গণতন্ত্র মঞ্চ ছেড়েছি শক্তিশালী আন্দোলনের লক্ষ্যে
নুরুল হক নুর। ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে আলোচনায় আসেন। ২০১৯ সালের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) নির্বাচনে সহ-সভাপতি (ভিপি) নির্বাচিত হন। এরপর প্রতিষ্ঠা করেন রাজনৈতিক দল ‘গণঅধিকার পরিষদ’। ছাত্র, যুব ও প্রবাসী অধিকার পরিষদের সমন্বয়ক ও বাংলাদেশ গণ অধিকার পরিষদের সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
সম্প্রতি গণতন্ত্র মঞ্চ থেকে বেরিয়ে যাওয়া ও রাজনীতির অন্য প্রসঙ্গ নিয়ে মুখোমুখি হন জাগো নিউজের। দুই পর্বের সাক্ষাৎকারের আজ থাকছে প্রথম পর্ব। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সায়েম সাবু।
জাগো নিউজ: গণতন্ত্র মঞ্চ থেকে বেরিয়ে এলেন। একেবারে হঠাৎ করেই। ব্যাখ্যা কী?
নুরুল হক নুর: গণতন্ত্র মঞ্চ গঠন করার আগেও আমরা একে অপরের কর্মসূচিতে গিয়েছি। তাদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রয়েছে। ভবিষ্যতেও থাকবে।
আরও পড়ুন>> ‘সাধারণ মানুষের জন্য সাধারণ মানুষকেই জাগতে হবে’
গত আগস্টে আমরা মঞ্চের সঙ্গে যুক্ত হই। এখন দেশে বড় ধরনের সংকট তৈরি হয়েছে এবং নির্বাচন সামনে রেখে প্রধান বিরোধীদল নির্বাচনকালীন সরকারের দাবিতে রাজপথে আন্দোলন করছে। আমাদের কাছে মনে হয়েছে এই সাতটি দলের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে সবার সঙ্গে আলোচনা করে আন্দোলনে ভূমিকা রাখতে পারি, তাহলে সেটা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ হবে। সংগঠনের পক্ষ থেকে আন্দোলন আরও বেগবান করার জন্যই আমরা গণতন্ত্রণ মঞ্চ থেকে বেরিয়ে আসছি। আমরা যুগপৎ আন্দোলন করবো সবার সঙ্গে সমন্বয় করেই। বিএনপির নেতৃত্বে যে আন্দোলন চলছে সেখানেও আমাদের সংহতি থাকবে।
জাগো নিউজ: গণতন্ত্র মঞ্চের শীর্ষ নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, ‘আপনারা অধৈর্য হয়ে পড়েছেন। এ সিদ্ধান্ত হঠকারী এবং চলমান আন্দোলন ক্ষতিগ্রস্ত করবে।’
নুরুল হক নুর: মান্না ভাই সিনিয়র ব্যক্তিত্ব এবং রাজনৈতিক অভিজ্ঞতাসম্পন্ন মানুষ। আমি তাকে সম্মান করি। তিনি এমন মন্তব্য করেছেন কি না আমার জানা নেই। তবে আমাদের বেরিয়ে আসা যদি রাজনৈতিক আন্দোলন ক্ষতিগ্রস্ত হয় বলে কেউ মন্তব্য করেন, তাহলে বলবো তার রাজনৈতিক আন্দোলনের সঠিক ধারণা নেই।
আরও পড়ুন>> কূটনীতিকরা বিএনপির পরিকল্পনা জানতে চায়: শামা ওবায়েদ
বর্তমানে বিরোধী শক্তি ৫৪টি দল মিলে আন্দোলন করছে এবং বিএনপি তার নেতৃত্ব দিচ্ছে। গণতন্ত্র মঞ্চ নেতৃত্বে থাকলে এমন অভিযোগ প্রাসঙ্গিক হতো। আমরা পরিষ্কার করে বলেছি, গণতন্ত্র মঞ্চের সঙ্গে আমরা জোটবদ্ধ আন্দোলনে না থাকলেও যুগপৎ আন্দোলনে আছি।
জাগো নিউজ: যুগপৎ আন্দোলন তো আগে থেকেই করে আসছিলেন। তাহলে গণতন্ত্র মঞ্চে যুক্ত হওয়ার কারণ কী ছিল?
নুরুল হক নুর: জোট করে গত আট মাসে আমাদের কাছে মনে হয়েছে, এককভাবে আন্দোলনে ভূমিকা রাখা দরকার। আমরা নবীন দল গঠন করেছি। তিন দশক পর ছাত্র আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আমাদের এ সংগঠনের জন্ম। তরুণরা আমাদের কাছে প্রত্যাশা রাখেন, আমরা যেন বিশেষ কাঠামোর মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে সর্বজনীন রূপ নিতে পারি।
জাগো নিউজ: গণতন্ত্র মঞ্চ কি তেমনই এক কাঠামো যেখান থেকে বেরিয়ে আসার দরকার মনে করলেন?
নুরুল হক নুর: সবারই কোনো না কোনো আদর্শ থাকে। আমরা মনে করেছি, আমাদের মতো একটি নবীন দল সাতটি দলের একটি মঞ্চে থাকা সঠিক সিদ্ধান্ত হবে না। গণতন্ত্র মঞ্চ থেকে বেরিয়ে আসা আমাদের দলের সিদ্ধান্ত।
জাগো নিউজ: সাধারণ মানুষ আপনার এ সিদ্ধান্ত কীভাবে মূল্যায়ন করবে?
