বলে আপনাদের আন্দোলনে জনগণের সমর্থন মেলেনি। জনগণ আপনাদের পাশে নেই। আপনারা জানেন জনগণ আপনাদের চায় না। নির্বাচনে অংশ নিয়ে জয়লাভ করার সম্ভাবনা নেই। আর এজন্য নির্বাচন বানচাল করে সরকার উৎখাত করতে চান।
এসময় যুবলীগের প্রশংসা করে হানিফ বলেন, বিএনপি-জামায়াতের দুঃশাসন প্রতিরোধে রাজপথে শক্ত ভূমিকা রেখেছিল যুবলীগ। এ যুবলীগ খালেদা জিয়া, তারেকের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল। বিএনপি-জামায়াতের নৈরাজ্যের সময় শেখ হাসিনার পাশে থেকে ভ্যানগার্ড হিসেবে দায়িত্ব পালন করে রাষ্ট্রক্ষমতায় এনেছিল। যুবলীগ সবসময় অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেছে। স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি যাতে আর মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে সেজন্য যুবলীগকে অতীতের মতো প্রস্তুত থাকতে হবে।
যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য রফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও প্রচার সম্পাদক জয়দেব নন্দীর সঞ্চালনায় সমাবেশে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মো. মাইনুল হোসেন খান নিখিলসহ অন্যরা বক্তব্য রাখেন।
এসইউজে/ইএ/জিকেএস