নুরুল হক নুর: সাধারণ মানুষ কীভাবে মূল্যায়ন করবে, তার জন্য আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। তবে আমার কাছে মনে হয়েছে, এটি আমাদের দলের জন্য ভালো সিদ্ধান্ত। আমরা নিজেরা নিজেদের কর্মসূচিতে যেভাবে দলের নেতাকর্মীদের পাশে পাই, জোটের কর্মসূচিতে এমনটি পাইনি। তরুণরা নানা কারণেই আসতে চায়নি। এটি একটি কারণ বলে মনে করি।
আরও পড়ুন>> রাজনীতি ছাত্রলীগকর্মীদের কাছে লাভ-লোকসানের বিষয় নয়
জোটবদ্ধ আন্দোলনে অনেকটা দায়সারা ভাব থাকে। একে অপরকে দায় দিয়ে নিজের ভূমিকাটা সঠিকভাবে রাখতে চায় না। আমরা এই জায়গাটা থেক বেরিয়ে আসতে চাইছি। অন্যদের থেকে আমাদের আরও শক্তিশালী অবস্থান নিয়ে আন্দোলন করতে হবে এটি এখন নেতাকর্মীদের দাবি। দল আরও গতিশীল হবে বলে মনে করি। গণতন্ত্র মঞ্চ ছেড়েছি শক্তিশালী আন্দোলনের লক্ষ্যে।
জাগো নিউজ: সামনে নির্বাচন। আন্দোলনের বছর। এমন সময়ে ভাঙা-গড়ায় সরকারগুলোকেই সাধারণত সুবিধা দেয়। আপনারাও সে সুবিধা দিচ্ছেন কি না?
নুরুল হক নুর: একেকজনের ধারণা একেকরকম হতেই পারে। আমাদের ব্যাপারে এমন ধারণা কেউ পোষণ করলে ভুল হবে বলে মনে করি। আমরা যুগপৎ আন্দোলনে আছি। গণঅধিকার পরিষদ বিএনপির সঙ্গেও আন্দোলনে যুক্ত থাকবে। এখানে সরকারকে সুবিধা দেওয়ার কিছু নেই। আজ সেখানে মির্জা ফখরুল সাহেবের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। বিএনপির অনেকের সঙ্গেই আলোচনা হচ্ছে। বিএনপির অনেকেই জানেন গণতন্ত্র মঞ্চে আমাদের অস্বস্তির কথা। বিএনপির সঙ্গেও এ আলোচনা হয়েছে।
আমরা তো সরকারের পক্ষে নেই। আমরা সরকারের বিপক্ষে আন্দোলনে আছি। সব জায়গায়ই আমরা এ সরকারের পতনের জন্য আন্দোলন করে যাচ্ছি।
জাগো নিউজ: প্রচার আছে গণঅধিকার পরিষদ সরকারের হয়ে এখন কাজ করছে এবং সেটা সামনের নির্বাচন কেন্দ্র করেই।
নুরুল হক নুর: আমাদের নিয়ে অনেকেই অনেক কিছু প্রচার করে আসছে। তার অনেক কিছু্ই আবার ভুল প্রমাণ হয়। আসলে সবার কানে কানে গিয়ে তো এসব বলা সম্ভব নয়। আমাদের কথাবার্তা পরিষ্কার। আমাদের তরুণদের এ জায়গার উত্থান একেবারেই বিপরীতমুখী অবস্থান থেকে।
রাজনীতি করতে গিয়ে নানা কৌশল নিতে নিতে এবং আমরা সেটা মানুষের মুক্তির জন্য নিচ্ছি। ডাকসুর ভিপি থাকাকালীন আমি প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণে গণভবনে গিয়েছি। আমার যদি ব্যক্তি উদ্দেশ্য থাকতো তাহলে সরকারের সঙ্গে আঁতাত করে অনেক সুবিধাই নিতে পারতাম। তা না করে আমি স্রোতের বিপরীতে হেঁটেছি। আমি যেখানেই গিয়েছি, সেখানেই হামলার শিকার হয়েছি। বারবার আহত হয়েছি। অসংখ্য মামলার আসামি করা হয়েছে। জেলে যেতে হয়েছে নেতাকর্মীদের। এখনো আমরা অনিশ্চিত জীবনযাপন করছি। যারা অভিযোগ করছেন, সরকারের সঙ্গে আঁতাত চলছে, তারা রাজনৈতিকভাবে অজ্ঞ বলে মনে করি।
জাগো নিউজ: কিন্তু আপনি যে ভাষায় ক্রমাগতভাবে সরকারের সমালোচনা করছেন, তা অনেকেই করতে পারেন না। মানুষের ধারণা সরকারের বিশেষ অনুগ্রহে আপনি এমন শক্তি দেখাতে পারছেন?
নুরুল হক নুর: সরকারের কোনো উইংস আমাদের শক্তির জায়গা নয়। তবে হ্যাঁ, আমাদের গোপন শক্তির জায়গা হচ্ছে জনগণ। তরুণ জনগণের ওপর ভর করেই আমাদের কথা বলার সাহস। তরুণরা কারও কাছে মাথানত করে না। এ কারণেই আমরা সাহস দেখাতে পারি, মানুষের কাছে যেতে পারি।
এএসএস/এএসএ/জিকেএস